পিকে ব্যানার্জি বড় বেশি কথা বলতেন
সুব্রত ভট্টাচার্যই আমার বিরুদ্ধে খেলা সেরা ডিফেন্ডার: মজিদ বাসকরজয় চৌধুরি
এতদিন পর কলকাতায় এলেন। রবিবার গিয়েছিলেন টপ ফর্মে থাকাকালীন আড্ডার জায়গা সিসিএফসি’তে। আপনার অনুভূতি কীরকম?
মজিদ: কলকাতায় ফের আসব তা আমি এক বছর আগে স্বপ্নেও ভাবিনি। এই বছরের গোড়ায় নতুন করে যোগাযোগ হয়। ইস্ট বেঙ্গলের শতবর্ষে আসার ব্যাপারে ক্লাব থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি প্রথমে খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিছুদিনের মধ্যে কর্তাদের পাশাপাশি বেশ কিছু সমর্থকেরও ফোন পেলাম। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আর জামশিদও ফোন করেছিল। ভাইপো ফেসবুক দেখে বলল, কলকাতার ফুটবল অনুরাগীরা তোমাকে দেখতে মুখিয়ে আছে। তাই চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কলকাতা কতটা বদলেছে?
মজিদ: খুব বেশি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। আমাদের টপ ফর্মে কলকাতায় এত গাড়ি ছিল না। আর এত ওভারব্রিজও দেখিনি। ফ্লাইওভার-ওভারব্রিজই আমার চোখ টেনেছে। জামশিদের মুখেই শুনলাম, যমুনা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। ওই হলে অনেক সিনেমা দেখেছিলাম।
কলকাতায় ছয়-সাত বছরের ফুটবল জীবনে আপনার প্রতিপক্ষ হিসাবে সেরা ডিফেন্ডার কে?
মজিদ: নিঃসন্দেহে সুব্রত ভট্টাচার্য। তবে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যও বেগ দিয়েছে। মহমেডান স্পোর্টিংয়ে খেলার সময়ে প্রতিপক্ষ হিসাবে ওকে পেয়েছি। এই তালিকায় প্রদীপ চৌধুরিও থাকবে। ও আমার চেয়েও জামশিদের পিছনে বেশি লেগে থাকত। তবে সুব্রত একটু ‘ঝামেলাবাজ ’হলেও প্রচণ্ড বুদ্বিদীপ্ত ছিল (এরপর টেবলে রাখা কফির ফ্লাস্কের ঢাকনা-বোতলের ছিপি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সুব্রত তাঁকে কীভাবে গার্ড করতেন)। সুব্রত পিছন থেকে সহ খেলোয়াড়দের বলত ‘মজিদ, মজিদ’।
আপনার সেরা টুর্নামেন্ট কোনটি?
মজিদ: অবশ্যই ১৯৮০ সালের ফেডারেশন কাপ। রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। কিন্তু ১৯৭৯ সালে রাজনীতিই হয়েছিল লাল-হলুদ ফুটবল টিমে। ১৯৮০ সালে ইস্ট বেঙ্গলের সাত ফুটবলার চলে গিয়েছিল মহমেডান স্পোর্টিংয়ের। এখনও মনে আছে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিল। আমি, জামশিদ ও খাবাজি তখন ইস্ট বেঙ্গলে নতুন এসেছি। দলটিকে দাঁড় করাতে আমরা তিনজন বড় ভূমিকা দিয়েছিলাম। আমি ও জামশিদ ছোটবেলা থেকে একই ক্লাবে খেলেছি। তেহরানে আমরা খেলতাম ৪-৩-৩ ছকে। কিন্তু কলকাতায় এসে দেখলাম ৪-৪ -২ ছকে খেলা হচ্ছে। প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলাম। আমি হাবিবকে নীচে নেমে আসতে বলি। কোচ পি কে ব্যানার্জি ৪-৪-২ ছকে খেলালেও আমরা চলে যেতাম ৪-৩-৩ ছকে। অনেক ম্যাচে সমর ভট্টাচার্য নামার পর সুধীর কর্মকারও ব্লকারের কাজ করেছে। সেই জন্য টিম ভেঙে খানখান হয়ে গেলেও আমরা ১৯৮০ সালে ডিসিএম ফাইনাল ছাড়া আর কোনও টিমের কাছে হারিনি। ফেড কাপে গ্রুপ লিগের সব ম্যাচ জিতে উঠেছিলাম ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত মোহন বাগানের সঙ্গে যুগ্মজয়ী হয় ইস্ট বেঙ্গল। ইডেনে ফেড কাপ আমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।’
সেরা ডার্বি কোনটি?
মজিদ: ভারতে একটা প্রচলিত ধারণা আছে মোহন- ইস্ট ম্যাচে কোনও দল দু’গোলে লিড নিলে সেই দলই জিতবে। ১৯৮০ সালে দার্জিলিং গোল্ড কাপের ফাইনালে মোহন বাগান দু’গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। পুজোর মুখে টুর্নামেন্ট। ইস্ট বেঙ্গল ২-০ গোলে পিছিয়ে আছে দেখে দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা থেকে যাওয়া অনেক সমর্থক ঘুরতে চলে যায়। সেই দৃশ্যই তাতিয়ে দিয়েছিল আমাকে। শেষ ২০ মিনিটে তিনটি গোল করেছিলাম আমরা। ওটাই সেরা ডার্বি। জামশিদও দারুণ খেলেছিল ওই ম্যাচে (ওই ঐতিহাসিক ম্যাচে মজিদ গোল না করলেও তাঁর পাস থেকে সিডি ফ্রান্সিস, সোমনাথ ব্যানার্জি, জামশিদকে দিয়ে গোল করেন)। এর পাশাপাশি ১৯৮০ সালের রোভার্স কাপে মোহন বাগানের বিরুদ্ধে ডাবল লেগ সেমি-ফাইনালের কথাও বলতে হবে। প্রথম লেগে মোহন বাগান দু’গোলে লিড নিলেও ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ২-২ হয়ে গিয়েছিল। পরদিন পিছিয়ে পড়েও জিতেছিলাম আমরা। ওই প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলা দেখতে আসতেন বলিউডের নামী অভিনেতা দিলীপকুমার। ওঁর সঙ্গে ওখানেই প্রথম আলাপ। ফাইনালে মহমেডানের মুখোমুখি হই আমরা। সেই ম্যাচেও ছিলেন দিলীপকুমার। প্রচণ্ড প্রশংসা করেছিলেন আমার খেলার। আর ১৯৮৪ সালে মহমেডানকে রোভার্সে চ্যাম্পিয়ন করার পর দিলীপকুমার প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনও আমার মনে আছে। মাঝের ৩০ বছর ভারতীয় ফুটবল সম্বন্ধে যে প্রচুর খোঁজ খবর রেখেছি তা নয়। তবে কলকাতায় আসার পর সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এখানেই ফের থেকে যাই। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। তেহরানে বেসরকারী সংস্থায় কাজ করি দায়িত্বপূর্ণ পদে। দিন পাঁচেকের ছুটি নিয়ে এসেছি। ইদ থাকায় আমার কাজের চাপও কম। এই কথোপকথনের মাঝেই পিকে’র সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন মজিদ।
পি কে ব্যানার্জি সম্বন্ধে আপনার ধারণা কী?
মজিদ: দেখুন, ট্রফির সংখ্যা যদি একজন সফল কোচের মাপকাঠি হয়, তবে পিকে ব্যানার্জিই সেরা কোচ। তবে উনি বড় বেশি কথা বলতেন। ওঁর কোচিংয়ে ভোকাল টনিক বেশি, টেকনিক্যাল ব্যাপার কম। ১৯৮০ সালে ৪-২-৪ পদ্ধতিকে ভেঙে ৪-৩-৩ করার প্রস্তাব ছিল আমার। হাবিব ও খাবাজি সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে। পরে উনি এই ফর্মেশন বদলের কৃতিত্ব নেন। একদিন পিকে বলেছিলেন, তোমাদের দেশের রেভেনিউশনারি নেতা আয়াতুল্লা খোমেইনির চেয়েও এই দেশে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। আমি হলাম ভারতীয় ফুটবলের সুপার পাওয়ার। আমি যা বলছি শোনো।
খাবাজি-সানজারি এখন কী করেন?
মজিদ: খাবাজি তেহরানে কোচিং করাচ্ছে। সানজারি আছে দুবাইয়ে। বিগ বিজনেসম্যান।
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেননি। আর ইরানের ফুটবল এখন কোন পথে?
মজিদ: বিশ্বকাপে এক মিনিট খেলতে না পারার দুঃখ তো আছেই। তবে টিমের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে ছিলাম। সেটাও গর্বের। সেবার আমাকে কেন খেলানো হয়নি জানেন? কারণ, তখন আমার বয়স মাত্র ২০ বছর। তার আগের বছরই আমি ইরানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপে খেলেছি। এখন তো আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০ বছরের ছেলেরাই তারকা হয়ে যাচ্ছে। ফিল ফোডেন, জ্যাডন স্যাঞ্চো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে সেবার খেলার সুযোগ পেলে আমার হয়তো কলকাতায় আসা হত না। অন্য কোনও দেশে চলে যেতাম! সবই ভবিতব্য। এই যে কলকাতায় আমার কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হতে পারত, কিন্তু হল না। সেটা রাজনীতির পাকচক্রে। বিস্তারিতভাবে কিছু বলতে চাই না। আর ইরানের ফুটবল? সাতের দশকে ইরানের যা মান ছিল সেই অনুসারে আমরা এগতে পারিনি। জাপান-কোরিয়া এগিয়ে গিয়েছে। ইরানের ফুটবলের অগ্রগতি অনেকটা ভারতের মতোই। ছয়ের দশকে কত ভালো জায়গায় ছিল ভারতীয় ফুটবল! শুনলাম এখন দুই প্রধানেই স্প্যানিশ কোচ। আমি একটু বিস্মিতই।
মোহন বাগানে খেলতে না পারার জন্য কোনও আক্ষেপ?
মজিদ: ১৯৮১ সালে মোহন বাগান কর্তারা আমার কাছে এসে বলেছিলেন, তোমার জন্য আমরা ক্লাবের সংবিধান পরিবর্তন করতে রাজি। আমাকেও টলিয়ে দিয়েছিল সেই কথা। তবে ইস্ট বেঙ্গলের রিক্রুটাররা অনেক বেশি চালাক। অরুণ ভট্টাচার্য আমাকে সরিয়ে দেন গোপন স্থানে। তাছাড়া সেই বছর মোহন বাগানে অন্তর্দলীয় কোন্দলও ছিল। মোহন বাগানে না খেলা নিয়ে তেমন কোনও আক্ষেপ নেই।
পেলে ও মারাদোনার মধ্যে কীভাবে তুলনা করবেন আপনি? লায়োনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে সেরা কে?
মজিদ: পেলেই সেরা। কারণ ওঁর ধারাবাহিকতা সবথেকে বেশি। তিনবার বিশ্বকাপ জেতা মুখের কথা নয়। তবে মারাদোনা ওই রকম ছোট চেহারা নিয়ে বিশ্ব ফুটবলকে মাত করে দিয়েছিলেন। আমি মারাদোনারও গুণমুগ্ধ। আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর থেকে লিও মেসিকেই আমার বেশি ভালো লাগে। ব্যাক্তিগত স্কিলের বিচ্ছুরণ ওর মধ্যেই বেশি।
গ্রিজম্যান, মহম্মদ সালাহ এবং নেইমারের মধ্যে ভবিয্যতের সুপারস্টার কে?
মজিদ: আমার মনে হচ্ছে গ্রিজম্যান সকলকে টপকে যাবে। নেইমারের প্যারিসে খেলতে যাওয়াটা ভুল। মো সালাহর চেয়ে গ্রিজম্যান সব ব্যাপারেই এগিয়ে।
মজিদ: কলকাতায় ফের আসব তা আমি এক বছর আগে স্বপ্নেও ভাবিনি। এই বছরের গোড়ায় নতুন করে যোগাযোগ হয়। ইস্ট বেঙ্গলের শতবর্ষে আসার ব্যাপারে ক্লাব থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি প্রথমে খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না। কিছুদিনের মধ্যে কর্তাদের পাশাপাশি বেশ কিছু সমর্থকেরও ফোন পেলাম। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আর জামশিদও ফোন করেছিল। ভাইপো ফেসবুক দেখে বলল, কলকাতার ফুটবল অনুরাগীরা তোমাকে দেখতে মুখিয়ে আছে। তাই চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কলকাতা কতটা বদলেছে?
মজিদ: খুব বেশি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। আমাদের টপ ফর্মে কলকাতায় এত গাড়ি ছিল না। আর এত ওভারব্রিজও দেখিনি। ফ্লাইওভার-ওভারব্রিজই আমার চোখ টেনেছে। জামশিদের মুখেই শুনলাম, যমুনা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। ওই হলে অনেক সিনেমা দেখেছিলাম।
কলকাতায় ছয়-সাত বছরের ফুটবল জীবনে আপনার প্রতিপক্ষ হিসাবে সেরা ডিফেন্ডার কে?
মজিদ: নিঃসন্দেহে সুব্রত ভট্টাচার্য। তবে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যও বেগ দিয়েছে। মহমেডান স্পোর্টিংয়ে খেলার সময়ে প্রতিপক্ষ হিসাবে ওকে পেয়েছি। এই তালিকায় প্রদীপ চৌধুরিও থাকবে। ও আমার চেয়েও জামশিদের পিছনে বেশি লেগে থাকত। তবে সুব্রত একটু ‘ঝামেলাবাজ ’হলেও প্রচণ্ড বুদ্বিদীপ্ত ছিল (এরপর টেবলে রাখা কফির ফ্লাস্কের ঢাকনা-বোতলের ছিপি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সুব্রত তাঁকে কীভাবে গার্ড করতেন)। সুব্রত পিছন থেকে সহ খেলোয়াড়দের বলত ‘মজিদ, মজিদ’।
আপনার সেরা টুর্নামেন্ট কোনটি?
মজিদ: অবশ্যই ১৯৮০ সালের ফেডারেশন কাপ। রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। কিন্তু ১৯৭৯ সালে রাজনীতিই হয়েছিল লাল-হলুদ ফুটবল টিমে। ১৯৮০ সালে ইস্ট বেঙ্গলের সাত ফুটবলার চলে গিয়েছিল মহমেডান স্পোর্টিংয়ের। এখনও মনে আছে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিল। আমি, জামশিদ ও খাবাজি তখন ইস্ট বেঙ্গলে নতুন এসেছি। দলটিকে দাঁড় করাতে আমরা তিনজন বড় ভূমিকা দিয়েছিলাম। আমি ও জামশিদ ছোটবেলা থেকে একই ক্লাবে খেলেছি। তেহরানে আমরা খেলতাম ৪-৩-৩ ছকে। কিন্তু কলকাতায় এসে দেখলাম ৪-৪ -২ ছকে খেলা হচ্ছে। প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলাম। আমি হাবিবকে নীচে নেমে আসতে বলি। কোচ পি কে ব্যানার্জি ৪-৪-২ ছকে খেলালেও আমরা চলে যেতাম ৪-৩-৩ ছকে। অনেক ম্যাচে সমর ভট্টাচার্য নামার পর সুধীর কর্মকারও ব্লকারের কাজ করেছে। সেই জন্য টিম ভেঙে খানখান হয়ে গেলেও আমরা ১৯৮০ সালে ডিসিএম ফাইনাল ছাড়া আর কোনও টিমের কাছে হারিনি। ফেড কাপে গ্রুপ লিগের সব ম্যাচ জিতে উঠেছিলাম ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত মোহন বাগানের সঙ্গে যুগ্মজয়ী হয় ইস্ট বেঙ্গল। ইডেনে ফেড কাপ আমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।’
সেরা ডার্বি কোনটি?
মজিদ: ভারতে একটা প্রচলিত ধারণা আছে মোহন- ইস্ট ম্যাচে কোনও দল দু’গোলে লিড নিলে সেই দলই জিতবে। ১৯৮০ সালে দার্জিলিং গোল্ড কাপের ফাইনালে মোহন বাগান দু’গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। পুজোর মুখে টুর্নামেন্ট। ইস্ট বেঙ্গল ২-০ গোলে পিছিয়ে আছে দেখে দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা থেকে যাওয়া অনেক সমর্থক ঘুরতে চলে যায়। সেই দৃশ্যই তাতিয়ে দিয়েছিল আমাকে। শেষ ২০ মিনিটে তিনটি গোল করেছিলাম আমরা। ওটাই সেরা ডার্বি। জামশিদও দারুণ খেলেছিল ওই ম্যাচে (ওই ঐতিহাসিক ম্যাচে মজিদ গোল না করলেও তাঁর পাস থেকে সিডি ফ্রান্সিস, সোমনাথ ব্যানার্জি, জামশিদকে দিয়ে গোল করেন)। এর পাশাপাশি ১৯৮০ সালের রোভার্স কাপে মোহন বাগানের বিরুদ্ধে ডাবল লেগ সেমি-ফাইনালের কথাও বলতে হবে। প্রথম লেগে মোহন বাগান দু’গোলে লিড নিলেও ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ২-২ হয়ে গিয়েছিল। পরদিন পিছিয়ে পড়েও জিতেছিলাম আমরা। ওই প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলা দেখতে আসতেন বলিউডের নামী অভিনেতা দিলীপকুমার। ওঁর সঙ্গে ওখানেই প্রথম আলাপ। ফাইনালে মহমেডানের মুখোমুখি হই আমরা। সেই ম্যাচেও ছিলেন দিলীপকুমার। প্রচণ্ড প্রশংসা করেছিলেন আমার খেলার। আর ১৯৮৪ সালে মহমেডানকে রোভার্সে চ্যাম্পিয়ন করার পর দিলীপকুমার প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনও আমার মনে আছে। মাঝের ৩০ বছর ভারতীয় ফুটবল সম্বন্ধে যে প্রচুর খোঁজ খবর রেখেছি তা নয়। তবে কলকাতায় আসার পর সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এখানেই ফের থেকে যাই। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। তেহরানে বেসরকারী সংস্থায় কাজ করি দায়িত্বপূর্ণ পদে। দিন পাঁচেকের ছুটি নিয়ে এসেছি। ইদ থাকায় আমার কাজের চাপও কম। এই কথোপকথনের মাঝেই পিকে’র সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন মজিদ।
পি কে ব্যানার্জি সম্বন্ধে আপনার ধারণা কী?
মজিদ: দেখুন, ট্রফির সংখ্যা যদি একজন সফল কোচের মাপকাঠি হয়, তবে পিকে ব্যানার্জিই সেরা কোচ। তবে উনি বড় বেশি কথা বলতেন। ওঁর কোচিংয়ে ভোকাল টনিক বেশি, টেকনিক্যাল ব্যাপার কম। ১৯৮০ সালে ৪-২-৪ পদ্ধতিকে ভেঙে ৪-৩-৩ করার প্রস্তাব ছিল আমার। হাবিব ও খাবাজি সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে। পরে উনি এই ফর্মেশন বদলের কৃতিত্ব নেন। একদিন পিকে বলেছিলেন, তোমাদের দেশের রেভেনিউশনারি নেতা আয়াতুল্লা খোমেইনির চেয়েও এই দেশে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। আমি হলাম ভারতীয় ফুটবলের সুপার পাওয়ার। আমি যা বলছি শোনো।
খাবাজি-সানজারি এখন কী করেন?
মজিদ: খাবাজি তেহরানে কোচিং করাচ্ছে। সানজারি আছে দুবাইয়ে। বিগ বিজনেসম্যান।
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেননি। আর ইরানের ফুটবল এখন কোন পথে?
মজিদ: বিশ্বকাপে এক মিনিট খেলতে না পারার দুঃখ তো আছেই। তবে টিমের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে ছিলাম। সেটাও গর্বের। সেবার আমাকে কেন খেলানো হয়নি জানেন? কারণ, তখন আমার বয়স মাত্র ২০ বছর। তার আগের বছরই আমি ইরানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপে খেলেছি। এখন তো আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০ বছরের ছেলেরাই তারকা হয়ে যাচ্ছে। ফিল ফোডেন, জ্যাডন স্যাঞ্চো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে সেবার খেলার সুযোগ পেলে আমার হয়তো কলকাতায় আসা হত না। অন্য কোনও দেশে চলে যেতাম! সবই ভবিতব্য। এই যে কলকাতায় আমার কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হতে পারত, কিন্তু হল না। সেটা রাজনীতির পাকচক্রে। বিস্তারিতভাবে কিছু বলতে চাই না। আর ইরানের ফুটবল? সাতের দশকে ইরানের যা মান ছিল সেই অনুসারে আমরা এগতে পারিনি। জাপান-কোরিয়া এগিয়ে গিয়েছে। ইরানের ফুটবলের অগ্রগতি অনেকটা ভারতের মতোই। ছয়ের দশকে কত ভালো জায়গায় ছিল ভারতীয় ফুটবল! শুনলাম এখন দুই প্রধানেই স্প্যানিশ কোচ। আমি একটু বিস্মিতই।
মোহন বাগানে খেলতে না পারার জন্য কোনও আক্ষেপ?
মজিদ: ১৯৮১ সালে মোহন বাগান কর্তারা আমার কাছে এসে বলেছিলেন, তোমার জন্য আমরা ক্লাবের সংবিধান পরিবর্তন করতে রাজি। আমাকেও টলিয়ে দিয়েছিল সেই কথা। তবে ইস্ট বেঙ্গলের রিক্রুটাররা অনেক বেশি চালাক। অরুণ ভট্টাচার্য আমাকে সরিয়ে দেন গোপন স্থানে। তাছাড়া সেই বছর মোহন বাগানে অন্তর্দলীয় কোন্দলও ছিল। মোহন বাগানে না খেলা নিয়ে তেমন কোনও আক্ষেপ নেই।
পেলে ও মারাদোনার মধ্যে কীভাবে তুলনা করবেন আপনি? লায়োনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে সেরা কে?
মজিদ: পেলেই সেরা। কারণ ওঁর ধারাবাহিকতা সবথেকে বেশি। তিনবার বিশ্বকাপ জেতা মুখের কথা নয়। তবে মারাদোনা ওই রকম ছোট চেহারা নিয়ে বিশ্ব ফুটবলকে মাত করে দিয়েছিলেন। আমি মারাদোনারও গুণমুগ্ধ। আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর থেকে লিও মেসিকেই আমার বেশি ভালো লাগে। ব্যাক্তিগত স্কিলের বিচ্ছুরণ ওর মধ্যেই বেশি।
গ্রিজম্যান, মহম্মদ সালাহ এবং নেইমারের মধ্যে ভবিয্যতের সুপারস্টার কে?
মজিদ: আমার মনে হচ্ছে গ্রিজম্যান সকলকে টপকে যাবে। নেইমারের প্যারিসে খেলতে যাওয়াটা ভুল। মো সালাহর চেয়ে গ্রিজম্যান সব ব্যাপারেই এগিয়ে।
No comments:
Post a Comment