বিপক্ষ কোচের অন্যকে ছোট না করলেও চলত
ডার্বি ও লিগ জয়ের রসায়ন, স্বয়ং ইস্টবেঙ্গল কোচ লিখলেন একমাত্র আনন্দবাজারে। আজ প্রথম কিস্তি।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৬:১৫
মাঠ থেকে ফিরেছি চার ঘণ্টা হয়ে গেল। কিন্তু এখনও সেলিব্রেট করা তো দূরের কথা, এত বড় একটা জয় নিয়ে নিজের মনে ভাবার এক ফোঁটা সময় পাইনি। দৌড়োদৌড়িতে মোবাইলটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। রাত সাড়ে ন’টাতেও মাঠের ড্রেসটা ছাড়ার ফুরসত জোটেনি!
অথচ এমন নয় যে, কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের এটাই প্রথম ডার্বি জেতা! মোহনবাগানের কোচ হিসেবে এই ম্যাচটা ছ’বার খেলে পাঁচ বার জিতেছিলাম। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের প্রথম বার দায়িত্ব নিয়ে ডার্বি জিতে বুঝতে পারছি, এই জয়ের কী আনন্দ!
দেখুন, ডার্বির আগে বড় বড় কথা বলা, কিংবা ম্যাচটা জিতে আরও বড় বড় মন্তব্য করার কোচ আমি নই। তাই রবিবার মোহনবাগানকে আমাদের চার গোলে হারানোর পিছনে যেটা সরল সত্য সেটাই এখানে বলছি।
প্রথমেই স্বীকার করছি, গত চার-পাঁচ দিন আমি কোনও খবরের কাগজ পড়িনি। কিন্তু দেবজিৎ (ঘোষ), সঞ্জয়ের (মাঝি) মতো আমার কোচিং টিমের সতীর্থরা আমাকে বলেছে, বিপক্ষ কোচ ডার্বি নিয়ে কেমন হুঙ্কার দিয়েছেন তাঁর লেখায়। তাতে আমি তেতে না উঠলেও ওরা কিন্তু মাঠেই এর জবাব দেওয়ার জন্য তেতে ছিল। আমি শুধু বিশ্বাস করি এবং এখন আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, কেউ যদি অন্যকে ছোট করেন, তা হলে তাঁকেই এক দিন না এক দিন ছোট হতে হয়।
এমনকী এই যে, হাফটাইমে দু’গোলে এগিয়ে থেকেও ডার্বির সেকেন্ড হাফে অ্যাটাকিং ফুটবল চালু রাখার জন্য ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে আমার প্রশংসা-টশংসা শুনছি, তার জন্যও আমি কৃতিত্ব দাবি করব না। নিজের ফুটবলজীবনে ফরোয়ার্ড ছিল এমন কেউ কোচিংয়ে এলে তার টিম অ্যাটাকিং খেলবেই। গোটা ফুটবল বিশ্বে এর অজস্র উদাহরণ আছে। আমার কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলের বেলায়ও সেটা হয়েছে। এর জন্যই এ বার লিগে দু’গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচ এক বার আমরা ৩-২ জিতেছি, এক বার ৪-৩ জিতেছি।
আমি মনে করি, মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেনও সেটা জানত। আর ও ধরলে ঠিকই ধরেছিল যে, আমার টিম ডার্বিতে হারুক-জিতুক, অ্যাটাকিং খেলবে। রবিবার এক পয়েন্ট পেলেও ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হতো। তা সত্ত্বেও আমাদের কোনও সময় এই ম্যাচটা ড্র করার মানসিকতা ছিল না। আর সে জন্য ওদের কাতসুমিকে শুরুতে বেঞ্চে রেখে ডিফেন্সে বড় চেহারার বিদেশি আভেস্কাকে খেলানোর স্ট্র্যাটেজি আমার মতে ঠিকই ছিল।
আমিও জানতাম, কাতসুমির চিন্তা বাদ দিয়ে আমায় মোহনবাগানকে হারানোর অঙ্ক কষতে হবে। সে জন্যই ঠিক করেছিলাম, অন্য সব ম্যাচে ডং যতটা উপরে অপারেট করছিল, ডার্বিতে সেটা ওকে দিয়ে করাব না। খানিকটা নীচের থেকে খেলবে। যাতে সামনে আরও বেশি জায়গা পায়। ডান দিক থেকে কাট করে ভেতরে ঢুকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
মেহতাবকে ওর পুরনো স্টাইলে মানে ডিফেন্সিভ মিডিও খেলিয়েছি এ দিন। খাবরা আর রফিকের উপর দু’টো নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল। রফিককে বলে দিয়েছিলাম, সারাক্ষণ ওদের ডিফেন্সকে বিরক্ত করবি। আর খাবরাকে বলা ছিল, যত বেশি পারবি উপরে খেলবি। যাতে ডং একটু বেশি পিছন থেকে খেললেও বলের সাপ্লাই থাকে আমাদের অ্যাটাকের সময়।
ডং দু’টো সেটপিস থেকে দু’টো অনবদ্য গোল করেছে ঠিকই। দু’টো গোলই একেবারে মোক্ষম সময়ে। ফুটবলে যেগুলোকে ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট টাইম বলা হয়ে থাকে— ম্যাচের শুরু আর হাফটাইমের একটু আগে।
তা সত্ত্বেও বলব, ডং কিন্তু আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় ডার্বিতে খারাপ খেলেছে। আমি বরং বেশি খুশি আমাদের শেষ দু’টো গোলে। কেননা আমার ট্রেনিং ঘরানার ছবিটাই ফুটে উঠেছিল ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের তিন আর চার নম্বর গোলের বেলায়।
http://www.anandabazar.com/khela/opponent-coach-should-not-undermine-other-team-says-eastbengal-coach-biswajit-1.204541
No comments:
Post a Comment