রাজাকে রাজার মতো সম্মান দিতে হয়: বিশ্বজিৎ
কলকাতা সোমবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
মুনাল চট্টোপাধ্যায়: ডো ডংয়ের অনবদ্য ফ্রি–কিক গোলে যেতেই রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে লাফিয়ে উঠলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ। তার পর গোলের সংখ্যা বেড়েছে, মোহনবাগানের গলায় ফাঁসের মতো চেপে বসে ইস্টবেঙ্গল। তবু একবারের জন্যও নিশ্চিত হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকেননি বিশ্বজিৎ। এমনকী রাহুল বেকের চার নম্বর গোলের পর যখন লাল–হলুদের সেলিব্রেশনের ছবি তুলতে চিত্রসাংবাদিকরা তাঁর গায়ের কাছে চলে এসেছেন, তখনও ইস্টবেঙ্গল কোচ ফুটবলারদের নির্দেশ দিয়ে চলেছেন কোনও দিকে না তাকিয়ে। খেলার শেষ বাঁশি বাজতে একবার দু’হাত শূনে্য তুলে ঝাঁকালেন, তারপর তিনি বন্দী হয়ে গেলেন মাঠে থাকা ফুটবলার, কর্তাদের উচ্ছ্বাসের ঘেরাটোপে। ভিকট্রি ল্যাপ সেরে ফুটবলাররা মাঠের ধারে আসতেই বুকে জড়াচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ। প্রিয় কোচকে ছাড়বেন কেন ফুটবলাররা? বিশ্বজিৎকে শূনে্য ছুঁড়ে দুলিয়ে নিজেদের ভালবাসায় ভরালেন। শ্যাম্পেন না–ই থাকল, জলের বোতলের জল ছিটিয়েই শ্যাম্পেন–স্নান করালেন কোচকে। পরে সমর্থকদের ভিড় ঠেলে প্রচারমাধ্যমের সামনে এসে বিশ্বজিতের আবেগ জড়ানো প্রতিক্রিয়া, ‘জীবনে অনেক কিছু পাইনি। দুর্ঘটনায় পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার পর ফুটবল জীবনে যবনিকা পড়ে গিয়েছিল। সেটা ভাবলে কষ্ট হয়। তাই এই ধরনের সাফলে্য খুশি হই, কিন্তু বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাই না। টানা ৬ বার কলকাতা লিগ খেতাব জয়ের রেকর্ড ছোঁয়ার আনন্দ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। সাফলে্যর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। এমন একটা পরিস্থিতিতে কোচের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল, যখন সব কিছু ঠিকঠাক ছিল না। কর্তাদের ধন্যবাদ, তাঁরা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। টানা ৬ বার লিগ জয়ের রেকর্ড ছোঁয়ার স্বপ্নপূরণের গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারব, এটা তাঁরা মনে করেছিলেন। সেটা সম্ভব হয়েছে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায়। ফুটবলাররা প্রচণ্ড হার্ডওয়ার্ক করেছে। ওদের অনেক আত্মত্যাগ আছে। এমন একটা ডিসিপ্লিনড ও ডেডিকেটেড ফুটবল ব্যাচ আমি জীবনে খুব কম পেয়েছি। যা বলেছি, তা অক্ষরে অক্ষরে শুনেছে। যারা মাঠে খেলেছে তারা যেমন সেরা দিয়েছে মাঠে নেমে, তেমন বাইরে থাকা ফুটবলারদের সমান অবদান ছিল ইনভলভমেন্টে। কোনও ক্ষোভ, অসহযোগিতা দেখিনি। তাই যাকে যখন ব্যবহার করেছি, সে–ই তখন মাঠে নেমে নিজের দক্ষতা উজাড় করে দিয়েছে। একটা দলের সাজঘর যখন ঠিক থাকে, তখন সেই দলের সাফল্য আনার কাজটা অনেক সহজ হয়। মোটিভেশনের জায়গাটা ছিলই। টানা ৬ বার খেতাব জয়ের লক্ষ্য। তাতেই মরেও মরব না, ভাবটা আগাগোড়া ছিল। আর্মি একাদশ, কালীঘাট এম এস ম্যাচে সেই লড়াকু চরিত্রটা ধরা পড়েছিল। তার ওপর এমন একটা ইলেকট্রিফাইং অ্যাটমসফিয়ার। ফুটবলারদের আগেই বলেছিলাম, লিগ জিতলেই শুধু হবে না। ডার্বির ৩ পয়েন্ট পেতেই হবে। ফুটবলাররা কথা রেখেছে। একই সঙ্গে সাপোর্ট স্টাফদের ভূমিকার কথা না বললে খুব ভুল হবে। ওদের জন্যই গোটা লিগে ফুটবলারদের সময়মতো ফিট করা গেছে। বেলো দেরিতে এসেছিল। গুরবিন্দারের চোট ছিল। তারা ফিট হয়ে এদিন খেলার পেছনে টিম ওয়ার্কটাই আসল।’ ডুডুর লাল কার্ড দেখা নিয়ে প্রতিপক্ষ কোচ ও ফুটবলারদের মধে্য যেমনই ক্ষোভ থাক, বিশ্বজিৎ বললেন, সঠিক সিদ্ধান্ত। শুধু লিগ খেতাব জিতে ইতিহাস গড়েই থেমে থাকতে নারাজ বিশ্বজিৎ। বলেন, ‘অপরাজিত থেকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য এখন।’ চার গোলে জিতলেন। পাঁচ থেকে ছয় গোল এসে যেতে পারত। তার জন্য আক্ষেপ আছে কি? খোলস ছেড়ে বেরিয়ে বিশ্বজিতের এই প্রথমবার খোঁচা, চার গোলটা কম কীসে। রাজাকে রাজার মতোই সম্মান দিতে হয়। সেটা মনে হয় ভুলে গিয়েছিল। এবার দেবে।’
http://aajkaal.in/sports/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8B-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%A6/
No comments:
Post a Comment