লেখক, ১৯৭৫
প্রত্যেকটা জীবনই সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত ধারাবাহিক উপন্যাস।
হঠাৎ একদিন ছাপা শুরু হয়ে যায়। তার পর সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, কখনও বা বছর ধরে চেনা-জানা চরিত্রদের কী হবে তা ঈশ্বরও জানেন না, যাঁর জানবার কথা সেই লেখকও অনেক সময় জানেন না, জানলেও মুখ খোলেন না।
বিশ শতকের মধ্যপর্বে, বাংলা কথাসাহিত্যের সুবর্ণ যুগে স্মরণীয় সাহিত্য-চরিত্রদের কী পরিণতি হতে চলেছে, তা নিয়ে ঘরে ঘরে বিশেষ উত্তেজনা।
এই সময়েই অন্দর মহলে প্রবেশ করে আমি কোনও এক সময়ে এই ধারাবাহিক উত্তেজনার অংশ হয়ে পড়েছি, এই মহাউদ্যমের স্রষ্টা এবং অংশীদারদের খুব কাছ থেকে দেখার দুর্লভ সুযোগও পেয়ে গিয়েছি।
শুধু যা বুঝতে পারিনি, সাহিত্যের রান্নাঘরে এমন ভাবে প্রবেশের সুযোগ কম স্বদেশবাসীই পেয়ে থাকেন। এই বিষয়ে কাউকে খুব খুঁটিয়ে প্রশ্ন করার সাহসও মাথায় আসেনি।
মাতৃমুখে শুনেছি, যাঁরা প্রাণ তুচ্ছ করে বাংলায় ধারাবাহিক লেখার দুঃসাহস দেখান, তাঁরা সব ‘ম্যাজিশিয়ান পি সি সোরকার’। কী করে কী হয় তা তাঁরা মুখ খুলে কাউকে না-বলতে খোদ সম্পাদকের কাছে দায়বদ্ধ।
খোদ সম্পাদকদের মাথার মণি তৎকালীন ‘দেশ’ পত্রিকার সাগরময় ঘোষ সবজান্তা হয়েও একটা বেপরোয়া ভাব নিয়ে চলতেন।
বলতেন, ‘‘আমার কোনও চিন্তা নেই, আমার ব্যবসা স্টেজ ভাড়া দেওয়া, কে কী রকম গাইবে, বাজাবে, নাচবে সে আর্টিস্ট বুঝবে। আদর হলে সে-ই পাবে। আর পাবলিকের মনে না ধরলে কেউ ভবিষ্যতে তার নাম মুখে আনবে না। রিটায়ার্ড আর্টিস্টকে রি-এমপ্লয় করা আমার ব্যবসা নয়, আমাকে সারা ক্ষণ নতুন লেখককে খুঁজে বার করতে হবে।’’
‘‘আর স্টেজে খুব নাম হলে?’’
‘‘আমি তাকে আবার তাতাব, জিজ্ঞেস করব আবার কবে শুরু করবেন? মাতৃগর্ভে অন্তত দশ মাস দশ দিন তো সৃষ্টিকে রাখতে হবে! কিন্তু মুশকিল হল, সাফল্য এলে অনেকের পক্ষেই মাথা ঠিক রাখা শক্ত হয়, আমি তাই মধ্যপথের পথিক হয়ে একজন সফল লেখকের সঙ্গে আরেক জন ‘ভার্জিন আর্টিস্ট’কে একই সঙ্গে এই সাপ্তাহিক যজ্ঞের আসনে বসিয়ে দিতে চাই। আমার দায়িত্ব বেড়ে যায়। লোকে নিন্দা করতে চায় যে আমি শিল্পী নির্বাচনে বেস্ট লোক নই।’’
প্রেমেন্দ্র মিত্র
‘‘তবু আপনি নতুন লোক খুঁজে বেড়ান যাতে দেশের এবং দশের শ্রীবৃদ্ধি ব্যাহত না হয়।’’
সে ছয় দশক আগেকার কথা।
প্রথম বইয়ের কয়েকটা কিস্তি লিখে ভাগ্যক্রমে চিৎপুরে আনন্দবাজারের অফিসে প্রায় অবিশ্বাস্য পথে সাগরময়ের ‘ভার্জিন সিলেকশনে’ পড়ে গিয়েছিলাম।
কয়েকটা কিস্তি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে হাতে ফল। উকিলের মুহুরি বা ব্যারিস্টারের ‘বাবু’ থেকে বাঙালি সাহিত্যিক।
সাগরময় বন্ধুমহলে বলতেন, ‘‘আইসিএস-এমএ গোল্ড মেডালিস্ট-ঈশান স্কলার থেকে নন ম্যাট্রিক বেকার বাঙালি পর্যন্ত সব এক। সাপ্তাহিক কিস্তিতে পত্রিকার পাঠক এবং পাঠিকাদের মন জয় করতে পারলে ‘সেভেন মার্ডারস’ অর্থাৎ সাতখুন পর্যন্ত মাপ, অথবা জামিনযোগ্য অ্যাক্টিভিটি।’’
চিৎপুরের বিখ্যাত ফলপট্টিতে তখন সাহিত্য-পত্রিকার অফিস।
দুর্জনরা বলত, ওখানকার স্পেকুলেশনটাই শিখেছিলেন গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে বড় হয়ে-ওঠা সাগরময়।
ধারাবাহিকের ক্যান্ডিডেট নির্বাচন করেই সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে যেতেন সাগরময়। বলতেন, ‘‘ক্যান্ডিডেটকে প্রত্যেক সপ্তাহে বাঁচিয়ে রাখাটাই আমার কাজ। যত ক্ষণ না লেখার শেষে ছোট্ট করে ঘোষণা করতে পারি ‘আগামী সংখ্যায় সমাপ্য’।’’
‘‘তার মানে, ঘোষণার পরের সংখ্যায় শেষ যে-কিস্তিটা বেরুবে সে সম্বন্ধে আপনার কোনও মাথাব্যথা নেই।’’
‘‘মোটেও তা নয়। ওই পর্বটা হাতে না-পাওয়া পর্যন্ত তো ‘সমাপ্য’ ঘোষণাটা ঘোষিত হচ্ছে না! আমার টাইটেলটাও তো ঘোষ!’’
‘‘আপনি একটা ডেঞ্জারাস কথা বললেন—‘প্রত্যেক সপ্তাহে’ বাঁচিয়ে রাখা। একবার মারা গেলে কোনও লেখকই তো বেঁচে উঠবেন না!’’
‘‘কী বাজে কথা বলছ! জন্ম থেকেই তো শান্তিনিকেতনে শুনছি একমাত্র লেখকরাই অমর হতে পারেন! ওখানে যারা ঘর ঝাঁট দেয় তারাও জানে মরার পরেও লেখকদের পাঠককুল বাড়তে থাকে। তবে আমার ভাগ্য ভাল, শেষ কিস্তি সাপ্লাই না করে দুম করে মরে যাওয়ার তেমন কোনও কেস আমার জীবনে নেই। সমস্যা হল বেঁচে থেকেও কিস্তিবন্দি লেখকদের মরে যাওয়া।’’
তরুণ একজন সাংবাদিক বললেন, ‘‘এই জন্যেই বিলেতে প্রশিক্ষিত অনেক নিউ এজ সাংবাদিক চান পুরো পাণ্ডুলিপিটা সেফ কাস্টডিতে নেওয়া, তার পর হপ্তায় হপ্তায় ছেপে যাবে।’’
এই কথা শুনে ওয়ার্ল্ডের সেরা সম্পাদক বলেছিলেন, তা হলে সেটা কী করে ‘ধারাবাহিক’ হল? ওটা তো ডিপ ফ্রিজে দেড় বছর রেখে দেওয়া মাংস!
তার পর তাঁর আরও ব্যাখ্যা—ধারাবাহিক অত সহজ নয়, প্রিয়জনদের সামনে বসিয়ে তোলা উনুনে এক একটা রুটি সেঁকে দেওয়া সাহিত্য-রন্ধনকে অন্য একটি স্তরে নিয়ে যায়।
উনুনে সেঁকতে সেঁকতে পাকা রাঁধুনি কখনও একটু কম ফুলিয়ে, কখনও একটু বেশি ফুলিয়ে, কখনও একটু বেশি পুড়িয়ে, কখনও একটু কম পুড়িয়ে, পাতে পাতে হপ্তায় হপ্তায় ছুড়ে দেন।
বিজ্ঞাপন লাইনে এর নাম ‘ফিডব্যাক’, যা রাঁধুনি চোখে দেখেন এবং কানে শোনেন।
তার পর সেই অনুযায়ী প্রত্যেক সপ্তাহের রান্না করেন। আরও শুনতাম, ঐতিহাসিক ভাবে সফল কিস্তিবন্দি লেখকদের ফরমুলা হল, পাতে একটা, সম্পাদকের হাতে একটা এবং লেখকের লাইনটানা প্যাডে আর একটা।
আরও শুনতাম নানা দুঃসাহসের কথা, এ কালের কালজয়ী সব কথাসাহিত্যের কথা, শতশত পৃষ্ঠার অনন্য সব সৃষ্টি, যা অর্ধশতাব্দী পরেও দেশবিদেশের রুদ্ধশ্বাস পাঠক-পাঠিকারা আজও পড়ছেন। কিন্তু তার পিছনে লেখকের এক পৃষ্ঠার ওয়ার্কিং পেপার নেই।
এঁদেরই অন্যতম এক কালজয়ী লেখক বলতেন, ‘‘নোটবইফই ওসব গবেষকদের স্বভাব। যাঁরা কেবল অপরের উদ্ধৃতি সংগ্রহ করেই প্রাণে বাঁচে, নতুন কোনও মন্তব্য তাঁদের ছাঁকনিতে থাকে না। ওটা অন্য ব্যাপার।’’
ভিতরে ভিতরে একাধিক ধরনের ধারাবাহিক-লেখকের বিবরণ লোকমুখে সার্কুলেশন হত।
বিমল মিত্র, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, মুজতবা আলী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র।
এঁদের এক এক জনের এক এক স্টাইল। আলীসায়েব বলতেন, লেখক অনুযায়ী ধারাবাহিকের ধর্মও আলাদা। কারও কারও প্রত্যেকটা কিস্তিই স্বপরিপূর্ণ, পাঠকের যা প্রাপ্য তা প্রতিবারই নগদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং হঠাৎ কিস্তি বাধাপ্রাপ্ত হলে সম্পাদকের বা বিশ্বসংসারের কিছু এসে যাচ্ছে না।
এই ভাবেই মুজতবা আলী অথবা শিব্রাম চক্রবর্তীর কিছু কালজয়ী রচনা আমরা পেয়েছি।
উল্টো দিকে শিব্রাম চক্রবর্তী বলতেন, ‘‘কেউ কেউ ফুলের বাগানে বা সব্জির খেতে এসেছে। প্রত্যেক সপ্তাহে যা পছন্দ, তা পটাপট ঝুড়িতে বা সাজিতে তুলে দায় সেরে নিচ্ছে। কেবল লেখকই হিসেব করে নিয়েছেন, একদিন এই সব ফুল দিয়ে কী ধরনের মালা গাঁথা হবে, অথবা সমস্ত সব্জি থেকে কোন চচ্চড়ি বা ঘণ্ট শেষ পর্যন্ত কোন ভোজনে লাগবে।’’
সুরসিক শিব্রাম আরও বলতেন, ‘‘মেসের বিল মেটাবার জন্য যাঁরা দৈনিকে, সাপ্তাহিকে অথবা মাসিকে ‘কলাম’ চালিয়েছেন, তাঁরাই বিশেষ ভাবে জানেন, এই ধরনের ধারাবাহিকতা কত সহজ এবং কত কঠিন। কিন্তু মিত্তিরদের খপ্পরে পোড়ো না। ওরা খালে, নদীতে, সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরুবে, তাই বঁড়শি দরকার। ভাবছ, মাছ ধরবার জন্য। ওদের দুটো সেট বঁড়শি। একটা মাছকে টেনে তুলবার জন্য, আর একটা পাঠককে প্রতি হপ্তায় গেঁথে রাখার জন্যে। এই জন্যে ওরা অনেক ছকটক কেটে নেয়, প্রত্যেক কিস্তির কোথায় ‘ক্রমশ’ শব্দটি ছাপা হবে, তা এদের কাছে মস্ত ব্যাপার। পাঠককে ওরা কিছুতেই বঁড়শি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেবে না।’’
ধারাবাহিক সংক্রান্ত আরও কত মহামূল্যবান ‘টোটকা’ তখন যে শুনতাম তা ভাবলে দুঃখ হয়।
ঠিকমতন দ্বাদশ মহারথীর পলিসি তখন ঠিকঠাক ভাবে লিখে রাখলে যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে একটা সাম্মানিক ডক্টরেট দিয়ে দিতে পারত।
নবযুগের গুণমুগ্ধ পাঠক-পাঠিকারাও বাড়তি কিছু পেতেন মৃত লেখকদের জীবিত চরিত্রদের আচরণ থেকে, এবং বুঝতে পারতেন তেমন গল্প-উপন্যাস এখন কেন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। আকারে ঢাউস হয়েও প্রধান চরিত্রগুলো কেন চুনো মাছ মনে হচ্ছে, অথবা মনে হচ্ছে স্বদেশের খালবিলে এদের জন্ম নয়, অন্য দেশের গভীর সমুদ্র থেকে তুলে এনে ডিপ ফ্রিজে রেখে, এদেশে তাদের পুজো করা হচ্ছে।
সাহিত্যের সারস্বত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে একই সঙ্গে পেয়েছি ‘র্যাগিং’ বা নিপীড়ন।
এই দু’দলের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
ধারাবাহিক থেকে বই প্রকাশ হবার আগে দিল্লি থেকে সম্পাদককে অভিনন্দন এবং নবাগতকে সুস্বাগতম জানিয়েছিলেন আর একজন কিংবদন্তি সম্পাদক ও লেখক সন্তোষকুমার ঘোষ।
পরে আশীর্বাদ জুটেছিল ধারাবাহিকের নিয়মিত পাঠক অন্নদাশঙ্কর রায় (আইসিএস) মহাশয়ের কাছ থেকে, যিনি জানিয়েছিলেন, আপনার প্রথম সাফল্য যেন জীবনের শেষ সাফল্য না হয়।
এই আশীর্বাদ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা কিছু দিনের মধ্যে হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম।
মন্দিরপ্রাঙ্গণে তীর্থ দরশনে এলে যে বহু জনকে বারেবারে সম্মানিত করতে হয় তা আমার তেমন জানা ছিল না। এমনই একজন শক্তিমান আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন কোন প্রকাশককে আমি বইটা দেব এবং এ বিষয়ে মনস্থির করতে আমি একটু সময় ভিক্ষা করায় তিনি বেশ কয়েক বছর আমার সঙ্গে বাক্যবিনিময় করেননি। এবং কয়েক জন পার্ষদ আমার অঙ্গে ‘ওয়ান বুক অথর’-এর ছাপ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। উকিলের মুহুরি কোন সাহসে সরস্বতীর স্নেহধন্য হতে চায়?
এই সময় বাংলার বিশিষ্ট লেখকদের ভালবাসা অকাতরে পেয়ে অপ্রাপ্তির দুঃখ বুক থেকে মুছে গিয়েছিল।
মা বলতেন, ‘‘কার কাছ থেকে কী পেলে তা কখনও ভুলবে না। মনে রাখবে পাওয়াটা তোমার পাওনাগন্ডা নয়। তিনি আরও বলতেন, তোমার কত ভাগ্য, বিভূতি ভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মতন লেখকরা দ্বারভাঙা থেকে এসে তোমার বাড়ি খুঁজে আশীর্বাদ করে গেলেন, আমাকে বলে গেলেন, মা, একে দেখবেন যেন শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে লিখে যেতে পারে। লেখাটা বড় পরিশ্রমের এবং কষ্টসাপেক্ষ কাজ।’’
এই সময় ‘পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ’-র লেখকের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল।
বললেন, ‘‘ঠাকুরের আশীর্বাদ তোমার ওপর ঝরে পড়ুক। তারপর আমার শীর্ণ শরীরটার ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, এত কম বয়সে এ লাইনে কেন এলে ভাই? অনেক বছর তো টিকে থাকতে হবে! বড্ড কষ্টের কাজ।’’
আরও একজন ছিলেন যিনি সদাহাস্যময়। শিব্রাম চক্রবর্তী।
দেখা হলেই পকেট থেকে একটা লজেন্স অথবা একটু ‘রাবড়ি-চূর্ণ দিতেন, যা আসলে হরলিক্সের গুঁড়ো। বলতেন, ‘এটা সারাক্ষণ খাবে যাতে লেখা থেকে মিষ্টতা অদৃশ্য না হয়ে যায়।’
আরও বলতেন, সারাক্ষণ গোমড়া মুখে গল্পের প্লট ভাবলে বেস্টসেলার হওয়া যায়, কিন্তু বড় লেখক হওয়া যায় না। কাজিন-সিস্টারদের সঙ্গে নিয়মিত গল্পগুজব করা বিশেষ প্রয়োজন।
আরও একজন সদানন্দ সুরসিক লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তিনি তখনকার বিখ্যাত ‘অচলপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক।
হাওড়ায় আমাদের পড়শি বিজয়গুরুর কাছে আসতেন। একদিন বইপাড়ায় দেখা হল।
বললেন, উকিলের ছেলে এবং ব্যারিস্টারের বাবু হিসেবে খুব বুদ্ধিমানের লাইন বেছে ফেলেছ, প্রতি সপ্তাহে উকিলদের দুনিয়ায় কোন মামলায় জজরা কী জাজমেন্ট দিল তা ছাপা হয়ে যায়। প্লটের দুশ্চিন্তা তোমার থাকছে না। একের পর এক প্রকাশকের খরচায় ‘কত অজানারে’ ওয়ান’, ‘কত অজানারে টু’, ‘কত অজানারে’ ছেপে যাও।
এই কথা শুনে বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ধরে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন দীপ্তেনবাবু দ্রুতপদে এগিয়ে আসতে আসতে উঁচু গলায় বলছেন, একটু ভুল বলে ফেলেছি ভাই! কিছু পয়সা তোমাকে সঞ্চয় করতে হবে, কারণ এই মহাগ্রন্থের লাস্ট খণ্ডের লাস্ট ফরমাটটার খরচ তোমাকেই দিতে হবে, যাতে থাকবে তোমার সঙ্গে তোমার প্রকাশকের মামলার বর্ণানাটা।
এর আগে আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বইটার নাম দেওয়া হয়নি। প্রত্যেক সপ্তাহে প্রত্যেক পরিচ্ছেদের আলাদা আলাদা নাম। শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে প্রচ্ছদ শিল্পী অজিত গুপ্ত এবং নিউ এজ পাবলিশার্সের কর্ণধার জানকীনাথ সিংহরায়।
এক রবিবার জানকীবাবু আমাকে প্রেমেন্দ্র মিত্রের রবিবাসরীয় প্রভাত আড্ডায় নিয়ে গেলেন।
তিনিও বললেন, বড্ড বয়স কম। সভাসমিতিতে যেও না, লোকে ভুল বুঝবে। জানকীবাবু বললেন, বিভিন্ন দেবতার তেজে যেমন দেবী চণ্ডীর সৃষ্টি হয়েছিল, এরও তাই। অনেকে নানা রকম সিক্রেট শেয়ার করছে। রূপদর্শী ওর ফার্স্ট বইয়ের ফার্স্ট লাইনটা লিখে দিয়েছে। ওঁর সাজেশন : ‘এর নাম হাইকোর্ট’। ওটাই বইয়ের নাম হোক, কিন্তু লেখকের অনিচ্ছা। কেউ বলছে, নাম হোক ‘কালো গাউন’। কিন্তু এতে আমার আপত্তি। লোকে রহস্যকাহিনি ভাববে। বিয়েতে একদম যাবে না। এখন আপনিই ভরসা। ও শুনেছে আপনিই এখন নামের রাজা।
প্রেমেন্দ্র মিত্র মোটেই বিরক্ত হলেন না। একজন কমবয়সি ও অনভিজ্ঞ লেখককে বিপন্মুক্ত করাটা যেন তাঁরই দায়িত্ব, তা মেনে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে জাজমেন্ট দিলেন, নাম তো রবিঠাকুরই দিয়ে গিয়েছেন— ডিটেক্টিভ গল্প নয়, উকিলের গল্প হয়েও তা নয়, মানবজীবনের অজানা রহস্যের ওপর এক কুমার কিশোরের আলোকপাত, অতএব, ‘কত অজানারে’।
আরও একটু ভেবে বললেন, অনেক দিন পরে বাংলা উপন্যাসে প্রধান চরিত্র এক বিদেশি। মানুষ বুঝবে রবীন্দ্র-কবিতাটির তাৎপর্য : ‘ঘরকে করিলে নিকটবন্ধু, দূরকে করিলে ঠাঁই।’
নামের মধ্যে না থেকেও ওই ব্যাপারটা অদৃশ্যভাবে উপস্থিত রয়েছে। ওইটাই জুনিয়র লেখককে সিনিয়র লেখকের বোনাস।
প্রেমেন্দ্র মিত্র আরও বোনাস দিয়েছেন এই লেখককে। রেলের চাকরিতে দরখাস্ত করতে পারছিলাম না।
প্রেমেন্দ্র মিত্র আমাকে ডেকে নিজের হাতে একটা অবিস্মরণীয় সার্টিফিকেট দিলেন। আর একবার দিল্লি ওয়ার্লড বুক ফেয়ারে বঙ্গীয় লেখকদের ডেলিগেশন লিডার হিসেবে তিনি বললেন, এই লেখকটির ওপর নজর রাখবেন, কঠিন বিষয়কে নিতান্ত সহজ করে বলার দুর্লভ ক্ষমতা ও আয়ত্তে এনেছে।
সভার শেষে বললাম, এ সব কী বললেন আপনি!
উনি হেসে বললেন, ওইটাই তো সব লেখকের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই জন্যেই তো শঙ্করাচার্যকে সরিয়ে রেখে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে মানুষের এত মাতামাতি। এ সব আলাপ-আলোচনা পরে হবে। এখন চুপি চুপি আমাদের দু’জনকে যেতে হবে দোর্দণ্ডপ্রতাপ এক মন্ত্রীর বাড়িতে, ছেলের চাকরিতে ট্রান্সফারের প্রচেষ্টায়।
সে অন্য এক গল্প, পরে বলা যাবে।
আমার মুশকিল হল, কোনও ব্যাপারেই কোথাও আমি একলা যেতে পারি না। নিন্দুকরা বলে, আমি যে সব পুরস্কার পেয়েছি তার যোগ্য আমি নই। কিন্তু এমনই আমার জনসংযোগ যে ‘লীলা পুরস্কার’ ছাড়া আর কোনও পুরস্কারই আমার অপ্রাপ্য রইল না।
কলকাতার এই পুরস্কারটি মহিলা সাহিত্যিকদের জন্য এবং কয়েক জন হিংসুটে সাহিত্যিক ওই নামের একজন বিখ্যাত লেখিকার সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের প্রতি তির্যক মন্তব্য করতেন।
কিন্তু প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন সব অর্থে পরোপকারী বন্ধু। দিল্লিতে মন্ত্রী-সাক্ষাতে যেতে যেতে দুঃখ করেছিলেন, চাকরি-চাকরি করতে করতেই আমাদের জীবনটা গেল। একবার আমি ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম, সেই সময় আমার বন্ধু শিব্রাম আমার হয়ে অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমি ফেরবার আগেই ইন্টারভিউ লেটার এসে গিয়েছিল। শিব্রাম টেলিগ্রাম করেছিল, কিন্তু আমি নির্ধারিত দিনে ফিরতে না-পারায় দুঃসাহসী শিব্রাম নিজেই ইন্টারভিউ দিয়ে এল এবং প্রেমেন্দ্র নিত্রের চাকরি হয়ে গেল। ফিরে এসে চাকরিতে জয়েন করে এলাম।
লেখকদের মধ্যে এমন ভালবাসা একসময় সম্ভব ছিল।
তারপর দুঃখ করলেন, এখন যা সব শুনি তা বিশ্বাসই হয় না। তিনি বলতে চাইলেন, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের খালের ওপারে সমকালের আর এক দিকপাল সাহিত্যিকের কথা। খালপাড়ে চেতলায় বিমল মিত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় নিবিড়। আর কোনও সাহিত্যসাধকের সঙ্গে এমন নিবিড় সখ্য আর হয়নি। কত সময় যে একসঙ্গে ব্যয় করেছি তার হিসেব নেই। সাহিত্যই ওঁর ধ্যানজ্ঞান। সাহিত্য, সাহিত্যিক এবং পাঠক-মানসিকতা সম্বন্ধে নিরন্তর যে সব স্পার্কলিং কথা বলতেন, তা ঠিকমতো সংগ্রহ করে রাখলে পাঁচ খণ্ডের একটা অবিস্মরণীয় বই হয়ে যেত। মস্ত বোকামি করে ফেলেছি। স্মৃতি যে প্রায়ই বিশ্বাসঘাতকতা করে, তা যখন বুঝলাম তখন দেরি হয়ে গিয়েছে।
সাহিত্যসৃষ্টির বাইরে আর কোনও কথাই তাঁর মুখ দিয়ে বেরুত না। যখন স্ত্রী-পুত্র-কন্যার প্রসঙ্গ উঠত তখনও সেটা লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে উঠত।
বিমল মিত্র বলতেন, ‘‘বাংলা কথাসাহিত্যটা বঙ্কিম, শরৎ, বিভূতি থেকে বাউলদের হাতে চলে গিয়েছে, কিন্তু জেনুইন শয়তান না হলে জেনুইন নভেলিস্ট হওয়া যায় না। চাটুজ্জে-বাঁড়ুজ্যেদের উপন্যাসে ব্রাহ্মণোচিত দোষ থেকে যায়।’’
‘‘তাহলে ঘোষ-বোস-মিত্ররাই কথাসাহিত্যের প্রধান নাগরিক হবেন বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্বে?’’
‘‘ইয়েস। তবে সেখানেও অনেক গণ্ডগোল। খালপাড়ে আপনার শুভানুধ্যায়ী প্রেমেন্দ্র মিত্র সেই লিস্টিতে থাকছেন না। শুনুন, তাঁতি অনেক রকম হয়। কেউ গামছা বোনে, কেউ শাড়ি বোনে, অতি অল্প জনই কার্পেট বোনার হিম্মত রাখে। আমাদের বাংলায় যা উপন্যাস লেখা হয়েছে সব শাড়ি। কিন্তু মিত্তির ছাড়া কেউ সায়েব বিবি গোলাম, কড়ি দিয়ে কিনলাম লেখার দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। আমাদের মুশকিল, যা পেয়ে আমরা গদগদ, সেগুলো আসলে বড় গল্প। জাত নভেল কাকে বলে তা আমাদের মাথায় ঢোকে না। ব্যাপারটা ক্ল্যাসিকাল গানের মতন, এর সমঝদার হতে গেলে ধৈর্য লাগে, ট্রেনিং লাগে, সেই সঙ্গে লাগে কান।’’
কোনও বাধা না দিয়ে এ সব কথা শুনে গিয়েছি।
বুঝেছি, উপন্যাসের নির্মাণ সম্বন্ধে এত বেশি চিন্তা করেন বলেই বিমল মিত্র নিদ্রাহীনতায় ভোগেন।
তিনি বলতেন, ‘‘ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া ঠিক নয়, অনেক ভাল ভাল চিন্তা উঁকি মেরে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে।’’
জিজ্ঞেস করেছি, এতই যদি দুর্বলতা, তা হলে বাংলার কথাসাহিত্য আসমুদ্রহিমাচল জয় করল কী ভাবে?
বিমল মিত্র বলতেন, ‘‘শুনুন মশাই, দু’জন অবাঙালি লেখকের দুখানা বই আমাদের সর্বনাশ করে গিয়েছে। এঁরা হলেন বাল্মীকি এবং বেদব্যাস। রামায়ণ ও মহাভারত আমাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে গিয়েছে। তবে সশ্রম নয়, বিনাশ্রম কারাদণ্ড। কথাসাহিত্য যে কত কঠিন কাজ তা লেখক ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। নিজেকে নিঃস্ব করে নিবেদন করায় বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকলে লেখক হবার কোনও চান্স নেই।’’
আরও সব আশ্চর্য কথা।
প্রত্যেকটি শত সপ্তাহের ধারাবাহিক উপন্যাস-লেখকের পরমায়ু দু’বছর করে কমিয়ে দেয়। উপন্যাসের পরিণতি কালে যত বেশি বাধা, তত সুলক্ষণ।
বিখ্যাত এক উপন্যাসের ধারাবাহিক রচনাকালে পাঠক-পাঠিকারা টেলিফোনে বলছেন, বন্ধ করুন এবং লেখকের মাথায় ঘোল ঢালুন। উনি সরকারি গ্রন্থালয়ে বসে লেখেন কেন? ওটা তো পড়ার জায়গা।
পরের কিস্তির মধ্যে প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে। সেই সময় গৃহিণীর কণ্ঠেও ব্যঙ্গের সুর। উপন্যাসের নায়িকাই যেন প্রতিদ্বন্দ্বী! তাঁর সুখের সংসার ভেঙে দিতে চলেছে।
অথচ উপন্যাসের সেই সংসারের ভাগ্যবিধাতা লেখক নিজেই। কোনও কৈফিয়ত না দিয়েই সাজানো বাগান শুকিয়ে দেবার ক্ষমতা তাঁরই আছে।
এমন পরিস্থিতিও হয় যখন ঘরে-বাইরে সবাই ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, ভাবে, কবে সাপ্তাহিক কল্পনার এই সংসার বন্ধ হতে চলেছে।
সম্পাদক অধৈর্য হয়ে জানতে চাইছেন কবে লিখতে পারবেন ‘আগামী সংখ্যায় সমাপ্য’।
অথচ কিছু নেশাগ্রস্ত পাঠক লিখে পাঠাচ্ছেন, এই ধারাবাহিক যেন কিছুতেই শেষ না হয়। শরৎ চাটুজ্যের ধারাবাহিকের সময় পাঠকরা লেখককেও বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা রেজিস্ট্রি ডাকে অথবা টেলিগ্রাম করে দিতেন, খুব সাবধান! নায়িকার যেন কোনও রকম ক্ষতি না হয়। তাহলে তাঁরা আর গ্রাহক থাকবেন না।
এক একটা ধারাবাহিক যেন এক একটা ফাঁড়া। একমাত্র লেখকই যেন বুঝতে পারেন প্রত্যেক শেষের পরও আর একটা শুরুর ইঙ্গিত থাকে। যেমন প্রত্যেক শুরুর আগেও একটা শেষ থেকে যায়।
বিমল মিত্র ম্যাগনাম সাইজের সাপ্তাহিক ধারাবাহিকের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালবাসতেন। তারপর সমাপ্তির শেষে হাহাকার করতেন। বলতেন, নিষ্ঠুর বিধাতাও চরিত্রদের ওপর এত অবিচার করেন না।
এরই পাশে সৈয়দ মুজতবা আলি।
তিনি বলতেন, ব্রাদার! আমি বেদব্যাসের মতন কুচুটে নই। আমি পরমেশ্বরকে সোজাসুজি বলতে চাই, তুমি দয়াময় হতে পারো কিন্তু তোমার সময়জ্ঞান নেই। তুমি বৃদ্ধকে তরুণী ভার্যা দাও, দন্তহীন বৃদ্ধকে আমিনিয়ায় নেমন্তন্ন করে মজা দেখো।
বিশ্বসংসারের এত কিছু জেনেশুনেও অনেক সার্থকনামা লেখক ছোট ছেলেমেয়েদের মতন সমকালের অন্য স্মরণীয়দের সহ্য করতে পারেন না।
একজন বললেন, আমি মাথাধরার ট্যাবলেট আনতে দিয়েছি। এইমাত্র শুনলাম মেয়ের কলেজে প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা টেক্সট বুক হয়েছে। কী ভীষণ ব্যাপার বলুন তো! বাংলাভাষাটার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
আমাকে স্তব্ধ দেখে ওই বিশিষ্ট লেখক বিশেষ ক্ষুব্ধ হলেন। বললেন, আপনি ওঁকেও শ্রদ্ধেয় লেখক মনে করেন! সন্দেশ ও শুঁটকি মাছ একসঙ্গে খাওয়া যায় না মশাই।
এত দিনের দূরত্ব পেরিয়ে মনে হয়, বড় বড় স্রষ্টারা সমকালের দিকপালদের মূল্যায়নের ব্যাপারে অনেক সময় শিশুর মতন ব্যবহার করতে পারতেন।
পুণেতে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এ নিয়ে মাঝে মাঝে কথা উঠত। তিনি মৃদু হাসতেন। কোনও মন্তব্য করতে চাইতেন না।
শেষ পর্যন্ত বলতেন, বিচক্ষণ লেখকরা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যতিব্যস্ত থাকেন যে অপরের মূল্যায়ন করবার এক্তিয়ার তাঁদের থাকে না।
বড়ই স্নিগ্ধ চরিত্রের মানুষ ছিলেন শরদিন্দু। বলতেন, চান্স পেলে মাইনে-করা এক সংস্কৃত পণ্ডিতমশাই রাখবে, যাতে কয়েক ঘণ্টা তাঁর কথা শুনতে পারো। মনে রাখবে পাতার সংখ্যা অনুযায়ী বইয়ের দাম হওয়ার কোনও যুক্তি নেই। তাঁতিদের প্রত্যেক শাড়ির সাইজই এগারো হাত, কিন্তু দাম দেড় টাকা থেকে দেড় লাখ। আর মনে রাখবে, উপন্যাসের প্রথম তিরিশ পাতা পড়বার দায়িত্ব পাঠকের। তারপর ফুল রেসপনসিবিলিটি লেখকের। আর মনে রাখবে, তিনশ’ পাতার মধ্যে বলে দেওয়া যায় এমন বিষয় বিশ্বসংসারে খুব কমই আছে। আরও বলতেন, পরীক্ষার হলে বসে অন্য লেখকের নিন্দা-প্রশংসার সুযোগ নেই।
আমি ভেবেছিলাম, নিতান্ত ভদ্রতাবশত এ কালের বাংলার জনপ্রিয়তম কথাশিল্পী এই কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর দেহাবসানের পর মুম্বইতে তাঁর পুত্রবধূদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাঁরা একটি ঘটনার কথা বললেন।
একদিন সকালের সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছিল প্রথম জ্ঞানপীঠ সম্মান তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে। পুত্রবধূদের একজন বলে উঠলেন, ‘‘ঠিক হয়নি। বাবা, এ সম্মান আপনাকেই দেওয়া উচিত ছিল।’’
স্নেহময় শরদিন্দু শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘না মা, ওরা যোগ্য লোককেই সম্মানিত করেছে।’’
লেখক হিসাবে ৬০ বছর ধরে যত সাহিত্যস্রষ্টাকে দেখেছি, তার মধ্যে শরদিন্দুকেই আজও ভুলতে পারি না।
http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/writer-shankar-writes-his-journey-1.264826
No comments:
Post a Comment