রাগের চোটে কথাই বন্ধ করে দিলেন শরৎচন্দ্র। যতই অভিন্নহৃদয় বন্ধু হোন, এ অপমান তিনি সহ্য করবেন না! কিছুতে না।
হেমেন্দ্রকুমারও সহজে ভাঙার নন! তিনি মনে করেন, যা করেছেন, ঠিক করেছেন। বরং শরৎবাবু যা করেছেন, তার এটাই যোগ্য জবাব।
প্রেসিডেন্সি কলেজের এক ছাত্রসভা। সাহিত্যসম্রাটকে নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎই তাঁকে ‘সেকেলে বঙ্কিম’ বলে ঠাট্টা করে বসলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
কথাটি কানে গেল হেমেন্দ্রকুমার রায়ের।
বন্ধুর এ কথায় এতটাই আহত হন যে, একটি পত্রিকায় শরৎচন্দ্রকে চড়া ভাষায় এক হাত নিয়ে বসলেন।
এমনকী পাল্টা যুক্তি দিয়ে দেখালেন, বঙ্কিম যদি ‘সেকেলে’ হন, তাঁর কাছে শরৎচন্দ্র আরও বেশি সেকেলে।
লেখা পড়ে শরৎচন্দ্র প্রায় নির্বাক। টানা এক বছর ভাল করে কথাই বলেননি বন্ধুর সঙ্গে। পরে অবশ্য আবার সব ভুলেটুলে যান।
•••
উচিত কথা বলতে কোনও দিন কাউকে ছাড়েননি হেমেন্দ্রকুমার। সে বন্ধুই হোন, আর যেই হোন। এ নিয়ে রবিঠাকুরেরও অভিজ্ঞতা একই রকম।
একটা সময় ছিল, যখন রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করতেন না অনেকেই। দ্বিজেন্দ্রলাল, অক্ষয়কুমার দত্তদের মতো নামীদামিও সেই দলে পড়তেন।
এঁদের কেউ কেউ প্রকাশ্য সভাতেও রবিঠাকুরের নিন্দা করতেন। অনেক সময়ই তাতে কেউই কোনও উচ্চবাচ্য করতেন না। কিন্তু হেমেন্দ্র উপস্থিত থাকলে পার পেতেন না কেউই। এই কথা জানতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। একবার চিঠিতে এক প্রিয়জনকে লিখেছিলেন, ‘‘হেমেন্দ্রকুমার আমার অকৃত্রিম সুহৃদ। কোনও দিন অসম্মান পাইনি তার কাছ থেকে। অথচ তিনি কবি, গল্প লিখিয়ে, সাহিত্যিক ও বাঙালি।’’
হ্যাঁ, কবিতাও লিখতেন হেমেন্দ্রনাথ। কিন্তু তার বেশির ভাগই ছাপার অক্ষরে পাঠক-মহলে কোনও দিন আসেনি। হয়তো’বা তা কিছুটা তাঁরই খেয়ালে। সে অন্য কাহিনি। পরে আসছি তার কথায়।
আগে বাংলা সাহিত্যে হেমেন্দ্রকুমার রায়ের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে গল্পটি শুনিয়ে ফেলা যাক। যার সঙ্গে আবার ঠাকুর পরিবার জড়িয়ে।
•••
রবিঠাকুরের দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী তখন ভারতী পত্রিকার সম্পাদক। প্রসাদ নামের বয়েসে তরুণ একটি ছেলে এসে বলল, ‘‘দিদি, আমি ভারতীতে বঙ্কিম যুগের বাঙালিদের নিয়ে আলোচনা করতে পারি?’’
ছেলেটিকে বিলক্ষণ চিনতেন তিনি। ওঁর কথায় সম্মতিও দিলেন। কিন্তু বললেন, ‘‘বাবা প্রসাদ, তোমার বয়স বড়ই কম। তুমি যদি নিজের নামে পুরনো কথা লেখো তাহলে পাঠকদের মন ভরবে না। তুমি বরং একটা ছদ্মনামে লেখো।’’
তাই হল। প্রসাদদাস রায় নামের সেই ছেলেটি ছদ্মনাম নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখতে লাগল। আর শুরুতেই পাঠক মহলে হই হই প্রশংসা।
শেষে ছদ্মনামেই এত বিখ্যাত হয়ে গেল তরুণ লেখকটি  যে, বাবার দেওয়া ‘প্রসাদ’ গেল হারিয়ে। সেই থেকে নাম হয়ে গেল হেমেন্দ্রকুমার রায়।
যে হেমেন্দ্রকুমারের নাম শুনলে আজও সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে যকের ধনের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বিমল-কুমার-গাটুলা সর্দার কিংবা ডিটেকটিভ জয়ন্ত-মানিকের ছবি। দুর্ধর্ষ সব অভিযানের টান টান কাহিনি। পায়ে পায়ে রহস্য, রোমাঞ্চ।
কিন্তু এই পরিচয়ের ট্র্যাজেডিটা হল, যে-মানুষটির জীবনে কিশোর সাহিত্যিক তকমাটাই শুধু টিকে রয়েছে যুগ যুগ ধরে, জীবনটা যে তাঁর কত রামধনুরঙা, জানলই বা ক’জনে!
আসা যাবে সে-কথাতেও।
•••
বঙ্কিমচন্দ্রকে ঘিরে ঘটনাটি যতই অপ্রীতিকর হোক, শরৎচন্দ্রের সঙ্গে হেমেন্দ্রকুমারের যোগাযোগের সূত্রপাতটি কিন্তু বেশ মজার।
‘যমুনা’ পত্রিকায় যখন ‘রামের সুমতি’ বেরোল, তখন শরৎচন্দ্রকে কেই বা চেনে! হেমেন্দ্রকুমারও চিনতেন না।
এক বন্ধু গল্পটি পড়ে তাঁকে বললেন, ‘‘পড়ে দেখো ভায়া। বড় চমৎকার লিখেছেন ভদ্রলোক।’’
পড়লেন হেমেন্দ্রকুমার। মুগ্ধ তিনিও। এর পরই খোঁজ নিতে শুরু করলেন লেখকের। এর মধ্যে সরকারি চাকরি ছেড়ে ‘যমুনা’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। শরৎবাবুর একের পর এক গল্প প্রকাশিত হচ্ছে সেখানে। লেখালেখি করছেন হেমেন্দ্রও। দু’জনেই একে অন্যের লেখার গুণগ্রাহী। কিন্তু সাক্ষাৎ আলাপ হয়নি, পরস্পরের মধ্যে চিঠিতেই যা পরিচয়।
এরই মাঝে এক দিন পত্রিকার দফতরে একজন এসে হাজির। রোগাটে কালো চেহারা। মাথার চুল এলোমেলো। এক মুখ দাড়ি গোঁফ। পরনের ধুতি-পাঞ্জাবি যথেষ্ট ময়লা। সঙ্গে আবার এনেছেন একটা বাচ্চা নেড়ি কুকুর। তার গলায় দড়ি বাঁধা।
সম্পূর্ণ অচেনা এমন খ্যাপাটে রকমের একটি লোককে দফতরে দেখে হেমেন্দ্রকুমার বেশ বিরক্তই হলেন। মুখে কিছু বললেন না।
আগন্তুক বরং উজিয়ে বললেন, ‘‘আমি একটু ফণীবাবুর (পত্রিকার সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পাল) সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’’
হেমেন্দ্রকুমার অনিচ্ছাভরে উত্তর দিলেন, ‘‘উনি নেই। একটু পরে আসবেন। আপনি ওই বেঞ্চিতে গিয়ে বসুন,’’ বলে দূরের একটি বেঞ্চি দেখিয়ে দিলেন।
ভদ্রলোক কুকুরটিকে নিয়ে বসে পড়লেন সেখানে।
একটু পরেই দফতরে ঢুকলেন ফণীবাবু। প্রায় তক্ষুনি বেঞ্চিতে বসা মানুষটিকে দেখে তিনি তো হা! এ যে স্বয়ং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়!
‘‘এ কী শরৎবাবু, আপনি বাইরের বেঞ্চিতে বসে আছেন? ভেতরে বসেননি কেন?’’
‘‘কী করব? আমাকে যে উনি এখানেই বসতে বললেন,’’ বলে সটান হেমেন্দ্রকুমারের দিকে আঙুল।
এ বার তো লজ্জার এক শেষ হেমেন্দ্রকুমারের।
কোনও ক্রমে মুখ খুললেন, ‘‘আরে বলবেন তো! আমি কী করে চিনব? কোনও দিন তো দেখিনি আপনাকে!’’
এই অদ্ভুত মোলাকাতের পর হেমেন্দ্র-শরৎ দু’জনে দু’জনের খুব বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন।
শরৎচন্দ্রের বোহেমিয়ান জীবন রীতিমতো টানত বন্ধু হেমেন্দ্রকে।
শরৎচন্দ্র বলতেন, ‘‘বুঝলে হেমেন্দ্র, এমন কোনও কুস্থান নেই, যেখানে আমি যাইনি। এমন কোনও নেশা নেই, যা আমি করিনি। কিন্তু নিজেকে কোনও দিন ভেসে যেতে দিইনি।’’
এমন একজন ডাকাবুকো মানুষ পরের জীবনে কী যে পাল্টে গিয়েছেলেন, সেও দেখা হেমেন্দ্রকুমারের। শেষ দিকে অদ্ভুত এক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন শরৎচন্দ্র। হয়তো’বা প্রথম জীবনের ভয়াল ভয়ঙ্কর সব ঘটনার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। এক জায়গায় একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন হেমেন্দ্রকুমার। 
রাত্রে গল্প-আড্ডা চলছে। হঠাৎই কথার মাঝে শরৎচন্দ্র বলে উঠলেন, ‘‘পথে কখন কী যে বিপদেআপদে পড়ি বলা তো যায় না, তাই জন্য সব সময় এটা সঙ্গে রাখি,’’ বলে সকলকে চমকে দিয়ে ফস করে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ছোরা বার করলেন তিনি। চকচকে। ধারালো।
সে দিনের সেই ঘটনাটি যে নি‌ছক মজা ছিল না, তার প্রমাণ মিলেছে এর পরেও। হেমেন্দ্রকুমার লিখছেন, ‘‘কয়েক বৎসর পরে তিনি (শরৎচন্দ্র) যখন রীতিমতো যশস্বী এবং যখন তিনি বিখ্যাত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিদিন উঠছেন বসছেন এবং পোশাকেও বেশ শৌখিন হয়ে উঠেছেন, তখনও তাঁর হাতে থাকত এক গাছা অত্যন্ত বেমানান, মোটাসোটা ভীতিকর লগুর (মুগুর), যার আঘাতে অনায়াসেই গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে মানুষের বা বড় বড় পশুর মাথা।’’
•••
মজার কথা হল, বোহেমিয়ান শরৎচন্দ্রের বেপরোয়া স্বভাবের সঙ্গে ভালমতো মিল ছিল হেমেন্দ্রকুমারেরও। সারা জীবনে কত যে ভয়ঙ্কর অভিযান করেছেন, বলার নয়।
ছোটদের অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির লেখক হেমেন্দ্রকুমার রায়ের সেই সব অভিযান কিন্তু মোটেই কিশোরসুলভ ছিল না। বরং রীতিমতো প্রাপ্তবয়স্ক।
রাতের পর রাত খুঁটিয়ে দেখেছেন কলকাতার বিখ্যাত সব গণিকাপল্লি। সোনাগাছি, রুপোগাছি, জয়া মিত্রর গলি, আপার চিৎপুর রোড, বউবাজার, কড়েয়া, হাড়কাটা, হরি-পদ্মিনীর গলি, শেঠবাগান, নতুন বাজার, মহেন্দ্র গোস্বামী লেন, জোড়াবাগান, মালি পাড়া…!
রাত জেগে জেগে টহল দিতেন, আর দেখে বেড়াতেন গণিকাদের হাবভাব, বাবুদের রকমসকম। শরীর ব্যবসার ধরনধারণ। বিচিত্র সে সব অভিজ্ঞতা। ভয়ানকও। ওঁর সঙ্গীসাথি, এমনকী সাহিত্যিক-বন্ধুরা ছিলেন ঠিক এমনটিই।
এক বারের কথা যেমন লিখছেন হেমেন্দ্রকুমার। তার বর্ণনাটা পড়লে টের পাওয়া যায়, হেমেন্দ্রকুমার ও তাঁর প্রাণের বন্ধুদের বিপজ্জনক সব ঘোরাফেরার কথা।
এক সাহিত্যিক বন্ধু দুই ইয়ারকে নিয়ে সন্ধে থেকে আকণ্ঠ পান করে রাতে বুঝলেন আর বাড়ি ফেরার উপায় নেই। সুতরাং রাতটা কাটাতে হবে কোনও ‘বুলবুলি’র ডেরায়। সবাই মিলে টলতে টলতে পল্লিতে ঢুকতেই দেখলেন একটি বাড়ির ছাদে এক মহিলা দাঁড়িয়ে। ইশারায় ভিতরে ডাকছে ওঁদের। গেলেন ওঁরা। মক্কেলদের ঘরে বসিয়ে সুন্দরী বলল, ‘‘আপনারা একটু বসুন, আমি আসছি এখনই,’’ বলেই দরজা বন্ধ করে  চলে গেল।
এ দিকে সময় যায়। অপেক্ষাই সার। মহিলা আর ফেরে না। ডাকাডাকি হল খানিক। সাড়া নেই কোনও।
দরজায় টান দিতে দেখা গেল বন্ধ। বাইরে থেকে। হঠাৎ খেয়াল হল, যে-ঘরে ওঁরা বন্দি, সেই ঘরেরই খাটে আপাদমস্তক চাদর মুড়িয়ে কে যেন শুয়ে। কে ও?
চাদর সরিয়ে দেখতে গিয়ে হিম হয়ে গেল শরীর। চাপ চাপ রক্ত। গলাকাটা একটা দেহ। মুহূর্তে নেশার খোয়াড়ি গেল কেটে। মাথাটা বন বন করে ঘুরতে লাগল সবারই।
হঠাৎই মনে হল, মেয়েটা নির্ঘাৎ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওঁদের ফাঁসাবে। তাই হয়তো পুলিশ ডাকতে গিয়েছে।
পালাতে হবে। কিন্তু কী ভাবে?
ঘরের পিছন দিকে একটা দরজা ছিল। অনেক কষ্টে সেটি খোলা গেল। ও দিকে বারান্দা। তার পর অন্য বাড়ির ছাদ। বারান্দা থেকে এক ঝাঁপ সেই ছাদে। একে একে সবাই। বেশ কয়েকটা বাড়ির ছাদ টপকে তবে রাস্তা। গলিতে হাঁটতে হাঁটতে ওঁরা দেখলেন, কয়েকটা হোমড়াচোমড়া পাহারাদার, ওই বাড়ির দিকেই চলেছে।
আর একটু হলেই …
•••
বিপজ্জনক এমন সব ঝুঁকি নিয়েই জীবন দে‌খে বেড়িয়েছেন সাহিত্যিক হেমেন্দ্রকুমার রায় ও তাঁর দলবল।
হঠাৎ এক বার খবর পেলেন কলকাতায় ভিখিরিদের রগরগে মজলিশ বসে কোনও কোনও ডেরায়। গোপনে। অমনি রোখ চেপে গেল সে-মজলিশ দেখতেই হবে।
রোজ এক ভিক্ষুক আসত বাড়িতে। সকলে তাকে ডাকত পাগলা।
তাকেই ধরলেন হেমেন্দ্র, ‘‘আমাকে তোদের আড্ডায় নিয়ে যাবি?’’
সে তো শুনেই ঘাবড়ে গেল। অমন আড্ডায় ভদ্দরলোক কেউ যায় নাকি! এ বাবু বলে কী! অনেক বোঝাতে তবে পাগলা রাজি হল।
রাতে ভিখিরি-পট্টিতে ঢুকলেন হেমেন্দ্রকুমার। মজলিশ তখন তুঙ্গে। রসেবশে জমে উঠেছে আশনাই।
তার মাঝেই সাফসুতরো ‘ভদ্দরলোক’-কে ঢুকতে দেখে ওরা ভাবল পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে যত বেলেল্লাপনা, নেশাভাঙ মাথায় উঠল। দুদ্দাড় করে পালাতে ব্যস্ত হল সবাই। শেষে পাগলা চিৎকার করে আটকালো ওদের, ‘‘ওরে আমার চেনা নোক রে, আমাদের ফুর্তি দেখতে এয়েচে। পালাসনি।’’
সেই শুনে ফিরল ওরা। তার পর সারা রাত ওদের সঙ্গে বসে বসে নেশা, গান, নাচ!
•••
শ্মশানে শ্মশানে রাত কাটিয়েছেন ঢের। রাতের শ্মশানে সে-এক অন্য ছবি। নিভন্ত চিতায় ভাতের হাঁড়ি চড়ায় ডোমের বউ। শোকার্তের কান্নার পাশেই মদ-গাঁজার ঠেক। গণিকারাও আসে। শরীর দিয়ে, টাকা বুঝে নিয়ে ফিরে যায়। হেমেন্দ্র এ সব দেখে বেড়াতেন। আর গল্পের আকরে ডুব দিয়ে ভরে নিতেন মনের ঝুলি।
নিমতলা শ্মশানে এক বার আলাপ হল একজনের সঙ্গে। হাজারের ওপর মড়া পোড়ানো হয়ে গিয়েছে তাঁর।
ডোম নয়, কোনও এক পাড়ার সাধারণ বাসিন্দা। তাঁর কাছে বসে এক বার রাতবিরেতে যে গল্প শুনেছিলেন, তা কোনও দিনই ভুলতে পারেননি হেমেন্দ্রকুমার।—
ভদ্রলোক বলেছিলেন, শ্মশানযাত্রী হিসাবে তখন তাঁর খুব নামডাক। একদিন ইয়ার দোস্তদের নিয়ে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ঘটনাটি ঘটল তখনই।
এক বৃদ্ধ এসে বললেন, এ এলাকায় তিনি নতুন। একটু আগে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। দাহ করার কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। বড় বিপদে পড়েছেন। যদি কিছু সাহায্য করা যায়!
শোনামাত্র সেই দাহ-বিশেষজ্ঞ লোকটি বন্ধুদের নিয়ে চললেন সেই বৃদ্ধের বাড়ি। গিয়ে দেখলেন, যেমন তেমন বাড়ি নয়, হাঁ করে গিলতে আসা কোনও হাওদাখানা যেন!
জনপ্রাণীর সাড়া নেই। ঘরে টিমটিমে একটা প্রদীপ। তারই আলোয় চোখে পড়ল, দড়ির খাটে চাদরে ঢাকা মড়া।
খাট বার করে শ্মশানের পথে হাঁটা দিলেন ওঁরা।
একটু পরেই খেয়াল হল, আরে সেই বুড়ো গেলেন কই? এ পাশ ও পাশ নজর করে কোত্থাও চোখে পড়ল না তাঁকে। তার ঠিক পরেই বিপদ যেন হামলে পড়ল ওঁদের ঘাড়ে। সবাই দেখলেন, মড়া জড়ানো চাদর চুঁইয়ে ভেজা ভেজা কী যেন গায়ে পড়ছে! অন্ধকারে ঠাহর হয় না।
আলোয় এসে দাঁড়াতেই শিউরে উঠলেন সবাই— এ তো রক্ত! পরক্ষণেই সবার মনে হল, নির্ঘাত ওই বুড়ো স্ত্রীলোকটিকে খুন করে চাদরে ঢাকা দিয়ে রেখে দিয়েছিল। লাশ সরাতে না পেরে এই ফন্দি। তাল বুঝে ওঁদের ফাঁসিয়ে বুড়ো বেপাত্তা।
এ দিকে রাস্তায় মড়া নামিয়ে রেখে পালানোরও তো উপায় নেই। সামনেই পাহারাদার টহল দিচ্ছে। পালাতে গেলে ধরে ফেলবে। কাজেই সেই ‘খুন’ হওয়া মড়া কাঁধে হাঁটতে হাঁটতে পাহারাদারকে পেরিয়ে কোনও মতে শ্মশানে ফেলে সবাই মিলে ঝাঁপ গঙ্গায়। সাঁতরাতে সাঁতরাতে অন্য ঘাট। তার পর  দলবল নিয়ে সেই বুড়োর বাড়ি। এ বার গিয়ে দেখা গেল বাড়ি খালি। কেউ নেই। পুরো শুনশান।
•••
সেই সময় মেছুয়া বাজার ছিল তাবড় গুন্ডাদের আড্ডাখানা। প্রায় প্রতি রাত্রেই খুন জখম, ছিনতাই লেগেই থাকত। পুলিশও সামাল দিতে জেরবার।
হেমেন্দ্রকুমারের শখ হল সেই গুন্ডাদের ডেরায় যাবার। কিন্তু সে কী ভাবে সম্ভব? এক বন্ধুকে ধরলেন। সেই সব ঠেকে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার।
‘‘আমাকে একবার নিয়ে যেতেই হবে।’’
বন্ধু তো কিছুতেই রাজি হয় না। অনেক কাঠখড় পোড়াতে তবে সে কথা দিল। সে রাতেই ওই বন্ধুটিকে নিয়েই হেমেন্দ্রকুমার গেলেন মেছোপট্টির ঘিঞ্জি গলির একটি বাড়ির ছাদে।
কোনও আলো নেই কোত্থাও। রাতের আকাশটাই যা ভরসা। তার ঝিম ঝিম আলো-আঁধারিতেই হেমেন্দ্র বুঝতে পারলেন কম করে পনেরো-ষোলো জন বসে আছে সেখানে। মদের আসর জমেছে।
বন্ধুটি এদের পরিচিত। আর তার সঙ্গে এসেছে একটা লোক। ফলে কেউ কোনও ভ্রুক্ষেপই করল না হেমেন্দ্রকে।
সাততাড়াতাড়ি মদের পাত্র নিয়ে বসে পড়ল বন্ধুটি। তার কিছুক্ষণ পরেই এক কোণে শুরু হল হইচই। গোলমাল। হট্টগোল। ধাক্কাধাক্কি।
কয়েকজন মিলে জুয়ো খেলছিল ও দিকে। সেই খেলা নিয়েই তর্কাতর্কি। শুরু হল গালিগালাজ দিয়ে। অল্প বাদেই ছুরি-ভোজালি।
ছাদের সব লোক মিলে ওই অন্ধকারেই দুই দলে ভাগ হয়ে খুনোখুনি শুরু করে দিল। আর এক মুহূর্তও নয় এখানে, ভেবে হেমেন্দ্র সিঁড়ির দিকে দৌড়ে যেতেই নিচ থেকে কারা যেন বলে উঠল— ‘পুলিশ পুলিশ পুলিশ এসেছে।’
এবার? নীচে নামলে পুলিশে ধরবে। ওপরে থাকলে ছোরাছুরিতে প্রাণ যাবে। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে সেই বন্ধুটি এসে তাঁর হাত ধরে মারল এক টান। সোজা নিয়ে গেল ছাদের এক কোণে। বলল, ‘‘দে লাফ,’’ বলে কালক্ষেপ না করে সে একলাফে হাওয়া। কোথায় পড়ল সে লাফ দিয়ে? আর ভাবার সুযোগ নেই। সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাড় করে পুলিশ উঠে আসছে। যা আছে কপালে। চোখ বুজে ছাদ থেকে অন্ধকারে লাফ দিলেন হেমেন্দ্রকুমার। পড়লেন গিয়ে মেছোবাজার স্ট্রিটের ওপর। তারপরেই দৌড়। দৌড় দৌড় দৌড়। কোনও ক্রমে সে যাত্রায় পালিয়ে রক্ষা পেলেন তিনি।
•••
আরেক বারের ঘটনা।
রাত তিনটের সময় এক সাহিত্যিক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরছেন জোড়াবাগান এলাকায়।
কানে এল গানবাজনার শব্দ। ব্যাপার কী? সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখেন গলির শেষে খোলা জমিতে শামিয়ানা খাটিয়ে তেড়ে বাইজি-আসর বসেছে। গানপ্রিয় হেমেন্দ্রকুমার ঈষৎ থামলেন। তার পর গানের কলি কানে ধরতেই যেন মজে গেলেন— ‘আমার ভালবাসা আবার কোথায় বাসা বেঁধেচে/ পিরিতের পরোটা খেয়ে মোটা হয়েচে।/মাসে মাসে বাড়ছে ভাড়া,/বাড়িউলি দিচ্ছে তাড়া,/ গয়লা পাড়ার ময়লা ছোঁড়া প্রাণে মেরেচে’।
গানের মাঝেমাঝেই ধুয়ো উঠছে—কেয়া বাত, কেয়া বাত।
কিন্তু শ্রোতাদের দিকে নজর ফেলতেই চক্ষু চড়কগাছ! কলকাতার নামকরা খুনে-গুন্ডা ওদের এক-একজন। তাদের মুখগুলো কোনও কোনও সময় কুস্থানে গিয়ে দেখা।
এরা দিনের বেলায় কেউ গাড়োয়ানি করে, কেউ গরুর আস্তানার মালিক, কেউ মুটে। আর রাত হলেই ছিনতাই। ডাকাতি। খুন। এরাই আজ মেহফিল বসিয়েছে! তাক লেগে গেল হেমেন্দ্রর। বন্ধুকে বললেন, ‘‘চল, বসে পড়ি। গান শুনি।’’
বন্ধুটিও চিনেছে ওদের। হেমেন্দ্রর কথায় আঁতকে উঠল সে, ‘‘এদের মধ্যে বসে কেউ গান শোনে?’’
‘‘কেন নয়? এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে!’’
হেমেন্দ্রর নাছোড় জেদের কাছে বন্ধুটি অসহায়। শেষে বাঁশের বেড়া টপকে ওঁরা বসে পড়লেন মজলিশি আসরে।
সবাই দেখল। কিন্তু বলল না কিছুই। উলটে ভাল করে যাতে বসতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দিল।
ভোর রাত পর্যন্ত চলল বাইজি গান। গান শেষে উঠে আসছেন যখন, তখন চেপে ধরল গুন্ডা-শ্রোতাদের দলবল, ‘‘বাবুরা এসেছেন যখন, খালি মুখে ফিরলে চলে! কিছু খেয়ে যেতেই হবে।’’
এর পর রীতিমতো জামাই আদর! পোলাও মাংস দিয়ে পাত সাজিয়ে। কোনও ক্রমে বুঝিয়ে-টুঝিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া গেল।
হেমেন্দ্রকুমার তাঁর এই সব বিচিত্র কাহিনি জুড়ে জুড়ে বইও লিখেছেন পরে। তবে সে ছদ্মনামে। এ বার নাম নিয়েছিলেন মেঘনাদ গুপ্ত। ভয় ছিল, নিজের নামে বই ছাপালে যদি তাঁদের অভিযানের খবর চাউড় হয়ে যায়, তো ভারী মুশকিল। ফলে ছাপার সময় প্রকাশক ছাড়া লেখকের আসল পরিচয় গুপ্তই রেখেছিলেন তিনি।
•••
দিনের পর দিন লেখাও চলেছে। আবার অভিযানও বন্ধ হয়নি। আর সাহসী, বাউন্ডুলে মনটাকে বাক্সবন্দি রেখে হেমেন্দ্রকুমার একের পর এক অভিজ্ঞতা কুড়িয়েছেন প্রায় সারাটা জীবন ধরে।
এই সাহসই এক বার তাঁকে গিরিশ ঘোষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। সে আরেক কাহিনি!
বয়স তখন অল্প। লেখক হিসাবে কেউ চেনে না তখন। ‘রানী দুর্গাবতী’ নামের একটি নাটক লিখে ফেললেন।
ছিলেন গিরিশ ঘোষের অন্ধ ভক্ত। খুব ইচ্ছে, নটসম্রাটের কাছে সরাসরি হাজির হয়ে নাটকটি শোনাবেন।
ভাবামাত্র কাজ। পৌঁছে গেলেন বাগবাজারে তাঁর বাড়ি। বাইশ বোতল বিয়ার খেয়েও কুপোকাৎ না হওয়া গিরিশবাবু তখন বৈঠকখানার ঘরে। আদুলগায়ে ফরাসে আধশোয়া। তামাক খাচ্ছেন। সেই ছিল দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ।
হেমেন্দ্রকে দেখে নামধাম জিজ্ঞাসা করে গিরিশ ঘোষ বললেন, ‘‘কী দরকার বাবা?’’
হেমেন্দ্র চুপ। কাঁধের ঝোলায় নাটকের পাণ্ডুলিপি খসখস করছে। কী করে বলবেন বুঝে পাচ্ছেন না!
সেই সময় আরও এক যুবক এলেন। তাঁকেও গিরিশ ঘোষ একই প্রশ্ন করলেন।
যুবকটি উত্তর দিলেন, ‘‘আজ্ঞে একটি নাটক লিখেছি। আপনাকে শোনাতে চাই।’’
‘‘বেশ পড়ো, কিছুটা শুনি।’’
খানিকটা শোনার পরেই গিরিশ্চন্দ্র বলে উঠলেন, ‘‘বাবা, নাটক রচনা করার আগে সাংসারিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়। এখনও তোমার সে-বয়েস হয়নি। আমি নিজেও ত্রিশ বছর বয়েসের আগে মৌলিক নাটক লেখায় হাত দিইনি।’’
শুনে যুবকটি ব্যাজার মুখ করে চলে গেলেন।
তারপর হেমেন্দ্রকুমারও প্রণাম করে বিদায় নিতে যাচ্ছেন দেখে গিরিশবাবু বললেন, ‘‘তুমি কী কারণে এসেছিলে বললে না তো?’’
‘‘আজ্ঞে এসেছিলুম আপনার উপদেশ নিতে। সেই উপদেশ পেয়ে গেছি। সংসারে অভিজ্ঞতা না জন্মালে আমিও আর নাটক লিখব না।’’
এর বহু কাল পরের ঘটনা।
হেমেন্দ্রকুমারের তখন সাহিত্যিক হিসাবে বেশ নামধাম। এক রঙ্গমঞ্চে আবার দেখা গিরিশবাবুর সঙ্গে।
গিরিশবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এখন নাটকটাটক লিখছ নাকি?’’
হেমেন্দ্রকুমারের উত্তর, ‘‘এখনও আপনার নির্দেশ মেনে চলছি। আমার ত্রিশ বছর বয়স হয়নি।’’
গিরিশচন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সেই উপদেশ কোনও দিনই লঙ্ঘন করেননি হেমেন্দ্রকুমার।
•••
যেমন ভাল ছবি আঁকতেন, তেমন কবিতাও লিখতেন হেমেন্দ্রকুমার। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে ছবি আঁকা শিখেছিলেন বেশ কয়েক বছর। অবনঠাকুরের খুবই স্নেহধন্য ছিলেন।
কবিতাও লিখেছেন অনেক। কম করে শ’দেড়েক। কিন্তু কয়েকটি প্রকাশ করার পর নিজের হঠাৎ মনে হয়, ভাল হয়নি। অপ্রকাশিত কবিতাগুলোকে রেখে দিয়েছিলেন দেরাজে।
সেগুলিরই বা কী হল?
শোনা যাক হেমেন্দ্রকুমারের নিজের জবানিতেই, ‘‘মমতাবশত নিজের হাতের কাজকে সেদিন পর্যন্ত নষ্ট করতে পারিনি। আমি পারিনি, কিন্তু আমার কনিষ্ঠ পুত্র পেরেছে। কবিতালেখা কাগজগুলো জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছে উনুনের ভিতরে।’’
শুধু কবিতা-আঁকাজোকা নয়, গানও লিখেছেন বিস্তর।
১৯৩২ সালে শচীনদেব বর্মনের প্রথম যে রেকর্ড বেরয় তার একটি গান ওঁর লেখা—‘ডাকলে কোকিল রোজ বিহানে’। লিখেছেন কৃষ্ণচন্দ্র দে’রও বহু বিখ্যাত গান—‘অন্ধকারের অন্তরেতে’, ‘ধরার মেয়ে ধরার মেয়ে’, ‘চোখের জলের মন ভিজিয়ে’…।
তাঁর লেখা গানে সুর দিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম, শচিনকর্তা, হিমাংশু দত্ত, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীতকার। শিশির ভাদুড়ীর বিখ্যাত নাটক ‘সীতা’য় তিনিই ছিলেন গীতিকার, নৃত্য নির্দেশক।
‘সুরলেখা’ নামে একটি গানের বইও প্রকাশ করেছিলেন হেমেন্দ্রকুমার।
বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘‘গান লিখেছি প্রায় চারশোর কাছাকাছি। এও দেখছি আমার অনেক গান বাজারে চলছে। এবং লোকে তার কোনও কোনওটির রচয়িতা বলে অন্যের নাম করে এবং কোনওটির রচয়িতা যে কে, তা কেউ জানে না। আবার আমার অনেক গানের কথা লোকের মুখে মুখে ফিরে ছন্দ ভঙ্গ তো করে বটেই সেই সঙ্গে রূপবদলে উলটো অর্থতেও প্রকাশ করে। এইসব নানা কারণেই এই গানের বইখানা প্রকাশ করলুম। যদি আমার প্রথম গানের এই বইখানি পোকায় না কাটে তবে ক্রমে ক্রমে অন্য গানগুলিও প্রকাশ করব।’’
না, তাঁর আর কোনও গানের বই বেরোয়নি। আজ আর তাঁর সব গানের কথা জানাও যায় না। 
•••
গিরিশচন্দ্র ঘোষের কথায় এক সময় নাটক লেখায় ক্ষান্ত দিয়েছিলেন। এর পর যখন নাটক লিখলেন তখনকার একটি ঘটনা আরেক হেমেন্দ্রকুমারকে চেনায়।
একটি নাটক লিখে বন্ধুদের শোনালেন। সকলে উচ্ছ্বসিত!  প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় সেই নাটকের পাণ্ডুলিপি নিয়ে গেলেন। কর্নওয়ালিশ থিয়েটারের জন্য মনোনীত হল সে-নাটক। সে সময়ের নিরিখে এ ঘটনা বিশাল সম্মানের।
দিন যায়। মহলা শুরু হবে প্রায়। তখনই একদিন প্রখ্যাত নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ ডেকে পাঠালেন হেমেন্দ্রকে। বললেন, ‘‘হেমেন্দ্রবাবু, আমার মতো বুড়ো নাট্যকার আর ওরা চায় না, তাই আপনার নাটক নিয়েছে।’’
বৃদ্ধ নাট্যকারের কাতর মুখ দেখে মায়া হল হেমেন্দ্রর। বললেন, ‘‘ছি ছি আপনার সঙ্গে আমার তুলনা! আমি তো নাট্যকারই নই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন ওই নাটক মঞ্চস্থ হবে না।’’
বুক ঠুকে তুলে নিলেন পাণ্ডুলিপি।  কোথাও মঞ্চস্থ হল না সে-নাটক।
এ হলেন আরেক হেমেন্দ্রকুমার রায়!
অভিযান-প্রিয়তার সমান্তরালে থাকা উদার, সহমর্মী, পরার্থপর। অসীম শ্রদ্ধাশীল।
ক’জনই আর খোঁজ রেখেছে তার!

ঋণ: ‘যাদের দেখেছি’, ‘রাতের কলকাতা’, ‘চেনা-অচেনা হেমেন্দ্রকুমার’, ‘ভাটি গাঙ বাইয়া’, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/special-write-up-by-binod-ghoshal-on-hemendra-kumar-roy-in-patrika-1.278992