চল্লিশটা বছর!
জীবনে এক-একটা মুহূর্ত আসে যেগুলো একবারই হয়। একবারই উপভোগ করা যায়। আর আমৃত্যু সেটাকে মনে রেখে মুহূর্তটাকে উপভোগ করে কাটিয়ে যেতে হয়। আমি ভাগ্যবান যে, ফুটবলজীবনে যে বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকতে পেরেছিলাম, ফুটবল ছাড়ার পরেও একই সুখ উপভোগ করতে পারলাম। পঁচাত্তরে মোহনবাগানকে পাঁচ গোল দেওয়ার ঐতিহাসিক ম্যাচটা খেলেছিলাম আমি। লিগটাও সে বার আমরাই জিতি। আজকের মতোই টানা ছ’বার। কখনও ভাবতে পারিনি আরও একটা দিন দেখব, যে দিন ইস্টবেঙ্গল টানা ছ’বার লিগ জিতবে। মোহনবাগানকে উড়িয়ে ডার্বিটাও একই সঙ্গে নিয়ে যাবে।
আমরা যা পারিনি, বিশুর টিম তা আজ করে দেখিয়েছে। শিল্ডে মোহনবাগানকে পাঁচটা মেরেছিলাম, আর লিগটাও নিয়েছিলাম। ডংরা গোল একটা কম দিয়েছে আজ। কিন্তু আনন্দটা দিয়েছে বেশি। একই দিনে ডার্বি ও লিগ টিমকে জিতিয়ে। পঁচাত্তরে লিগ জয় নিয়ে অনেক টানাপড়েন হয়েছিল। কোনও উৎসবই হয়নি। পরে সেটা সুদে আসলে পেয়েছিলাম শিল্ডের ম্যাচটার পর। তাই আজ যখন মেহতাবকে কাঁধে তুলে সমর্থকরা পাগলামি করছিল, আমি মেহতাবের জায়গায় কল্পনা করছিলাম পার্টনারের (গৌতম সরকার) মুখ। সৌমিককে নিয়ে উল্লাস যখন দেখলাম মনে হল, ইস এ ভাবে যদি সে দিন সুধীরদাকে (কর্মকার) নিয়ে করা হত। ডংকে নিয়ে উৎসবের মধ্যে যেমন খুঁজছিলাম সুভাষদাকে (ভৌমিক)।
আমি কোনও তুলনা করছি না। আসলে এটা ভাইদের মধ্যে নিজের সমসাময়িকদের একটু খোঁজার চেষ্টা মাত্র। রবিবার গোটা বিকেল যা আমি করেছি। টাইম মেশিনে চড়ে সেই দিনটায় ফিরে যাওয়া, যে দিন এ সব আমাদেরও প্রাপ্য ছিল। জানি না, আর কত দিন বাঁচব। ম্যাচটার আগের দিন আনন্দবাজারে লিখেছিলাম, বিশু মোহনবাগানকে কিন্তু হারাতে হবে। ও কথা রেখেছে। আরও একবার গর্বিত করেছে আমাকে। এমন উৎসবের দিনে বলাটা ঠিক হবে কি না, জানি না। কিন্তু ছোটভাই বলে আজকের দিনে ওর কাছে একটা আবদার করতে চাই।
বিশু, তুই এ বার আই লিগটাও আমাদের দিস।