প্রিয় বন্ধু পিকেকে দেখে অতীতে ডুব সৌমিত্রের
চোখে সানগ্লাস, গায়ে ঘি রংয়ের সাফারি, এক মাথা সাদা চুল। অন্যের হাত ধরে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে যখন সেই ভদ্রলোক মঞ্চে উঠলেন, গ্যালারির হাততালিতেও যেন বিষাদের সুর। এক প্রবীণ তার পাশে বসা কিশোর নাতিকে দেখিয়ে বলছিলেন, 'ওই দ্যাখ, মহম্মদ হাবিব।
EiSamay | Updated:
অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
'প্রিয় বন্ধু'-পিকের গলায় যখন লাল-হলুদ উত্তরীয়টা পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখটা কি একটু হলেও ভিজে যায়নি? কিংবা কপিল দেব নিখাঞ্জ। যখন বললেন, 'লাল-হলুদ জার্সি গায়ে পরি বা না পরি, দেখতে হবে হৃদয়ের রংটা ক্লাবের রংয়ে রেঙেছে কি না?' হাততালি যেন থামতেই চায় না!
চোখে সানগ্লাস, গায়ে ঘি রংয়ের সাফারি, এক মাথা সাদা চুল। অন্যের হাত ধরে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে যখন সেই ভদ্রলোক মঞ্চে উঠলেন, গ্যালারির হাততালিতেও যেন বিষাদের সুর। এক প্রবীণ তার পাশে বসা কিশোর নাতিকে দেখিয়ে বলছিলেন, 'ওই দ্যাখ, মহম্মদ হাবিব। কী ফুটবলার ছিল!' হাবিব মিঞার নামে কত-কত গল্প আজও ভেসে বেড়ায় ময়দানে। যে মানুষটা 'লড়াই' ছাড়া আর কিছু জানতেন না, তাঁর এমন পরিণতিতে 'বিষাদ' তো হবেই।
অথবা সেই মুহূর্তটা। মঞ্চে ওঠা-নামার মুখে সুরেশচন্দ্র চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে ধরলেন শৈলেশ ঘোষের পরিবারে সদস্যরা। একশো বছর আগে তাঁদেরই পূর্বপুরুষদের হাতে তৈরি ক্লাব একশো বছর আবার মিলিয়ে দিল দুটো পরিবারকে।
এ রকম অজস্র টুকরো-টুকরো মুহূর্ত। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নেতাজি ইন্ডোরে গাঁথা রইল অনেক মণি-মুক্ত। আনাগোনা করল অনেক স্মৃতি, ফেলে আসা গল্প এবং আবেগ। আর সেই আবেগে ভাসল আট-থেকে আশি। কর্তারা গ্যালারি উপচে পড়ার ভয় পেয়েছিলেন। সেটা হয়নি। তবে গ্যালারি না ভরলেও ভালোবাসায় ঘাটতি ছিল না।
যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তি অভিনেতা যে লাল-হলুদের পঞ্চপাণ্ডবের খেলা আজও ভোলেননি, এই মঞ্চে না এলে কে জানত? বললেন, 'আমি গর্বিত, পঞ্চপাণ্ডবের খেলা দেখেছি। এখনও মনে আছে ওঁদের খেলার বিদ্যুৎ ঝলক।' পিকে আর সৌমিত্রর বন্ধুত্বের কথা অবশ্য অজানা নয়। সেই পিকে-কে যখন হুইল চেয়ারে বসিয়ে স্টেজে আনা হল, সৌমিত্রর গলাতেও আবেগ, 'পিকে আমাকে বলতেন, জানো বন্ধু, এই ক্লাবে কোচিং করিয়ে যখন আসি, তখন সমর্থকদের এত ভালোবাসা পাই, অবাক হয়ে যাই। আমার গাড়িটা পর্যন্ত লাল-হলুদ ফুলে ভরে থাকে।' সৌমিত্র বারবারই বলছিলেন, 'আজ একশো বছরে আমাকে সম্মান দেওয়া হচ্ছে ভেবে গর্বিত। একশো বছর ধরে মন্দিরের মতো বেড়ে উঠেছে এই ক্লাব।'
যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই পিকে অবশ্য নীরবই থাকলেন। তাঁকে দেখে কে বলবে, এক সময় এই মানুষটার 'ভোকাল টনিকে' কী ভাবে উত্তাল হত ময়দান!
কপিল দেবকে দেওয়া হল 'ভারত গৌরব' সন্মান। পাশে, আর এক কিংবদন্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মাত্র ক'দিন আগেই অনেক রাতে মোহনবাগান দিবসে এসে জমিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ। ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানেও সৌরভ যদি কিছু বলতেন, আরও ভালো হত। কপিলকে 'ভারত গৌরব' তুলে দেওয়ার বিষয়টিও আরও পরিকল্পনামাফিক হতে পারত। মঞ্চের ভিড়ে সমর্থকরা বুঝতেই পারলেন না, কপিলকে সম্মান দেওয়া হয়ে গিয়েছে!
পিকে-কে কোচেদের-কোচ সম্মান দেওয়ার সময় পাশে থাকলেন তাঁর চার প্রিয় ছাত্র মহম্মদ হাবিব, সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত ও শ্যাম থাপা। তবে সুভাষ যাঁকে এ দিন তাঁর দেখা সেরা ফুটবলার বললেন, সেই সুধীর কর্মকারকে দেখা গেল না। পিকের কোচিংয়ে সত্তরে টানা পাঁচবার লিগ জয়ের কথাও উঠল বারবার। কিন্তু পাঁচবারের সেই টিমে টানা ছিলেন সুধীর। সঙ্গে সমরেশও। যিনি এ দিন মঞ্চে উঠে কিছুটা অভিমানের সুরেই বলে গেলেন, 'টানা পাঁচবারের টিমে সুরজিৎ-হাবিব বা সুভাষ-শ্যাম ছিল না। কোচ প্রদীপদাও ছিলেন না। ছিলাম শুধু আমি আর সুধীর।'
ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠান। আর মোহনবাগান থাকবে না, তা কি হয়? বাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত যখন মঞ্চে উঠলেন, গোটা গ্যালারি তখন চিৎকার করছে, 'ইস্টবেঙ্গল-ইস্টবেঙ্গল'। তার মধ্যেই দেবাশিস জোর গলায় বলে গেলেন, 'জয় মোহনবাগান!' যা দেখে অবাক কপিলের মনে ক্রিকেটের ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের ছবি। বলেই ফেললেন, 'সমর্থকদের এই আবেগ না থাকলে কোনও ক্লাবই এগোতে পারে না।'
জীবনকৃতি সম্মান পেলেন দুই ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখার জন্য বলা হল, তখন গ্যালারি অনেকটাই ফাঁকা। বিশিষ্ট অতিথিরাও চলে গিয়েছিলেন। দুই প্রাক্তন রেফারি রত্নাঙ্কুর ঘোষ ও সুনীল কুমার মল্লিককেও সম্মান জানানো হল প্রথা মেনে। সম্মানিত করা হল দুই সাংবাদিক নবি কাপাডিয়া ও গৌতম ভট্টাচার্যকে। আর আইকন ভাইচুং ভুটিয়া তো ছিলেনই।
কিছু ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানটি অকারণ দীর্ঘায়িত হয়েছে। সম্মান আর সংবর্ধনার বাইরে আরও কিছু নতুনত্ব থাকলে ভালো হত। ডাকার পরেও লাল-হলুদ কোচ আলেহান্দ্রো মেনেন্দেস কেন মঞ্চে উঠলেন না, সেটাও প্রশ্ন। বর্ষসেরা ফুটবলার রালতেও পুরস্কার নিতে এলেন না। তবে পর্দায় যখন মজিদ বিসকার বললেন, '১৩ অগস্ট আমি আসছি,' তখন যেন পূর্ণতা পেল অনুষ্ঠান। আসলে, বৃহস্পতিবারের লাল-হলুদ সন্ধে ফিরিয়ে দিল অনেক ফেলে আসা অতীত!
'প্রিয় বন্ধু'-পিকের গলায় যখন লাল-হলুদ উত্তরীয়টা পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখটা কি একটু হলেও ভিজে যায়নি? কিংবা কপিল দেব নিখাঞ্জ। যখন বললেন, 'লাল-হলুদ জার্সি গায়ে পরি বা না পরি, দেখতে হবে হৃদয়ের রংটা ক্লাবের রংয়ে রেঙেছে কি না?' হাততালি যেন থামতেই চায় না!
চোখে সানগ্লাস, গায়ে ঘি রংয়ের সাফারি, এক মাথা সাদা চুল। অন্যের হাত ধরে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে যখন সেই ভদ্রলোক মঞ্চে উঠলেন, গ্যালারির হাততালিতেও যেন বিষাদের সুর। এক প্রবীণ তার পাশে বসা কিশোর নাতিকে দেখিয়ে বলছিলেন, 'ওই দ্যাখ, মহম্মদ হাবিব। কী ফুটবলার ছিল!' হাবিব মিঞার নামে কত-কত গল্প আজও ভেসে বেড়ায় ময়দানে। যে মানুষটা 'লড়াই' ছাড়া আর কিছু জানতেন না, তাঁর এমন পরিণতিতে 'বিষাদ' তো হবেই।
অথবা সেই মুহূর্তটা। মঞ্চে ওঠা-নামার মুখে সুরেশচন্দ্র চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে ধরলেন শৈলেশ ঘোষের পরিবারে সদস্যরা। একশো বছর আগে তাঁদেরই পূর্বপুরুষদের হাতে তৈরি ক্লাব একশো বছর আবার মিলিয়ে দিল দুটো পরিবারকে।
এ রকম অজস্র টুকরো-টুকরো মুহূর্ত। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নেতাজি ইন্ডোরে গাঁথা রইল অনেক মণি-মুক্ত। আনাগোনা করল অনেক স্মৃতি, ফেলে আসা গল্প এবং আবেগ। আর সেই আবেগে ভাসল আট-থেকে আশি। কর্তারা গ্যালারি উপচে পড়ার ভয় পেয়েছিলেন। সেটা হয়নি। তবে গ্যালারি না ভরলেও ভালোবাসায় ঘাটতি ছিল না।
যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তি অভিনেতা যে লাল-হলুদের পঞ্চপাণ্ডবের খেলা আজও ভোলেননি, এই মঞ্চে না এলে কে জানত? বললেন, 'আমি গর্বিত, পঞ্চপাণ্ডবের খেলা দেখেছি। এখনও মনে আছে ওঁদের খেলার বিদ্যুৎ ঝলক।' পিকে আর সৌমিত্রর বন্ধুত্বের কথা অবশ্য অজানা নয়। সেই পিকে-কে যখন হুইল চেয়ারে বসিয়ে স্টেজে আনা হল, সৌমিত্রর গলাতেও আবেগ, 'পিকে আমাকে বলতেন, জানো বন্ধু, এই ক্লাবে কোচিং করিয়ে যখন আসি, তখন সমর্থকদের এত ভালোবাসা পাই, অবাক হয়ে যাই। আমার গাড়িটা পর্যন্ত লাল-হলুদ ফুলে ভরে থাকে।' সৌমিত্র বারবারই বলছিলেন, 'আজ একশো বছরে আমাকে সম্মান দেওয়া হচ্ছে ভেবে গর্বিত। একশো বছর ধরে মন্দিরের মতো বেড়ে উঠেছে এই ক্লাব।'
যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই পিকে অবশ্য নীরবই থাকলেন। তাঁকে দেখে কে বলবে, এক সময় এই মানুষটার 'ভোকাল টনিকে' কী ভাবে উত্তাল হত ময়দান!
কপিল দেবকে দেওয়া হল 'ভারত গৌরব' সন্মান। পাশে, আর এক কিংবদন্তি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মাত্র ক'দিন আগেই অনেক রাতে মোহনবাগান দিবসে এসে জমিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ। ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানেও সৌরভ যদি কিছু বলতেন, আরও ভালো হত। কপিলকে 'ভারত গৌরব' তুলে দেওয়ার বিষয়টিও আরও পরিকল্পনামাফিক হতে পারত। মঞ্চের ভিড়ে সমর্থকরা বুঝতেই পারলেন না, কপিলকে সম্মান দেওয়া হয়ে গিয়েছে!
পিকে-কে কোচেদের-কোচ সম্মান দেওয়ার সময় পাশে থাকলেন তাঁর চার প্রিয় ছাত্র মহম্মদ হাবিব, সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত ও শ্যাম থাপা। তবে সুভাষ যাঁকে এ দিন তাঁর দেখা সেরা ফুটবলার বললেন, সেই সুধীর কর্মকারকে দেখা গেল না। পিকের কোচিংয়ে সত্তরে টানা পাঁচবার লিগ জয়ের কথাও উঠল বারবার। কিন্তু পাঁচবারের সেই টিমে টানা ছিলেন সুধীর। সঙ্গে সমরেশও। যিনি এ দিন মঞ্চে উঠে কিছুটা অভিমানের সুরেই বলে গেলেন, 'টানা পাঁচবারের টিমে সুরজিৎ-হাবিব বা সুভাষ-শ্যাম ছিল না। কোচ প্রদীপদাও ছিলেন না। ছিলাম শুধু আমি আর সুধীর।'
ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠান। আর মোহনবাগান থাকবে না, তা কি হয়? বাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত যখন মঞ্চে উঠলেন, গোটা গ্যালারি তখন চিৎকার করছে, 'ইস্টবেঙ্গল-ইস্টবেঙ্গল'। তার মধ্যেই দেবাশিস জোর গলায় বলে গেলেন, 'জয় মোহনবাগান!' যা দেখে অবাক কপিলের মনে ক্রিকেটের ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের ছবি। বলেই ফেললেন, 'সমর্থকদের এই আবেগ না থাকলে কোনও ক্লাবই এগোতে পারে না।'
জীবনকৃতি সম্মান পেলেন দুই ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখার জন্য বলা হল, তখন গ্যালারি অনেকটাই ফাঁকা। বিশিষ্ট অতিথিরাও চলে গিয়েছিলেন। দুই প্রাক্তন রেফারি রত্নাঙ্কুর ঘোষ ও সুনীল কুমার মল্লিককেও সম্মান জানানো হল প্রথা মেনে। সম্মানিত করা হল দুই সাংবাদিক নবি কাপাডিয়া ও গৌতম ভট্টাচার্যকে। আর আইকন ভাইচুং ভুটিয়া তো ছিলেনই।
কিছু ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানটি অকারণ দীর্ঘায়িত হয়েছে। সম্মান আর সংবর্ধনার বাইরে আরও কিছু নতুনত্ব থাকলে ভালো হত। ডাকার পরেও লাল-হলুদ কোচ আলেহান্দ্রো মেনেন্দেস কেন মঞ্চে উঠলেন না, সেটাও প্রশ্ন। বর্ষসেরা ফুটবলার রালতেও পুরস্কার নিতে এলেন না। তবে পর্দায় যখন মজিদ বিসকার বললেন, '১৩ অগস্ট আমি আসছি,' তখন যেন পূর্ণতা পেল অনুষ্ঠান। আসলে, বৃহস্পতিবারের লাল-হলুদ সন্ধে ফিরিয়ে দিল অনেক ফেলে আসা অতীত!
No comments:
Post a Comment