Thursday, 15 August 2019

ফ্ল্যাটে ফিরে অভিশপ্ত বড় ম্যাচে মৃত্যু মিছিলের কথা শুনেছিলেন মজিদ

 ফ্ল্যাটে ফিরে অভিশপ্ত বড় ম্যাচে মৃত্যু মিছিলের কথা শুনেছিলেন মজিদ

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা:১৯৮০ সালে ১৬ আগস্ট অভিশপ্ত বড় ম্যাচে যে ১৬ জন ফুটবলপ্রেমী মারা গিয়েছিলেন সেটা মজিদ জানতে পারেন ইডেন থেকে লাল-হলুদ তাঁবু ঘুরে লর্ড সিনহা রোডের ফ্ল্যাটে ফিরে। ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে সরকারি প্রেস কনফারেন্সে মজিদ বললেন,‘মাঠে খেলায় একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। গ্যালারির একটি অংশে গণ্ডগোল হয়েছিল। কিন্তু সেই ভাবে গুরুত্ব দিইনি। লর্ড সিনহা রোডের এক কিমির মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতাল। এক প্রতিবেশি এসে বললেন, ইডেনে গ্যালারিতে ঝামেলায় অনেকে মারা গিয়েছেন। পরে শুনলাম ১৬ জন মারা গিয়েছেন। লিগ পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। খুবই খারাপ লেগেছিল আমাদের।’
সোমবার বিকেল চারটা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যেই ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ঢুকলেন মজিদ বাসকর। ক্লাব তাঁবুতে তখন প্রায় হাজার খানেক সমর্থক। মিডিয়া প্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় একশো। ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে এসে ক্লাবের পরিকাঠামো দেখে চমকে যান ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের বাদশা। ক্লাবের অফিস ঘরে বসে তিনি মনে করার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের আমলে ড্রেসিংরুম কোথায় ছিল? সভাপতি- সচিবরাই বা কোথায় বসতেন? ড্রেসিংরুম- কনফারেন্স হল ঘুরে দেখেন। লাল হলুদের গ্রাউন্ড স্টাফ হিসাবে শঙ্করবাবাকে (শঙ্কর মালি) তিনি ভালোভাবেই মনে রেখেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর মুখে ছিল রামু মালির কথা।
মজিদের মুখে শোনা গেল রিপন স্ট্রিটের ভিতরে লি রেস্টুরেন্টের ফিস ফ্রাইয়ের কথা। তখন এগ রোল-চাইনিজ ফুডের এত কদর কলকাতা শহরে ছিল না। মজিদ জানালেন,‘ ইলিশ মাছ ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের প্রিয় হলেও আমার খুব ভালো লাগত না।’ সরকারি প্রেস কনফারেন্সেও মজিদ প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন। বাইরে তখন ইস্ট বেঙ্গল জনতা উদ্বেল হয়ে উঠেছে। প্রেস কনফারেন্স থেকে তাঁকে সরাসরি মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রেস কনফারেন্সে যেমন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম ছিল না, তেমনি মাঠে ছিল না প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ। জনাচারেক বাউন্সার ভিড় সামলাতে পারেনি। ‘মবড’ হওয়ার আশঙ্কায় কিছু গিয়ে মজিদ ফিরে আসেন তাঁবুতে। ৫০ মিনিট পর লালবাজার ও ময়দান থানা থেকে ফোর্স আসার পর সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ মজিদ বাসকর প্রায় ৩৪ বছর পর ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে ঢুকলেন শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। ফুটবলারদের জন্য রাখা বেঞ্চের উপরে উঠে অভিবাদন গ্রহণ করলেন সমর্থকদের। দুই সমর্থক মজিদের হাতে তুলে দেন উপহার।
মঙ্গলবার প্রয়াত সচিব পল্টু দাসের জন্মদিন। এই দিনটি ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সকালে ক্লাব তাঁবুতে হবে পতাকা উত্তোলন। তারপর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে রক্তদান শিবির। রক্তদাতারা পাবেন সুলে মুসার সই করা সার্টিফিকেট। বিকেলে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা জানানো হবে ইস্ট বেঙ্গলের জীবিত ৫০ জন অধিনায়ক ও ২৪ জন জীবিত কোচকে। লাল-হলুদের হয়ে ২০০৭ সালে ফেডারেশন কাপ জয়ী কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এমনকি ইস্ট বেঙ্গলের সংক্ষিপ্ততম সময়ের কোচ মৃদুল ব্যানার্জি এবং মোহন বাগানের বর্তমান সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরিও ইস্ট বেঙ্গলে স্বাধীন দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরাও আমন্ত্রিত। প্রাক্তন অধিনায়ক এবং কোচরা পাবেন রুপোর তৈরি গোল্ড প্লেটেড মুদ্রা। দুপুর দুটোয় হবে প্রাক্তনদের ম্যাচ। মজিদকেও নামানোর চেষ্টা চলছে। এই ম্যাচে প্রবেশ অবাধ। ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন ইলিয়াস পাশা, সঞ্জু প্রধানরা। আসছেন আর্মান্দো কোলাসোও।
মঙ্গলবার ইস্ট বেঙ্গল শতবার্ষিকী মঞ্চে সংবর্ধিত হবেন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং নামী চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার। সঙ্গীত পরিবেশন করবেন নচিকেতা ও ইমন চক্রবর্তী। সংবর্ধনা দেওয়া হবে পঞ্চপান্ডবদের পরিবারকে।
জামশিদের সই করা সার্টিফিকেট ফুটবলপ্রেমী দিবসে: আগামী ১৬ আগস্ট ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আইএফএ এবং ভলান্টিয়ার্স ব্লাড ডোনার্স সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পালিত হবে ফুটবলপ্রেমী দিবস। জামশিদ নাসিরির সই করা সার্টিফিকেট পাবেন রক্তদাতারা।

No comments:

Post a Comment