রামোস যেন জানতেন
, Ei Samay
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
চার বছর আগের কথা৷ জোহানেসবার্গের রাস্তায় বেরোনো দায়৷ কনকনে ঠান্ডা৷ কখনও এক ডিগ্রি, কখনও দু' ডিগ্রি৷ কান ঢাকা টুপি, গ্লাভস পরেও মনে হচ্ছে ঠান্ডা যেন হাড়ে গিয়ে ঠেকছে৷
বিশ্বকাপ ফাইনালের একদিন আগে স্পেন টিমের সাংবাদিক বৈঠক৷ জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে, পচেস্ট্রূমে৷ সেখানকার সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেন শিবির করেছিল৷ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রাগবি মাঠ৷ মাঠের পাশেই স্পেনের মিডিয়া সেন্টার৷ সেখানে কোন ফুটবলার আসবেন? নাকি কোচ বিসেন্তে দেল বোস্কে নিজে আসবেন? তা নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না সাংবাদিক মহলে৷
ঠিক ছিল সকাল দশটায় ছিল সাংবাদিক বৈঠক শুরু হবে৷ কিন্ত্ত সাড়ে দশটা, এগারোটা বেজে গেলেও কারও দেখা ছিল না৷ কিছু পরে জানা গেল, আসবেন স্পেনের দুই ফুটবলার কার্লোস মার্চেনা ও সের্খিও বুসকেতস৷ শুনে বিশ্বের অধিকাংশ সাংবাদিকের মুখ শুকনো৷ আরও বড় তারকাকে পাওয়া যাবে না? সেই দুই ফুটবলার এলেন৷ মামুলি কিছু কথাবার্তা৷ তা দিয়ে কলকাতার কাগজে এক লাইনও লেখা যায় না৷ ঘড়ির কাঁটা অনুয়ায়ী ভারতে তখন রীতিমতো সন্ধ্যা৷
কী করি? ছেলেবেলায় প্রশ্নের উত্তর না পারলে যেমন পেন্সিল চিবোতাম৷ এই সাংবাদিক বৈঠক সেরে বেরিয়েও যেন সেই দশা৷ সামনের ল্যাপটপের ফাঁকা স্ক্রিন যেন গিলে খেতে আসছে৷ হঠাত্ দেখি ক্যামেরাম্যানরা কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে বাইরে যাচ্ছেন৷ কলকাতার সাংবাদিকরাও ছুটলাম৷ বাইরে গিয়ে দেখি পনিটেল করা সের্খিও রামোস৷
যুবভারতীতে বড় ম্যাচ খেলার পর আমরা যেভাবে রহিম নবি-মেহতাবদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলি, সে ভাবেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন রামোস৷ একটু ভয় হচ্ছিল, ইংরেজি বলতে পারেন তো! কপাল ঠুকে ইংরাজিতে প্রশ্ন করলাম৷ স্পেনের জয়ের সম্ভাবনা কতটা? আমাকে অবাক করে দিয়ে রামোসের ইংরেজিতে জবাব, 'হান্ড্রেড পারসেন্ট৷' তারপর স্প্যানিশ সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরলেন৷ আমি আর পাত্তা পাচ্ছি না৷ তাও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম৷ ধৈর্য্য ধরতে না পেরে প্রশ্ন করলাম, জেতার পর আপনাদের বিজয়োত্সব কী ভাবে পালন করবেন? উত্তর এল স্প্যানিশে৷ পাশের এক স্পেনীয় সাংবাদিক কানে কানে ইংরেজিতে বললেন, 'উত্তর দিয়েছে৷ একটু অপেক্ষা করুন৷ আমিই বলে দেব৷' নিশ্চিন্ত হলাম৷
রামোস চলে যেতেই স্পেনের সেই সাংবাদিক উত্তরটা শুনিয়ে দিলেন৷ আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসছি৷ একটু দূরে আবার ভিড়৷ সেখানেও গিয়ে দেখি কার্লোস পুজোল৷ আসলে রামোসের মতো পুজোলও এসেছিলেন পাশের স্পেনীয় টিভিতে ইন্টারভিউ দিতে৷ কথাবার্তা চলছিল স্প্যানিশে৷ দাঁড়িয়ে শুধু দেখলাম ঝাঁকড়া চুলের পুজোলকে৷ দেখছিলাম বার্সেলোনা তারকার 'সিক্স প্যাক'৷
দুই ফুটবলারই চলে যাওয়ার পর, সে দেশের সাংবাদিকরা আমাদের সব কিছু তর্জমা করে দিলেন৷ সেখানে স্পেনের ফুটবলের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ফুটবলের সম্পর্ক উঠে এল৷ উঠে এল রাইনাস মিশেলসের টোটাল ফুটবল৷ যোহান ক্রুয়েফের পাসিং ফুটবলের থেকে জন্ম আজকের 'তিতিতাকা৷' রামোস ও পুজোলের কথায় উঠে এসেছিল সেই ফুটবলেরই আলোচনা৷ তাঁদের কথা শুনে বোঝা গিয়েছিল, জয়ের ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই তাঁদের৷ সেই রিপোর্ট লিখে কলকাতায় পাঠানোর পর মনে পড়ল, সকালে এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়েছি৷ বিকেল চারটে বাজে, চারদিকে শুনশান৷ এক জন বিদেশি সাংবাদিকও নেই৷ বসে শুধু আমরা কয়েক জন কলকাতার সাংবাদিক৷
বিশ্বকাপের গল্প বলতে গেলে শেষ হওয়ার নয়৷ ২০০৬ জার্মানির বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালি- ফ্রান্স ম্যাচ দেখতে বসেছি বার্লিনে৷ হঠাত্ই দেখলাম, রেফারি চতুর্থ রেফারির কাছে দৌড়ে গেলেন৷ তারপর জিদানকে লাল কার্ড দেখালেন৷ কিন্ত্ত কেন? আশপাশে বসে কলকাতার সাংবাদিকরা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন৷ কেউ বলতে পারছেন না৷ মাঠের জায়ান্ট স্ত্রিনের দিকে তাকিয়ে সকলেই৷ সেখানে তখন জিদানের মাঠ ছেড়ে বেরোনোর দৃশ্য দেখাতে ব্যস্ত৷ আসলে মাঠের টিভিতে কোনও দিন ফাউলের রিপ্লে দেখায় না৷ এতে মাঠে উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলে৷ বিশ্বকাপের প্রেস বক্সে কিছু কিছু ডেস্কে টিভি থাকে৷ কিন্ত্ত ভারতীয় সাংবাদিকরা সব সময় টিভিওয়ালা ডেস্ক পান না৷ সেদিন ফাইনালেও পাননি৷ বসতে হয়েছিল সাধারণ চেয়ারে, দর্শকদের ভিড়ে৷ বুঝতে পারছিলাম, বড় কিছু একটা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কী হয়েছে? সত্যি বলছি, মাঠে বসে তখনও বুঝতে পারিনি৷ পরে মিডিয়া সেন্টারে এসে টিভিতে দেখলাম সেই জিদানের ঢুঁসো৷
কেন খেয়াল করতে পারলাম না? এই প্রশ্নটা আজও আমায় তাড়া করে ফেরে৷
চার বছর আগের কথা৷ জোহানেসবার্গের রাস্তায় বেরোনো দায়৷ কনকনে ঠান্ডা৷ কখনও এক ডিগ্রি, কখনও দু' ডিগ্রি৷ কান ঢাকা টুপি, গ্লাভস পরেও মনে হচ্ছে ঠান্ডা যেন হাড়ে গিয়ে ঠেকছে৷
বিশ্বকাপ ফাইনালের একদিন আগে স্পেন টিমের সাংবাদিক বৈঠক৷ জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে, পচেস্ট্রূমে৷ সেখানকার সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেন শিবির করেছিল৷ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রাগবি মাঠ৷ মাঠের পাশেই স্পেনের মিডিয়া সেন্টার৷ সেখানে কোন ফুটবলার আসবেন? নাকি কোচ বিসেন্তে দেল বোস্কে নিজে আসবেন? তা নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না সাংবাদিক মহলে৷
ঠিক ছিল সকাল দশটায় ছিল সাংবাদিক বৈঠক শুরু হবে৷ কিন্ত্ত সাড়ে দশটা, এগারোটা বেজে গেলেও কারও দেখা ছিল না৷ কিছু পরে জানা গেল, আসবেন স্পেনের দুই ফুটবলার কার্লোস মার্চেনা ও সের্খিও বুসকেতস৷ শুনে বিশ্বের অধিকাংশ সাংবাদিকের মুখ শুকনো৷ আরও বড় তারকাকে পাওয়া যাবে না? সেই দুই ফুটবলার এলেন৷ মামুলি কিছু কথাবার্তা৷ তা দিয়ে কলকাতার কাগজে এক লাইনও লেখা যায় না৷ ঘড়ির কাঁটা অনুয়ায়ী ভারতে তখন রীতিমতো সন্ধ্যা৷
কী করি? ছেলেবেলায় প্রশ্নের উত্তর না পারলে যেমন পেন্সিল চিবোতাম৷ এই সাংবাদিক বৈঠক সেরে বেরিয়েও যেন সেই দশা৷ সামনের ল্যাপটপের ফাঁকা স্ক্রিন যেন গিলে খেতে আসছে৷ হঠাত্ দেখি ক্যামেরাম্যানরা কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে বাইরে যাচ্ছেন৷ কলকাতার সাংবাদিকরাও ছুটলাম৷ বাইরে গিয়ে দেখি পনিটেল করা সের্খিও রামোস৷
যুবভারতীতে বড় ম্যাচ খেলার পর আমরা যেভাবে রহিম নবি-মেহতাবদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলি, সে ভাবেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন রামোস৷ একটু ভয় হচ্ছিল, ইংরেজি বলতে পারেন তো! কপাল ঠুকে ইংরাজিতে প্রশ্ন করলাম৷ স্পেনের জয়ের সম্ভাবনা কতটা? আমাকে অবাক করে দিয়ে রামোসের ইংরেজিতে জবাব, 'হান্ড্রেড পারসেন্ট৷' তারপর স্প্যানিশ সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরলেন৷ আমি আর পাত্তা পাচ্ছি না৷ তাও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম৷ ধৈর্য্য ধরতে না পেরে প্রশ্ন করলাম, জেতার পর আপনাদের বিজয়োত্সব কী ভাবে পালন করবেন? উত্তর এল স্প্যানিশে৷ পাশের এক স্পেনীয় সাংবাদিক কানে কানে ইংরেজিতে বললেন, 'উত্তর দিয়েছে৷ একটু অপেক্ষা করুন৷ আমিই বলে দেব৷' নিশ্চিন্ত হলাম৷
রামোস চলে যেতেই স্পেনের সেই সাংবাদিক উত্তরটা শুনিয়ে দিলেন৷ আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসছি৷ একটু দূরে আবার ভিড়৷ সেখানেও গিয়ে দেখি কার্লোস পুজোল৷ আসলে রামোসের মতো পুজোলও এসেছিলেন পাশের স্পেনীয় টিভিতে ইন্টারভিউ দিতে৷ কথাবার্তা চলছিল স্প্যানিশে৷ দাঁড়িয়ে শুধু দেখলাম ঝাঁকড়া চুলের পুজোলকে৷ দেখছিলাম বার্সেলোনা তারকার 'সিক্স প্যাক'৷
দুই ফুটবলারই চলে যাওয়ার পর, সে দেশের সাংবাদিকরা আমাদের সব কিছু তর্জমা করে দিলেন৷ সেখানে স্পেনের ফুটবলের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ফুটবলের সম্পর্ক উঠে এল৷ উঠে এল রাইনাস মিশেলসের টোটাল ফুটবল৷ যোহান ক্রুয়েফের পাসিং ফুটবলের থেকে জন্ম আজকের 'তিতিতাকা৷' রামোস ও পুজোলের কথায় উঠে এসেছিল সেই ফুটবলেরই আলোচনা৷ তাঁদের কথা শুনে বোঝা গিয়েছিল, জয়ের ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই তাঁদের৷ সেই রিপোর্ট লিখে কলকাতায় পাঠানোর পর মনে পড়ল, সকালে এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়েছি৷ বিকেল চারটে বাজে, চারদিকে শুনশান৷ এক জন বিদেশি সাংবাদিকও নেই৷ বসে শুধু আমরা কয়েক জন কলকাতার সাংবাদিক৷
বিশ্বকাপের গল্প বলতে গেলে শেষ হওয়ার নয়৷ ২০০৬ জার্মানির বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালি- ফ্রান্স ম্যাচ দেখতে বসেছি বার্লিনে৷ হঠাত্ই দেখলাম, রেফারি চতুর্থ রেফারির কাছে দৌড়ে গেলেন৷ তারপর জিদানকে লাল কার্ড দেখালেন৷ কিন্ত্ত কেন? আশপাশে বসে কলকাতার সাংবাদিকরা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন৷ কেউ বলতে পারছেন না৷ মাঠের জায়ান্ট স্ত্রিনের দিকে তাকিয়ে সকলেই৷ সেখানে তখন জিদানের মাঠ ছেড়ে বেরোনোর দৃশ্য দেখাতে ব্যস্ত৷ আসলে মাঠের টিভিতে কোনও দিন ফাউলের রিপ্লে দেখায় না৷ এতে মাঠে উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলে৷ বিশ্বকাপের প্রেস বক্সে কিছু কিছু ডেস্কে টিভি থাকে৷ কিন্ত্ত ভারতীয় সাংবাদিকরা সব সময় টিভিওয়ালা ডেস্ক পান না৷ সেদিন ফাইনালেও পাননি৷ বসতে হয়েছিল সাধারণ চেয়ারে, দর্শকদের ভিড়ে৷ বুঝতে পারছিলাম, বড় কিছু একটা হয়েছে৷ কিন্ত্ত কী হয়েছে? সত্যি বলছি, মাঠে বসে তখনও বুঝতে পারিনি৷ পরে মিডিয়া সেন্টারে এসে টিভিতে দেখলাম সেই জিদানের ঢুঁসো৷
কেন খেয়াল করতে পারলাম না? এই প্রশ্নটা আজও আমায় তাড়া করে ফেরে৷
No comments:
Post a Comment