‘ব্রাজিলের দুঃখ’-র কলঙ্ক মোছাতে মরিয়া সেসার
, Ei Samay
রিও দে জেনিইরো: সারা ব্রাজিল যাঁকে সারা জীবনে ঘৃণার চোখেই দেখে এসেছে, সেই প্রয়াত বারবোসা নাসিমেন্তোর 'কলঙ্ক' মোছাতে এ বার বদ্ধপরিকর জুলিউ সেসার৷ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলকিপার৷
১৯৫০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ১-২ গোলে হেরে খেতাব জিততে পারেনি ব্রাজিল৷ মারাকানা স্টেডিয়ামে সে দিন প্রায় দু'লক্ষ স্টেডিয়ামের সামনে ফ্রিয়াকার গোলে এগিয়ে গিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল৷ দ্বিতীয়ার্ধে দুটি গোল হজম করতে হয়েছিল৷ যার মধ্যে দ্বিতীয় গোল খাওয়ার ক্ষেত্রে বারবোসার দোষ ছিল৷ উরুগুয়ের উইঙ্গার আলসাদেস যখন বক্সের সামনে চলে আসেন, তখন নিজের জায়গায় ছিলেন না বারবোসা৷ ফলে গোল খেতে হয়, এবং ব্রাজিল হারে৷ লক্ষ-লক্ষ ব্রাজিলীয়র স্বপ্ন মুছে যায়৷
এই গোল খাওয়ার পর থেকেই ব্রাজিলে কার্যত একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন এই গোলকিপার৷ তাঁকে চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছিল 'ব্রাজিলের দুঃখ' হিসেবে৷ এমনকি কুসংস্কারবশত ফুটবলের কোনও অনুষ্ঠানেও তাঁকে ডাকা হত না৷ এমন অবস্থায় ভাস্কো দা গামা দলে তিনি আরও বেশ কয়েক বছর খেললেও প্রতিপদে তাঁকে অপমান সইতে হত৷ এমনকী বর্ণবিদ্বেষের শিকারও হয়েছিলেন তিনি৷ এখানেই শেষ নয়, ১৯৯৩ সালে ব্রাজিল যখন উরুগুয়েকে হারিয়ে ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল, তখন সেই টিমের গোলকিপার তাফারেলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন বারবোসা৷ কিন্ত্ত তত্কালীন ম্যানেজার তাঁকে শিবিরে ঢুকতে দেননি কুসংস্কারের জন্য৷ দেশের প্রেসিডেন্ট রিকার্দো তেক্সেইরার আপত্তিতে ব্রাজিল টিমের ম্যাচের রেডিও কমেন্ট্রি করতে দেওয়া হয়নি এই গোলকিপারকে৷ ২০০০ সালের এপ্রিলে মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আক্ষেপ করে ৭৯ বছর বয়সী এই গোলকিপার বলেছিলেন, 'ব্রাজিলের আইনে আছে, আজীবন নির্বাসন ৫০ বছরের জন্য৷ এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি৷ কিন্ত্ত আমি তো ৬০ বছর ধরে শাস্তি ভোগ করলাম৷ জানি না আমার এই কলঙ্ক কোনও দিন মুক্ত হবে কি না৷'
১৯৫০ সালের পর ২০১৪৷ ৬৪ বছর পর ব্রাজিলের মাঠে ফের বিশ্বকাপ৷ আর বারবোসার সেই কলঙ্কমোচনের দায়িত্ব এ বার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ব্রজিলের ৩৪ বছর বয়সী গোলকিপার জুলিউ সেসার৷ কয়েক এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, 'কোনও ফুটবলারই ইচ্ছা করে ম্যাচ হারায় না৷ কেন যে বারবোসাকে আমার দেশের মানুষ সারা জীবন ভিলেন করে রেখেছিল, তা অন্তত আমি বুঝতে পারিনি৷' বারবোসার কষ্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '১৯৯৮য়ে আমি তখন সবে ফ্ল্যামিঙ্গো ক্লাবে যোগ দিয়েছি, তখন একদিন মারাকানাতে আমাদের প্র্যাক্টিসের পর কেউ এসে বলেন, তোমাকে একজন খুঁজছেন৷ গিয়ে দেখি বারবোসা৷ উনি আমায় বলেছিলেন, তুমিও গোলকিপার৷ বোধহয় আমার মনের কষ্টটা বুঝতে পারবে৷ আমি ওঁর কান্নাভেজা মুখটা দেখে বলেছিলাম, যদি কোনও দিন সুযোগ পাই আপনার কলঙ্ক মোছার চেষ্টা করব৷' তখনও ঠিক হয়নি, ব্রাজিলে বিশ্বকাপ হবে৷ সেসারও দেশে মাঠের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবেন৷ সেসার বলেছেন, 'গত বছর কনফেডারেশন কাপের খেলায় উরুগুয়েকে হারিয়েই আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম৷ আমি ফোরলানের পেনাল্টি বাঁচিয়ে ছিলাম৷ টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারও হয়েছিলাম৷ তখনই মনে হয়েছিল প্রয়াত বারবোসার আশীর্বাদ আমার সঙ্গে রয়েছে৷ আর এটা নিয়েই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে নামছি৷ এ বার আমরা কাপ জিতব৷ ৬৪ বছর আগের দুঃখ-কলঙ্ক মুছবই৷'
সেসার ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলে প্রচন্ড সমালোচিত হয়েছিলেন৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল হারে নেদারল্যান্ডসের কাছে৷ স্নেইডারের করা দ্বিতীয় গোলটি খাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় সেসারকেই৷ সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে গত বছর তিনি দেশকে কনফেডারেশন্স কাপ জেতান৷ আর এ বার জেতাতে চান বিশ্বকাপ৷ দলের কোচ স্কোলারির ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে সেসার বলেছেন, 'উনি গত বছর থেকে আমাকে যে ভাবে উত্সাহ দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন, কাপ জিতে আমি তার মূল্য দিতে চাই৷'
সব মিলিয়ে এ বার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের এক কলঙ্কিত নায়কের কলঙ্ক মুছে দিতে মরিয়া আর এক গোলকিপার৷
১৯৫০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ১-২ গোলে হেরে খেতাব জিততে পারেনি ব্রাজিল৷ মারাকানা স্টেডিয়ামে সে দিন প্রায় দু'লক্ষ স্টেডিয়ামের সামনে ফ্রিয়াকার গোলে এগিয়ে গিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল৷ দ্বিতীয়ার্ধে দুটি গোল হজম করতে হয়েছিল৷ যার মধ্যে দ্বিতীয় গোল খাওয়ার ক্ষেত্রে বারবোসার দোষ ছিল৷ উরুগুয়ের উইঙ্গার আলসাদেস যখন বক্সের সামনে চলে আসেন, তখন নিজের জায়গায় ছিলেন না বারবোসা৷ ফলে গোল খেতে হয়, এবং ব্রাজিল হারে৷ লক্ষ-লক্ষ ব্রাজিলীয়র স্বপ্ন মুছে যায়৷
এই গোল খাওয়ার পর থেকেই ব্রাজিলে কার্যত একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন এই গোলকিপার৷ তাঁকে চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছিল 'ব্রাজিলের দুঃখ' হিসেবে৷ এমনকি কুসংস্কারবশত ফুটবলের কোনও অনুষ্ঠানেও তাঁকে ডাকা হত না৷ এমন অবস্থায় ভাস্কো দা গামা দলে তিনি আরও বেশ কয়েক বছর খেললেও প্রতিপদে তাঁকে অপমান সইতে হত৷ এমনকী বর্ণবিদ্বেষের শিকারও হয়েছিলেন তিনি৷ এখানেই শেষ নয়, ১৯৯৩ সালে ব্রাজিল যখন উরুগুয়েকে হারিয়ে ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল, তখন সেই টিমের গোলকিপার তাফারেলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন বারবোসা৷ কিন্ত্ত তত্কালীন ম্যানেজার তাঁকে শিবিরে ঢুকতে দেননি কুসংস্কারের জন্য৷ দেশের প্রেসিডেন্ট রিকার্দো তেক্সেইরার আপত্তিতে ব্রাজিল টিমের ম্যাচের রেডিও কমেন্ট্রি করতে দেওয়া হয়নি এই গোলকিপারকে৷ ২০০০ সালের এপ্রিলে মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আক্ষেপ করে ৭৯ বছর বয়সী এই গোলকিপার বলেছিলেন, 'ব্রাজিলের আইনে আছে, আজীবন নির্বাসন ৫০ বছরের জন্য৷ এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি৷ কিন্ত্ত আমি তো ৬০ বছর ধরে শাস্তি ভোগ করলাম৷ জানি না আমার এই কলঙ্ক কোনও দিন মুক্ত হবে কি না৷'
১৯৫০ সালের পর ২০১৪৷ ৬৪ বছর পর ব্রাজিলের মাঠে ফের বিশ্বকাপ৷ আর বারবোসার সেই কলঙ্কমোচনের দায়িত্ব এ বার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ব্রজিলের ৩৪ বছর বয়সী গোলকিপার জুলিউ সেসার৷ কয়েক এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, 'কোনও ফুটবলারই ইচ্ছা করে ম্যাচ হারায় না৷ কেন যে বারবোসাকে আমার দেশের মানুষ সারা জীবন ভিলেন করে রেখেছিল, তা অন্তত আমি বুঝতে পারিনি৷' বারবোসার কষ্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '১৯৯৮য়ে আমি তখন সবে ফ্ল্যামিঙ্গো ক্লাবে যোগ দিয়েছি, তখন একদিন মারাকানাতে আমাদের প্র্যাক্টিসের পর কেউ এসে বলেন, তোমাকে একজন খুঁজছেন৷ গিয়ে দেখি বারবোসা৷ উনি আমায় বলেছিলেন, তুমিও গোলকিপার৷ বোধহয় আমার মনের কষ্টটা বুঝতে পারবে৷ আমি ওঁর কান্নাভেজা মুখটা দেখে বলেছিলাম, যদি কোনও দিন সুযোগ পাই আপনার কলঙ্ক মোছার চেষ্টা করব৷' তখনও ঠিক হয়নি, ব্রাজিলে বিশ্বকাপ হবে৷ সেসারও দেশে মাঠের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবেন৷ সেসার বলেছেন, 'গত বছর কনফেডারেশন কাপের খেলায় উরুগুয়েকে হারিয়েই আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম৷ আমি ফোরলানের পেনাল্টি বাঁচিয়ে ছিলাম৷ টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারও হয়েছিলাম৷ তখনই মনে হয়েছিল প্রয়াত বারবোসার আশীর্বাদ আমার সঙ্গে রয়েছে৷ আর এটা নিয়েই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে নামছি৷ এ বার আমরা কাপ জিতব৷ ৬৪ বছর আগের দুঃখ-কলঙ্ক মুছবই৷'
সেসার ২০১০ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলে প্রচন্ড সমালোচিত হয়েছিলেন৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল হারে নেদারল্যান্ডসের কাছে৷ স্নেইডারের করা দ্বিতীয় গোলটি খাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় সেসারকেই৷ সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে গত বছর তিনি দেশকে কনফেডারেশন্স কাপ জেতান৷ আর এ বার জেতাতে চান বিশ্বকাপ৷ দলের কোচ স্কোলারির ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে সেসার বলেছেন, 'উনি গত বছর থেকে আমাকে যে ভাবে উত্সাহ দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন, কাপ জিতে আমি তার মূল্য দিতে চাই৷'
সব মিলিয়ে এ বার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের এক কলঙ্কিত নায়কের কলঙ্ক মুছে দিতে মরিয়া আর এক গোলকিপার৷
No comments:
Post a Comment