বললেন মজিদ বাসকার। চেহারা বদলালেও টানটান শরীর। আজও দিলখোলা। সাতসকালে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালের কফি শপে সাক্ষাৎকার দিলেন মুনাল চট্টোপাধ্যায়কে। ‘ইদ মুবারক’ বলে কথা শুরু।
কলকাতায় আপনার বিমান মাটি ছোঁয়া মাত্র কী অনুভূতি হয়েছিল?
মজিদ: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতি। প্রচুর স্মৃতি ভিড় করে এল। চোখে জল এসে গিয়েছিল। কলকাতা ছাড়লেও মন জুড়ে ছিল এই শহর, সতীর্থ, সমর্থকদের ভালবাসা। তাই ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ফেরাতে পারিনি। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম শহরে নেমে। ৩০ বছর পর এলাম। ভেবেছিলাম, এত রাতে ক্লাবের কয়েকজন থাকবেন শুধু। বেরোতে গিয়ে শয়ে শয়ে লাল–হলুদ সমর্থক দেখে স্তম্ভিত! মুখে ‘মজিদ–মজিদ’ চিৎকার। অভিভূত হয়ে পড়ি। ভিড় ঠেলে বেরোতে পারছিলাম না। নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্যে অন্য রাস্তা দিয়ে হোটেলে আনা হল। এতদিন পরেও আমাকে ঘিরে এমন উন্মাদনা! এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
এতদিন পর জামশিদকে দেখে কতটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন?
মজিদ: জামশিদের সঙ্গে কি আজকের সম্পর্ক? একটু সিনিয়র বলে ওকে দেখেছি ভাইয়ের মতো। একসঙ্গে তেহরানে খেলতাম। সেখান থেকে ভারতে জব্বলপুর হয়ে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলতে এসে কলকাতার কর্তাদের চোখে পড়ি। চলে গেলেও জামশিদের সঙ্গে কথা হত। ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর সঙ্গে সিসিএফসি–তে গেলাম। ওর বাড়ি গেলাম। জামশিদের ছেলে খেলে মোহনবাগানে। অনেকেই জানেন না, মোহনবাগান কর্তারা সংবিধান বদলে আমাদের নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বেশি চালাক ছিলেন। আমাদের তুলে নেন। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। ঝুট–ঝামেলাহীন একটা জায়গায় খেলতে চেয়েছিলাম।
এতদিন পর কলকাতা আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
মজিদ: কলকাতায় আসা নিয়ে এতদিন সিরিয়াস ছিলাম না। আগেও ইস্টবেঙ্গলে এমন অনুষ্ঠান হয়েছে। এবার শতবর্ষ। জামশিদ, মনোরঞ্জনরা বারবার ফোন করে আসতে বলল। জানাল সেরা বিদেশি ফুটবলারের সম্মান দেবে ক্লাব। অনুরোধ ঠেলতে পারলাম না। ভাইপোরাও বলল। এত ভালবাসা পেলাম। না এলে আফশোস থাকত। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানেও অনেকের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে রোমাঞ্চিত লাগছে।
লাল হলুদ জার্সিতে কোন টুর্নামেন্ট বা ম্যাচের কথা মনে পড়ে?
মজিদ: শুরু থেকেই ভাল খেলার খিদে ছিল। ইস্টবেঙ্গলে এসে শুনেছিলাম, আটজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার বেরিয়ে গেছে। বেশি মাথা ঘামাইনি। যারা ছিল, তাদের বলেছিলাম, এত ভাবনা কীসের? লড়ে যাব। লড়াকু হাবিবকে পেয়েছিলাম। ৮০–র ফেডারেশন কাপটা ছিল সেরাটা দেওয়ার মঞ্চ। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। ইরানে ৪–৩–৩ ছকে খেলতে অভ্যস্ত ছিলাম। ইস্টবেঙ্গল তখনও ৪–২–৪ ছকে খেলে। তখনই হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে নিই। বলি, আমি ফ্রি ফুটবলারের ভূমিকায় খেলব। জামশিদকে বলি, স্ট্রাইকার পজিশনেই থাক। বল বাড়াব, গোল করবে। কে গোল করল, তা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। ফেডারেশন কাপে সমর্থকদের আনন্দ দিতে পেরেছিলাম। আর সকলের অজান্তে এদেশে ৪–৩–৩ সিস্টেম চালু করে দিলাম। স্মরণীয় ম্যাচ দার্জিলিং গোল্ড কাপ ফাইনাল। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ২ গোলে পিছিয়ে। তখন ডার্বিতে এক–দু’গোলে পিছিয়ে থাকা মানে হেরে যাওয়া। ১৫ মিনিট বাকি থাকতে সবাই যখন ধরে নিয়েছে হেরেই যাব, তখন দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩ গোল করে জিতলাম। রোভার্স সেমিফাইনালেও এমন পরিস্থিতি থেকে জিতেছিলাম। মাঠে ছিলেন বলিউড তারকা দিলীপ কুমার। দারুণ উপভোগ করেছিলেন।
একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা ছিল বলেই তো বাদশা বলে ডাকা শুরু?
মজিদ: (হেসে) ভালবাসে বলে এমন নাম দিয়েছে।
তখন মোহনবাগানের কোনও ফুটবলারের কথা মনে পড়ে? কে সবচেয়ে কঠিন বাধা ছিল?
মজিদ: ইস্টবেঙ্গলের বাইরেও সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, মিহির বসু, গৌতম সরকারের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। এদেশের ফুটবলারদের বন্ধু হিসেবে পেয়ে খুব ভাল লেগেছিল। মনোরঞ্জনের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হয়নি। এক দলে খেলতাম। তাই সুব্রতই আমার দেখা সেরা ডিফেন্ডার। ও তো এখন মহমেডান কোচ। খুব নাছোড়বান্দা ছিল। হার্ড ট্যাকল করত। মাঠে নেমেই খোঁজ করত, মজিদ কোথায়? ওর সঙ্গে লড়াইটা জমত। পরে আবার গলায় গলায় ভাব। দেখা হলে দারুণ লাগবে।
১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরান দলে ছিলেন। খেলার সুযোগ পাননি। কোনও আক্ষেপ?
মজিদ: কোনও আক্ষেপ নেই। আমার বয়স তখন মাত্র ২০। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে আছি। ইরানের কোচ মজহার আলিও ছিলেন বিশ্বকাপার। রোজ বলতেন, সুযোগ আসবেই। জুনিয়র বলেই হয়ত সুযোগ পাইনি। কিন্তু বিরাট অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা, ইরানের বিশ্বকাপারদের তালিকায় আমার নাম চিরকাল থেকে যাবে। কোনওদিন পেছন ফিরে তাকাইনি। দেশে পরিস্থিতিতে খেলাধুলো নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল না সরকারের। নতুন করে দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। সেটা হতে কত সময় লাগবে, ১০ না ১৫ বছর, বোঝা সম্ভব ছিল না। আর্থিক সমস্যাও ছিল। তাই মনে হয়েছিল ভারতে চলে যাওয়াই ভাল। একটাই লক্ষ্য ছিল, ভাল খেলে সবার মন ভরানো। শুধু টাকার জন্য খেলিনি। ফুটবল বরাবর আমার প্যাশন। অনেকে একটা গোল করে নিজেকে খুব বড় ভাবে। মনে করে আর কঠোর অনুশীলনের দরকার নেই। কিছু শেখার নেই। সম্পূর্ণ ভুল। আমি তো এখনও শিখি। মেসি–রোনাল্ডোকে দেখে ভাবি, খেলার বয়স থাকলে ওদের ভাল দিকগুলো নিয়ে মাঠে নেমে পড়তাম। কিন্তু সেই বয়সটাই তো আর নেই।
একটা সময় ইরান বিশ্ব ফুটবলে দারুণ জায়গায় ছিল। এখন জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও এগিয়ে গেছে। কেন এই পিছিয়ে পড়া?
মজিদ: কারণ অনেক। প্রধান কারণ, দেশের অস্থির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাব। ফুটবলার তুলে আনার পদ্ধতি ঠিক থাকা জরুরি। এখন সর্বত্র বিদেশি কোচ নিয়োগ করে পেশাদার পথে হাঁটা শুরু হয়েছে। ভারতের কোচ বিদেশি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানেও তো এখন স্প্যানিশ কোচ। উন্নতি হবে বলেই তো এমন সিদ্ধান্ত।
তখন সানজারি–খাবাজিরা দাগ কাটতে পারেননি। তাঁরা কী করেন?
মজিদ: আমার সঙ্গে জামশিদের একটা দারুণ জুটি ছিল। মাঠের বোঝাপড়াও। সানজারি একা পড়ে গিয়েছিল। খাবাজিও সেভাবে সাপোর্ট পায়নি। সানজারি তেহরানে থাকে। খাবাজি দুবাইয়ে।
পেলে আর মারাদোনা— কে গ্রেটেস্ট? মেসি না রোনাল্ডো, কে পছন্দ?
মজিদ: মারাদোনা অসাধারণ। ছোটখাটো চেহারায় বিশ্ব মাতিয়েছেন। তবু পেলেকে এগিয়ে রাখব ধারাবাহিকতা দেখিয়ে দীর্ঘসময় ফুটবল বিশ্বকে শাসন করার জন্য। ওঁর ফুটবল কেরিয়ার অনেক দীর্ঘ আর ঝলমলে। মেসি আর রোনাল্ডোর মধ্যে মেসিকে বেশি পছন্দ। আর্টিস্ট। কখনও ঝামেলাবাজ মনে হয়নি। আমি মাঠে ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করতাম না। ইস্টবেঙ্গলে থাকতে ভুলবশত একটা হলুদ কার্ড দেখে খুব খারাপ লেগেছিল।
পি কে ব্যানার্জিকে কোচ হিসেবে কোন জায়গায় রাখবেন?
মজিদ: একটা কথা মানি, কোচ যেমনই হোন, রেসপেক্ট করতে হবে। প্রদীপদাকে শ্রদ্ধা করি। বাংলার সেরা কোচ। পি কে–র কোচিংয়ের একটা স্পেশালিটি ছিল। প্রচুর কথা বলতেন (ভোকাল টনিক)। ফুটবলারদের তাতাতে গিয়ে এমন সব কথা বলতেন যে, অনেকে রেগে যেত। সাজঘরে আয়াতুল্লা খোমেইনির থেকে নিজেকে বেশি শক্তিশালী বলেছিলেন। খাবাজি রেগে গিয়ে আমাকে বলেছিল, খোমেইনির থেকে নিজেকে কেন বড় বলছেন পি কে? ওকে শান্ত করে বলি, এটা ওঁর বলার স্টাইল। এসব ধরতে নেই। প্রদীপদার অদ্ভুত সংস্কার ছিল। যে জামা পরে জিততেন, সেটা ছাড়তেন না।
এখানকার কোন খাবার খেতে ভালবাসতেন?
মজিদ: বাঙালি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বেশি ভাল লাগত মাছ। ইলিশ খুব প্রিয় ছিল। প্র্যাকটিস এবং ম্যাচের পরেও ইলিশ খেয়েছি।
কোন বলিউড তারকাকে ভাল লাগত? এখনও ভারতীয় সিনেমা দেখেন?
মজিদ: সুযোগ পেলে হিন্দি সিনেমা দেখি। তখন ধর্মেন্দ্র খুব পপুলার ছিলেন।
মজিদ: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতি। প্রচুর স্মৃতি ভিড় করে এল। চোখে জল এসে গিয়েছিল। কলকাতা ছাড়লেও মন জুড়ে ছিল এই শহর, সতীর্থ, সমর্থকদের ভালবাসা। তাই ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ফেরাতে পারিনি। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম শহরে নেমে। ৩০ বছর পর এলাম। ভেবেছিলাম, এত রাতে ক্লাবের কয়েকজন থাকবেন শুধু। বেরোতে গিয়ে শয়ে শয়ে লাল–হলুদ সমর্থক দেখে স্তম্ভিত! মুখে ‘মজিদ–মজিদ’ চিৎকার। অভিভূত হয়ে পড়ি। ভিড় ঠেলে বেরোতে পারছিলাম না। নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্যে অন্য রাস্তা দিয়ে হোটেলে আনা হল। এতদিন পরেও আমাকে ঘিরে এমন উন্মাদনা! এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
এতদিন পর জামশিদকে দেখে কতটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন?
মজিদ: জামশিদের সঙ্গে কি আজকের সম্পর্ক? একটু সিনিয়র বলে ওকে দেখেছি ভাইয়ের মতো। একসঙ্গে তেহরানে খেলতাম। সেখান থেকে ভারতে জব্বলপুর হয়ে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলতে এসে কলকাতার কর্তাদের চোখে পড়ি। চলে গেলেও জামশিদের সঙ্গে কথা হত। ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর সঙ্গে সিসিএফসি–তে গেলাম। ওর বাড়ি গেলাম। জামশিদের ছেলে খেলে মোহনবাগানে। অনেকেই জানেন না, মোহনবাগান কর্তারা সংবিধান বদলে আমাদের নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বেশি চালাক ছিলেন। আমাদের তুলে নেন। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। ঝুট–ঝামেলাহীন একটা জায়গায় খেলতে চেয়েছিলাম।
এতদিন পর কলকাতা আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
মজিদ: কলকাতায় আসা নিয়ে এতদিন সিরিয়াস ছিলাম না। আগেও ইস্টবেঙ্গলে এমন অনুষ্ঠান হয়েছে। এবার শতবর্ষ। জামশিদ, মনোরঞ্জনরা বারবার ফোন করে আসতে বলল। জানাল সেরা বিদেশি ফুটবলারের সম্মান দেবে ক্লাব। অনুরোধ ঠেলতে পারলাম না। ভাইপোরাও বলল। এত ভালবাসা পেলাম। না এলে আফশোস থাকত। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। শতবর্ষের অনুষ্ঠানেও অনেকের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে রোমাঞ্চিত লাগছে।
লাল হলুদ জার্সিতে কোন টুর্নামেন্ট বা ম্যাচের কথা মনে পড়ে?
মজিদ: শুরু থেকেই ভাল খেলার খিদে ছিল। ইস্টবেঙ্গলে এসে শুনেছিলাম, আটজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার বেরিয়ে গেছে। বেশি মাথা ঘামাইনি। যারা ছিল, তাদের বলেছিলাম, এত ভাবনা কীসের? লড়ে যাব। লড়াকু হাবিবকে পেয়েছিলাম। ৮০–র ফেডারেশন কাপটা ছিল সেরাটা দেওয়ার মঞ্চ। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। ইরানে ৪–৩–৩ ছকে খেলতে অভ্যস্ত ছিলাম। ইস্টবেঙ্গল তখনও ৪–২–৪ ছকে খেলে। তখনই হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে নিই। বলি, আমি ফ্রি ফুটবলারের ভূমিকায় খেলব। জামশিদকে বলি, স্ট্রাইকার পজিশনেই থাক। বল বাড়াব, গোল করবে। কে গোল করল, তা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। ফেডারেশন কাপে সমর্থকদের আনন্দ দিতে পেরেছিলাম। আর সকলের অজান্তে এদেশে ৪–৩–৩ সিস্টেম চালু করে দিলাম। স্মরণীয় ম্যাচ দার্জিলিং গোল্ড কাপ ফাইনাল। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ২ গোলে পিছিয়ে। তখন ডার্বিতে এক–দু’গোলে পিছিয়ে থাকা মানে হেরে যাওয়া। ১৫ মিনিট বাকি থাকতে সবাই যখন ধরে নিয়েছে হেরেই যাব, তখন দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩ গোল করে জিতলাম। রোভার্স সেমিফাইনালেও এমন পরিস্থিতি থেকে জিতেছিলাম। মাঠে ছিলেন বলিউড তারকা দিলীপ কুমার। দারুণ উপভোগ করেছিলেন।
একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা ছিল বলেই তো বাদশা বলে ডাকা শুরু?
মজিদ: (হেসে) ভালবাসে বলে এমন নাম দিয়েছে।
তখন মোহনবাগানের কোনও ফুটবলারের কথা মনে পড়ে? কে সবচেয়ে কঠিন বাধা ছিল?
মজিদ: ইস্টবেঙ্গলের বাইরেও সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, মিহির বসু, গৌতম সরকারের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। এদেশের ফুটবলারদের বন্ধু হিসেবে পেয়ে খুব ভাল লেগেছিল। মনোরঞ্জনের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হয়নি। এক দলে খেলতাম। তাই সুব্রতই আমার দেখা সেরা ডিফেন্ডার। ও তো এখন মহমেডান কোচ। খুব নাছোড়বান্দা ছিল। হার্ড ট্যাকল করত। মাঠে নেমেই খোঁজ করত, মজিদ কোথায়? ওর সঙ্গে লড়াইটা জমত। পরে আবার গলায় গলায় ভাব। দেখা হলে দারুণ লাগবে।
১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরান দলে ছিলেন। খেলার সুযোগ পাননি। কোনও আক্ষেপ?
মজিদ: কোনও আক্ষেপ নেই। আমার বয়স তখন মাত্র ২০। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে আছি। ইরানের কোচ মজহার আলিও ছিলেন বিশ্বকাপার। রোজ বলতেন, সুযোগ আসবেই। জুনিয়র বলেই হয়ত সুযোগ পাইনি। কিন্তু বিরাট অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা, ইরানের বিশ্বকাপারদের তালিকায় আমার নাম চিরকাল থেকে যাবে। কোনওদিন পেছন ফিরে তাকাইনি। দেশে পরিস্থিতিতে খেলাধুলো নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল না সরকারের। নতুন করে দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। সেটা হতে কত সময় লাগবে, ১০ না ১৫ বছর, বোঝা সম্ভব ছিল না। আর্থিক সমস্যাও ছিল। তাই মনে হয়েছিল ভারতে চলে যাওয়াই ভাল। একটাই লক্ষ্য ছিল, ভাল খেলে সবার মন ভরানো। শুধু টাকার জন্য খেলিনি। ফুটবল বরাবর আমার প্যাশন। অনেকে একটা গোল করে নিজেকে খুব বড় ভাবে। মনে করে আর কঠোর অনুশীলনের দরকার নেই। কিছু শেখার নেই। সম্পূর্ণ ভুল। আমি তো এখনও শিখি। মেসি–রোনাল্ডোকে দেখে ভাবি, খেলার বয়স থাকলে ওদের ভাল দিকগুলো নিয়ে মাঠে নেমে পড়তাম। কিন্তু সেই বয়সটাই তো আর নেই।
একটা সময় ইরান বিশ্ব ফুটবলে দারুণ জায়গায় ছিল। এখন জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও এগিয়ে গেছে। কেন এই পিছিয়ে পড়া?
মজিদ: কারণ অনেক। প্রধান কারণ, দেশের অস্থির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাব। ফুটবলার তুলে আনার পদ্ধতি ঠিক থাকা জরুরি। এখন সর্বত্র বিদেশি কোচ নিয়োগ করে পেশাদার পথে হাঁটা শুরু হয়েছে। ভারতের কোচ বিদেশি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানেও তো এখন স্প্যানিশ কোচ। উন্নতি হবে বলেই তো এমন সিদ্ধান্ত।
তখন সানজারি–খাবাজিরা দাগ কাটতে পারেননি। তাঁরা কী করেন?
মজিদ: আমার সঙ্গে জামশিদের একটা দারুণ জুটি ছিল। মাঠের বোঝাপড়াও। সানজারি একা পড়ে গিয়েছিল। খাবাজিও সেভাবে সাপোর্ট পায়নি। সানজারি তেহরানে থাকে। খাবাজি দুবাইয়ে।
পেলে আর মারাদোনা— কে গ্রেটেস্ট? মেসি না রোনাল্ডো, কে পছন্দ?
মজিদ: মারাদোনা অসাধারণ। ছোটখাটো চেহারায় বিশ্ব মাতিয়েছেন। তবু পেলেকে এগিয়ে রাখব ধারাবাহিকতা দেখিয়ে দীর্ঘসময় ফুটবল বিশ্বকে শাসন করার জন্য। ওঁর ফুটবল কেরিয়ার অনেক দীর্ঘ আর ঝলমলে। মেসি আর রোনাল্ডোর মধ্যে মেসিকে বেশি পছন্দ। আর্টিস্ট। কখনও ঝামেলাবাজ মনে হয়নি। আমি মাঠে ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করতাম না। ইস্টবেঙ্গলে থাকতে ভুলবশত একটা হলুদ কার্ড দেখে খুব খারাপ লেগেছিল।
পি কে ব্যানার্জিকে কোচ হিসেবে কোন জায়গায় রাখবেন?
মজিদ: একটা কথা মানি, কোচ যেমনই হোন, রেসপেক্ট করতে হবে। প্রদীপদাকে শ্রদ্ধা করি। বাংলার সেরা কোচ। পি কে–র কোচিংয়ের একটা স্পেশালিটি ছিল। প্রচুর কথা বলতেন (ভোকাল টনিক)। ফুটবলারদের তাতাতে গিয়ে এমন সব কথা বলতেন যে, অনেকে রেগে যেত। সাজঘরে আয়াতুল্লা খোমেইনির থেকে নিজেকে বেশি শক্তিশালী বলেছিলেন। খাবাজি রেগে গিয়ে আমাকে বলেছিল, খোমেইনির থেকে নিজেকে কেন বড় বলছেন পি কে? ওকে শান্ত করে বলি, এটা ওঁর বলার স্টাইল। এসব ধরতে নেই। প্রদীপদার অদ্ভুত সংস্কার ছিল। যে জামা পরে জিততেন, সেটা ছাড়তেন না।
এখানকার কোন খাবার খেতে ভালবাসতেন?
মজিদ: বাঙালি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বেশি ভাল লাগত মাছ। ইলিশ খুব প্রিয় ছিল। প্র্যাকটিস এবং ম্যাচের পরেও ইলিশ খেয়েছি।
কোন বলিউড তারকাকে ভাল লাগত? এখনও ভারতীয় সিনেমা দেখেন?
মজিদ: সুযোগ পেলে হিন্দি সিনেমা দেখি। তখন ধর্মেন্দ্র খুব পপুলার ছিলেন।
No comments:
Post a Comment