মজিদকে এখনও ভোলেনি কলকাতা
রাতুল ঘোষ: ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। সেদিন পয়লা বৈশাখের সকালে ইস্ট বেঙ্গল মাঠ লোকে লোকারণ্য। বারপুজো ফি-বছরই হয় দুই প্রধানের মাঠে। কিন্তু এমন ভিড় সচরাচর দেখা যায় না। লাল-হলুদ জনতার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এক ইরানি বিশ্বকাপার। নাম মজিদ বাসকার। মাঠ খালি করতেই বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। অবশেষে তাঁকে সামনে রেখেই ইস্ট বেঙ্গল ফুটবলাররা মরশুমের প্রথম প্রভাতী অনুশীলনে মাঠে নামলেন।
কথায় বলে, ‘পহেলে দর্শনধারী, উসকে বাদ গুণবিচারি।’ প্রথম দর্শনেই মজিদ সমীহ আদায় করে নিলেন। টকটকে গায়ের রং। ব্যাক ব্রাশ করা ঘন কালো চুল। যেন বলিউডের ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।
সেবার ইস্ট বেঙ্গলের ১৪ জন ফুটবলার একসঙ্গে সুরজিৎ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে লাল-হলুদ শিবির ছেড়ে বেরিয়ে যান। অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল সাদা-কালো তাঁবু। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে থেকে যান স্রেফ তিনজন— মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ মিত্র ও হরজিন্দার সিং। আর বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখাতে মোহন বাগান ছেড়ে ইস্ট বেঙ্গলে এসেছিলেন মহম্মদ হাবিব ও অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক সুধীর কর্মকার।
তার আগের মরশুমে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে তখনকার দিনে ১৪ লক্ষ টাকা বাজেটে (বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১৫ কোটিরও বেশি) ফুটবল টিম গড়েও একটাও ট্রফি পাননি তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল সচিব নিশীথ ঘোষ। দলে বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দ্ব লাল-হলুদের টিম স্পিরিটের বারোটা বাজিয়ে দেয়। গুরুদেব সিং, দেবরাজ, ম্যাচাডোরা ইস্ট বেঙ্গল ছেড়ে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মজিদ ও জামশিদকে ইস্ট বেঙ্গলে এনেছিলেন তৎকালীন লাল-হলুদের সহ সচিব অরুণ ভট্টাচার্য। মোহন বাগানকে ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তুমুল সাফল্য এনে দিয়ে সেবার ১৯৮০ সালে ইস্ট বেঙ্গলে প্রত্যাবর্তন করেন ভারতীয় ফুটবলে সবচেয়ে সফল ক্লাব কোচ পিকে ব্যানার্জি। সেবার পিকে’র কপালে চাঁদ হয়ে দেখা দেন মজিদ বাসকার। মোহন বাগানের লেফট ব্যাক দিলীপ পালিতও সেবার দলবদল করে ইস্ট বেঙ্গলে আসেন। আর মহমেডান থেকে আসেন বর্ষীয়ান লতিফুদ্দিন।
১৯৮০-র গ্রীষ্মে ইডেন উদ্যানে ফেডারেশন কাপের আসর ছিল জমজমাট। এই টুর্নামেন্টেই কলকাতা ময়দান প্রথম ‘মজিদ ম্যাজিক’ প্রত্যক্ষ করেছিল। ‘ডাউন দ্য মিডল’ স্কিলের ঝলক ছড়িয়ে মজিদের চোখ ধাঁধানো দৌড়গুলো এখনও চোখে লেগে রয়েছে। সেবার ফেড কাপ ফাইনালে মোহন বাগান দূর্গের অতন্দ্র প্রহরী সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে মজিদের ডুয়েল কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছিলেন। মাঠে মজিদকে দেখে মনে হতো যেন ‘গ্যালপিং মেজর’। কি স্ট্রাইড! দৌড়ে ছিল এক আশ্চর্য ছন্দ। সেবার ফেড কাপ ফাইনাল অমীমাংসিত থাকায় দুই প্রধানকে যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছিল এআইএফএফ। এছাড়া সেবার রোভার্স কাপেও মহমেডান স্পোটিংয়ের সঙ্গে যুগ্মজয়ী হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। ১২ নম্বর জার্সি পরা মজিদ লাল-হলুদ জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী আসন পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কলকাতা ফুটবলের এক কলঙ্কিত অধ্যায়েরও সাক্ষী মজিদ বাসকর। ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট ইডেনে ডার্বি ম্যাচে রনজি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দুই বড় ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১৬ জন নির্দোষ ফুটবলপ্রেমী। যাদের স্মরণে আজও আইএফএ প্রতি বছর ১৬ আগস্ট পালন করে ফুটবলপ্রেমী দিবস।
দৈব দুর্বিপাকে ও আত্মিক পদস্খলনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কয়েক মরশুম কলকাতায় কাটিয়ে মজিদ ইরানে ফিরে যান। তখন তিনি ভাঙাচোরা মানুষ। কিন্তু কলকাতা এখনও মনে রেখেছে মজিদের ফুটবল শিল্পকে। ১৯৭৮ সালে ইরানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে স্থান পাওয়া মজিদ ইস্ট বেঙ্গলের শতবর্ষে রবিবার ভোরে আবার কলকাতায় আসছেন। লাল-হলুদপ্রেমীরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করবেন মঙ্গলবার বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। শহরে সুস্বাগতম ইরানি বাদশা।
কথায় বলে, ‘পহেলে দর্শনধারী, উসকে বাদ গুণবিচারি।’ প্রথম দর্শনেই মজিদ সমীহ আদায় করে নিলেন। টকটকে গায়ের রং। ব্যাক ব্রাশ করা ঘন কালো চুল। যেন বলিউডের ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।
সেবার ইস্ট বেঙ্গলের ১৪ জন ফুটবলার একসঙ্গে সুরজিৎ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে লাল-হলুদ শিবির ছেড়ে বেরিয়ে যান। অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল সাদা-কালো তাঁবু। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে থেকে যান স্রেফ তিনজন— মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ মিত্র ও হরজিন্দার সিং। আর বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখাতে মোহন বাগান ছেড়ে ইস্ট বেঙ্গলে এসেছিলেন মহম্মদ হাবিব ও অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক সুধীর কর্মকার।
তার আগের মরশুমে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে তখনকার দিনে ১৪ লক্ষ টাকা বাজেটে (বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১৫ কোটিরও বেশি) ফুটবল টিম গড়েও একটাও ট্রফি পাননি তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল সচিব নিশীথ ঘোষ। দলে বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দ্ব লাল-হলুদের টিম স্পিরিটের বারোটা বাজিয়ে দেয়। গুরুদেব সিং, দেবরাজ, ম্যাচাডোরা ইস্ট বেঙ্গল ছেড়ে পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মজিদ ও জামশিদকে ইস্ট বেঙ্গলে এনেছিলেন তৎকালীন লাল-হলুদের সহ সচিব অরুণ ভট্টাচার্য। মোহন বাগানকে ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তুমুল সাফল্য এনে দিয়ে সেবার ১৯৮০ সালে ইস্ট বেঙ্গলে প্রত্যাবর্তন করেন ভারতীয় ফুটবলে সবচেয়ে সফল ক্লাব কোচ পিকে ব্যানার্জি। সেবার পিকে’র কপালে চাঁদ হয়ে দেখা দেন মজিদ বাসকার। মোহন বাগানের লেফট ব্যাক দিলীপ পালিতও সেবার দলবদল করে ইস্ট বেঙ্গলে আসেন। আর মহমেডান থেকে আসেন বর্ষীয়ান লতিফুদ্দিন।
১৯৮০-র গ্রীষ্মে ইডেন উদ্যানে ফেডারেশন কাপের আসর ছিল জমজমাট। এই টুর্নামেন্টেই কলকাতা ময়দান প্রথম ‘মজিদ ম্যাজিক’ প্রত্যক্ষ করেছিল। ‘ডাউন দ্য মিডল’ স্কিলের ঝলক ছড়িয়ে মজিদের চোখ ধাঁধানো দৌড়গুলো এখনও চোখে লেগে রয়েছে। সেবার ফেড কাপ ফাইনালে মোহন বাগান দূর্গের অতন্দ্র প্রহরী সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে মজিদের ডুয়েল কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছিলেন। মাঠে মজিদকে দেখে মনে হতো যেন ‘গ্যালপিং মেজর’। কি স্ট্রাইড! দৌড়ে ছিল এক আশ্চর্য ছন্দ। সেবার ফেড কাপ ফাইনাল অমীমাংসিত থাকায় দুই প্রধানকে যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছিল এআইএফএফ। এছাড়া সেবার রোভার্স কাপেও মহমেডান স্পোটিংয়ের সঙ্গে যুগ্মজয়ী হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। ১২ নম্বর জার্সি পরা মজিদ লাল-হলুদ জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী আসন পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কলকাতা ফুটবলের এক কলঙ্কিত অধ্যায়েরও সাক্ষী মজিদ বাসকর। ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট ইডেনে ডার্বি ম্যাচে রনজি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দুই বড় ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১৬ জন নির্দোষ ফুটবলপ্রেমী। যাদের স্মরণে আজও আইএফএ প্রতি বছর ১৬ আগস্ট পালন করে ফুটবলপ্রেমী দিবস।
দৈব দুর্বিপাকে ও আত্মিক পদস্খলনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কয়েক মরশুম কলকাতায় কাটিয়ে মজিদ ইরানে ফিরে যান। তখন তিনি ভাঙাচোরা মানুষ। কিন্তু কলকাতা এখনও মনে রেখেছে মজিদের ফুটবল শিল্পকে। ১৯৭৮ সালে ইরানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে স্থান পাওয়া মজিদ ইস্ট বেঙ্গলের শতবর্ষে রবিবার ভোরে আবার কলকাতায় আসছেন। লাল-হলুদপ্রেমীরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করবেন মঙ্গলবার বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। শহরে সুস্বাগতম ইরানি বাদশা।
No comments:
Post a Comment