আমাদের কৃতিত্বকে ওরা ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে
ডার্বি ও লিগ জয়ের রসায়ন, স্বয়ং ইস্টবেঙ্গল কোচ লিখছেন একমাত্র আনন্দবাজারে। আজ শেষ কিস্তি।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:২৪:৫০
দিন কয়েক আগে আনন্দবাজারেই সঙ্গকারার কলামে পড়েছিলাম, শেষ টেস্ট খেলার পরের দিন সকালে উঠে ওর প্রথম অনুভূতি ছিল— ও আজ প্রাক্তন ক্রিকেটার!
সোমবার সকালে উঠে আমার কিন্তু তেমন কোনও অনুভূতি হয়নি যে, আজ আমি লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ।
আসলে ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও কোচ হিসেবে লিগে আমার কাজ এখনও শেষ হয়নি। আমার কাছে টুর্নামেন্টটা এখনও বাকি! এখনও আমাদের একটা ম্যাচ খেলতে হবে। আর আমার এই মুহূর্তে একমাত্র ফোকাস— সেটাও জিতে অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শেষ ম্যাচে সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে যদি উল্টোপাল্টা কোনও রেজাল্ট হয়ে যায় আমাদের, তা হলে ইস্টবেঙ্গলের এত উৎসব, এত আনন্দ সব মাটি হয়ে যাবে!
তাই সোমবার ক্লাবে পতাকা তোলার সময় বলুন, ফুটবলারদের নিয়ে সমর্থকদের হইচইয়ের সময় বলুন, কিংবা অফিসে গেলে আমাকে সহকর্মীদের অভিনন্দন জানানোর সময় বলুন, আমার মানসিকতা ছিল একটাই— কিছুতেই আবেগে ভেসে গেলে চলবে না।
এ দিন সকালে মাঠে উৎসবের মধ্যেও আমার ফুটবলারদের সঙ্গে যতটুকু কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, তাতে ওদের বারবার ওই কথাই বলেছি। মেহতাব, ডং, বেলো গুরবিন্দরদের মনে করিয়ে দিয়েছি— দেখিস, চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছিস ভেবে শেষ ম্যাচটা হালকা ভাবে নিস না। মনে রাখিস, পেশাদারের আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।
সে কারণে পেশাদার কোচ হিসেবে আমিও এতটুকু আত্মতুষ্ট নই। ভাবছিই না, এর পরে আই লিগে ইস্টবেঙ্গল টিমের দায়িত্ব ক্লাবকর্তারা আমার হাতেই রেখে দেবেন? না, আমার সঙ্গে মর্গ্যানকে জুড়ে দেবেন? তবে আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের এই জোড়া কোচের ব্যাপারটা আমি কিন্তু খবরের কাগজ পড়েই জেনেছি। সাফ বলছি, যে দিন ইস্টবেঙ্গল আমার সঙ্গে প্রথম কথা বলেছিল, সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত ক্লাবের এক জন অফিসিয়ালও কিন্তু আমাকে বলেননি যে, আই লিগে জোড়া কোচ! তাই আমিও ব্যাপারটাকে আমল দিচ্ছি না।
আর একটা ব্যাপারকেও আমি গুরুত্ব দিতে রাজি নই। সেটা হল, চার গোলে হারার পর মোহনবাগান থেকে একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে যে, ওদের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের এগারো জনের মধ্যে মাত্র দু’জন রবিবারের ডার্বি খেলেছে। বাকিদের ওরা নাকি আইএসএলের নানা টিমে বিক্রি করে বসে আছে। আই লিগে যখন পুরো টিম নিয়ে নামবে, তখন ডংদের আটকে দেওয়া ওদের কাছে কোনও সমস্যা নয়!
এটা হল সেই টিপিক্যাল হেরে যাওয়া দলের অজুহাত! তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের কৃতিত্বকে বিপক্ষের থেকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা। কই, কলকাতা লিগ এ বার যখন শুরু হয়েছিল, তখন তো এই সব কথা ওরা বলেনি? তখন কি জানত না যে, ডার্বি কাদের নিয়ে খেলতে হবে ওদের?
ডার্বির আগে আমাদের ডিফেন্স নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। কিন্তু সেটা কোন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স? বেশ ক’জন ডিফেন্ডার ফিট ছিল না। বেলোর পারফরম্যান্স সত্যি বলতে কী, বেশ খারাপ হচ্ছিল। যে জন্য ডার্বির আগে ওকে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম, রবিবারের ম্যাচই তোমার শেষ সুযোগ। যদি ভাল না খেলো, তা হলে এই টিমে তোমার ভবিষ্যৎ কী আমি জানি না। বেলো ডার্বিতে কী খেলল সবাই দেখেছেন। আর সব মিলিয়ে রবিবার নব্বই মিনিটই প্রায় আমাদের ডিফেন্স দুর্ভেদ্য ছিল।
যার বড় কৃতিত্ব গুরবিন্দরেরও। মোহনবাগানের কাউকে নিয়ে যদি আমার চিন্তা ছিল, তা হলে সে ডুডু। কিন্তু গুরবিন্দর এমন একজন শক্তিশালী ডিফেন্ডার যে একটা কেন দু’টো ডুডুর শারীরিক চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই ডুডু লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া পর্যন্ত আমার মতে ও এক বারের বেশি পেনাল্টি জোনে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেনি।
আর্মি ম্যাচের একটা কথা আজ খুব মনে পড়ছে। সে দিন হাফটাইমে দু’গোলে হারছি। আমাদের মাঠেই খেলা। অনেকেই জানেন, ইস্টবেঙ্গল মাঠে রিজার্ভ বেঞ্চ আর মেম্বার্স গ্যালারির মধ্যে দূরত্ব খুব কম। সেখান থেকে কয়েক জন কমবয়সি ছেলের সঙ্গে কয়েক জন বয়স্ক সমর্থকও আমাকে গালাগাল দিচ্ছিলেন— এই ছেলেটা আমাদের ক্লাবকে খেলে ডুবিয়েছিল। এখন কোচ হয়ে এসেও ডোবাচ্ছে।
আজ সত্যি বলছি, সে দিন ওই গালাগাল খেয়ে আমার রাগ-দুঃখ হওয়ার বদলে বরং বেশি করে জেদ তৈরি হয়েছিল মনের ভেতর। আরও বেশি তেতে উঠেছিলাম যে, এই পরিস্থিতি থেকেই ইস্টবেঙ্গলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। ডার্বি জিততে হবে। কিছুতেই হাল ছাড়া চলবে না।
http://www.anandabazar.com/khela/east-bengal-coach-blames-mohunbagan-for-undermining-their-victory-1.205011
No comments:
Post a Comment