শেষ অনশন
সত্তর বছর আগে জানুয়ারিতে তাঁর জীবনের শেষ অনশন। তার কয়েক দিন পরে, মাস না ফুরোতেই ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসের বুলেট শেষ করে দিল তাঁকে।
মহাত্মা: অনশন ভঙ্গ করবেন না, এই সিদ্ধান্তে অনড় তখনও। দিল্লি, ১৭ জানুয়ারি ১৯৪৮। ছবি: গেটি ইমেজেস
যে তিক্ততা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলছে, সরকার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজেছে। জাতীয় স্বার্থের হানি না করে, ভারত দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষের কারণগুলি দূর করতে বদ্ধপরিকর। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারি, এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল ভারত। এই বিবৃতির পরই সে পাকিস্তানের প্রাপ্য ৫৫ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয়। তার কয়েক দিন আগে, জানুয়ারির শুরুতেই রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে গিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে, সে বড় সুখের সময় নয়।
পাকিস্তানের এই টাকাটা স্বাধীনতার সময়কার পাওনা। ’৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় বলা হয়েছিল, ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অবশিষ্ট ৩৭৫ কোটি টাকা দুই দেশের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ হবে। কিন্তু ’৪৭ সালের অক্টোবরে পাক হানাদারেরা কাশ্মীরে হামলা করার পর ভবি বদলে যায়। বল্লভভাই পটেল ও জওহরলাল নেহরু স্থির করেন, টাকাটা পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না। তার বদলে যে লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল জনতা এ দেশে চলে আসছে, তাদের পুনর্বাসনে লাগানো হবে।
শরণার্থী আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সদ্যোজাত দু’টো দেশই তখন বিধ্বস্ত। এক দিকে লাহৌর, করাচি থেকে আসা হিন্দু শরণার্থী বোঝাই ট্রেন মাঝপথে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে দিল্লির পাহাড়গঞ্জ, করোলবাগের মুসলিম বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন হুমায়ুনের সমাধিতে, বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে।
১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই রকম উত্তাল পরিস্থিতিতেই কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছলেন প্রায় ৭৯ বছরের বৃদ্ধ মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। এই বয়সেও টানা তিন দিন অনশন করে কলকাতাকে তিনি দাঙ্গার আগুন থেকে বাঁচিয়েছেন। শেষ অবধি হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লিগ ও শিখ নেতারা সকলে এসে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আর কোনও দিন এ রকম ঘটবে না। বেলেঘাটার বাড়িতে হিন্দুরা এসে তাঁকে যে সব অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন, দেখতে দেখতে গাঁধী মন্তব্যও করেছেন, ‘‘এটা স্টেন গান বুঝি? জীবনে প্রথম দেখলাম।’’ মোহনদাস এ বার দিল্লি হয়ে যাবেন পঞ্জাব। সেখানেও দাউদাউ ছড়িয়ে পড়ছে দাঙ্গা।
পঞ্জাব আর যাওয়া হয়নি তাঁর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পটেলের নির্দেশে ভোরবেলায় দিল্লির আগে শাহাদারা স্টেশনে নেমে পড়তে হয়েছে তাঁকে। পটেল তাঁকে নিতে অপেক্ষা করছেন সেখানে।
পটেলের থেকেই বাকি খবর পেয়েছেন গাঁধী। দিল্লিও আর নিরাপদ নয়। করোলবাগ, সবজিমন্ডির মুসলমানরা প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণশিবিরে। পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা প্রবল উগ্রতা আর অসহিষ্ণুতায় বলে বেড়াচ্ছে, দিল্লি হিন্দুদের শহর। মসজিদে ভাঙচুর করে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, গুন্ডারা মুসলমানদের বাড়ি থেকে উৎখাত করে সেখানে হিন্দুদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে গাঁধীর ভাঙ্গি কলোনির বাড়িও আর নিরাপদ নয়, পটেল বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গাঁধীকে নিয়ে গেলেন শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লার বাড়িতে।
এই তাঁর দিল্লি? এই রাজধানী শহরেই ২৪ বছর আগে খিলাফত নেতা মহম্মদ আলির বাড়িতে বসে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য তিনি ২২ দিন অনশন করেছিলেন? বিকেলেই কমিউনিস্ট নেতা পি সি জোশীকে বললেন, ‘‘বিভ্রান্তিকর! এত গোলমেলে ব্যাপার আগে বুঝিনি।’’
কিন্তু বিভ্রান্তিতে আটকে থাকার লোক নন তিনি। বোঝাচ্ছেন, ‘‘দিল্লি হিন্দু-মুসলমান দুইয়ের শহর। মহাভারতে ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল, মুঘলরা বাইরে থেকে এসেছিল।’’
কাকে তিনি বোঝাবেন? বারংবার বলছেন, ‘‘আগে দিল্লিকে ঠান্ডা হতে হবে। দিল্লি শান্ত হলে লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডি, করাচিতেও শান্তি আসবে।... পাকিস্তান সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর নীতি নিয়েছে। ভারতের হিন্দু ও শিখরা ঠিক সেই ভাবে চোখের বদলে চোখ উপড়াতে চাইছে। আমি গুজরাতি বানিয়া। তাই জানিয়ে রাখি, যে আমার ভাল করবে, আমি শুধু তারই ভাল করব, এটা ভুল বানিয়া নীতি।’’
উন্মত্ত দেশে সে সব শোনে কে? বছরের শেষ মাসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে আরএসএস-এর সভা, সেখানে বক্তৃতা দিতে এলেন সঙ্ঘগুরু গোলওয়ালকর। তিনি গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে এলে গাঁধী সরাসরি অভিযোগ জানালেন, দিল্লির দাঙ্গায় আপনাদের হাত আছে। গোলওয়ালকর বললেন, সঙ্ঘ মুসলিম-হত্যায় বিশ্বাসী নয়। গাঁধী বললেন, তা হলে সেটি মানুষকে জানান। গোলওয়ালকর বললেন, ‘‘আমি আর কী বলব? আপনি বরং আমার নাম করে সবাইকে জানিয়ে দিন।’’ গাঁধী সেই সন্ধ্যার প্রার্থনাসভায় সে রকমই জানালেন। সঙ্ঘগুরু নিজ মুখে ওই বিবৃতি আর দিলেন না।
সমস্যা কি একটা? ডিসেম্বরেই প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঠান্ডা লড়াই তুঙ্গে। দু’জনেই গাঁধীকে লেখা আলাদা চিঠিতে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। গাঁধী পটেলকে বললেন, সরকার হয় তুমি চালাও, নয় জওহর। পটেল জানালেন, সরকার চালানোর শারীরিক ক্ষমতা তাঁর নেই। জওহর চালাক, তিনি বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। গাঁধী তখনই রায় দিলেন না, সময় চেয়ে নিলেন।
এই রকম টালমাটাল পরিস্থিতিতেই সত্যাগ্রহী শুনতে পেলেন হৃদয়ের ডাক। ১২ জানুয়ারি সকালে বিড়লা হাউসে চা পানে এসেছেন গভর্নর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন। পঞ্জাবের পরিস্থিতি, দিল্লির উন্মত্ততা নিয়ে দু’জনে নানা কথা হল। পাকিস্তানের প্রাপ্য ৫৫ কোটির কথাও তুললেন মাউন্টব্যাটেন। ভারত টাকাটা না দিলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজরে সে নীচে নেমে যাবে, চুক্তিভঙ্গকারীকে কেউ বিশ্বাস করবে না। সে দিনটা সোমবার, গাঁধীর মৌনব্রতের দিন। তিনি কোনও উত্তর দিচ্ছেন না। হাতে লিখে জবাব দিচ্ছেন।
দুপুরবেলায় বিড়লা হাউসের লনে বসে সে ভাবেই কিছু লিখলেন, বিকেলের প্রার্থনাসভায় সেটি পড়ে শোনানো হল: সত্যাগ্রহী নিজেকে কখনও অসহায় মনে করে না। অনশন তার শেষ তরবারি। আমি এই ভাবে ভারতীয় সভ্যতার ধ্বংসের নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারব না। পাকিস্তানও যদি অচিরে সব ধর্মকে সমান স্বীকৃতি না দিতে পারে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। তাঁর জীবনের সপ্তদশতম, শেষ অনশনটি দুই দেশকে ভ্রান্তি থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
অনশন শুরুর দিন, ১৩ তারিখ সকালে ছুটে এলেন নেহরু ও পটেল। গতকাল দু’জনে আলাদা ভাবে গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, গাঁধী কাউকে সিদ্ধান্তের বিন্দুবিসর্গও জানতে দেননি। এ দিন দু’জনেই সমান বিভ্রান্ত। পটেলের ধারণা, তাঁকে সরিয়ে জওহরলালকে সর্বেসর্বা করার জনাই এই অনশন, ফের ইস্তফার প্রস্তাব দিলেন তিনি। গাঁধী জানালেন, পটেল ও নেহরু দু’জনকেই এখন সরকারে থাকতে হবে।
পাকিস্তানের প্রাপ্য ৫৫ কোটি টাকার কথাও তুললেন। শেখ আবদুল্লা এক সময় এসে বললেন, ‘‘কাশ্মীরের আজ আপনাকে দরকার।’’ গাঁধী বললেন, এই অনশন কাশ্মীরের জন্যও। অল-ইনক্লুসিভ অনশন। হিন্দুরা যদি ভাবে মুসলমানদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দেবে, মুসলমানরা যদি ভাবে হিন্দুদের পাকিস্তান থেকে মেরে তাড়াবে, আজ তাঁর অনশন ছাড়া গত্যন্তর নেই।
১৪ জানুয়ারি, মকরসংক্রান্তি। প্রবল শীতেও দিল্লি, পঞ্জাব উত্তপ্ত, বুড়োটা সব সময় মুসলমানদের পক্ষে। আজও ওদের বাঁচাতে অনশনে নেমেছে। বিকেলে বিড়লা হাউসের লনে মন্ত্রিসভা বসল, ঠিক হল পাকিস্তানের ৫৫ কোটি আটকে রাখা নিয়ে ফের চিন্তাভাবনা হবে। গাঁধী বললেন, ‘‘পাকিস্তানকে এ বার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, হিন্দু এবং শিখরা যত দিন না সেখানে ফিরতে পারছেন, তারা বিশ্রাম নেবে না। সে দেশের দরিদ্রতম সংখ্যালঘু মানুষটিও সসম্মানে জীবন, সম্পত্তি রক্ষার অধিকার পাক।’’
তিনি বলছেন এক, মানুষ বুঝছে আর এক। এত পাকিস্তান-প্রেম কেন? পঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তুরা রাতে ঘিরে ফেলল বিড়লা হাউস। মুখে স্লোগান: খুনকা বদলা খুন। গাঁধীকো মরনে দো। সেই সময়েই বিড়লা হাউস থেকে বেরোচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি। নেহরু নিজে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন, ‘‘কে বলল, গাঁধীকো মরনে দো? সাহস থাকলে সামনে এসে বল।’’ লোকগুলো দুদ্দাড়িয়ে পালাল।
১৫ তারিখ, অনশনের তৃতীয় দিন সকাল থেকেই গাঁধীর শরীর দুর্বল। বাথরুমে হেঁটে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তিন সদস্যের চিকিৎসক বোর্ড জানাল, ‘শরীরের ওজন কমে আসছে। কিডনি খারাপ, প্রস্রাবে অ্যাসিটোন বডি মিলছে।’ সন্ধ্যাবেলা প্রার্থনাসভায় যাওয়ার ক্ষমতাও নেই, তাঁর বিছানার পাশে মাইক্রোফোন দেওয়া হল। দুর্বল কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না, প্রার্থনার শেষে শায়িত অবস্থায় বারান্দায় নিয়ে আসা হল তাঁকে। বিকেলে হিন্দু-মুসলিম-শিখ অধ্যুষিত এক সভায় ভাষণ দিলেন নেহরু: মহাত্মা গাঁধীর জীবনহানি মানে ভারতের আত্মার নির্বাপিত হওয়া। এই সাম্প্রদায়িক হানাহানি অচিরে শেষ না হলে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতারও চিরসমাপ্তি।
একটু আগে বিড়লা হাউসের লনে ৫৫ কোটি টাকা মেটানোর জরুরি মিটিংও হয়ে গিয়েছে। নেহরু, পটেলরা তাঁদের মত আঁকড়ে থাকেননি। এক দিন পটেল বলেছিলেন, ওই টাকাটা ছাড়লেই কাশ্মীর দখলে আনতে পাকিস্তান বুলেট কিনবে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ৬ জুলাই এই অস্ত্রদৌড় থেকেই তো গাঁধী সবাইকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘‘পাকিস্তান বলবে, ভারতের থেকে বাঁচতে তারা সৈন্যসংখ্যা বাড়াবে। ভারত পালটা একই কথা শোনাবে। দু’টো দেশই তা হলে তাদের সম্পদ শিশুদের শিক্ষার বদলে বারুদ-বন্দুক কিনে খরচ করবে?’’ টাকাটা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। শিষ্য পটেল কাঁদছেন, কাঁদছেন গাঁধীও!
সে দিনই গাঁধী এক বিবৃতিতে জানালেন, ‘‘যে যাই বলুক, পণ্ডিত নেহরু ও আমাকে গাছে তুলে বল্লভভাইয়ের মতো বিশ্বস্ত বন্ধুর থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।’’ পটেলের মন্তব্যও অনুরূপ: ‘‘কেউ যেন বলার সুযোগ না পায়, দুনিয়ার মহত্তম মানুষের নেতৃত্ব পাওয়ার যোগ্য আমরা নই।’’
মহত্তম মানুষটির স্বাস্থ্য পর দিন, ১৬ জানুয়ারি সকাল থেকে সংকটজনক। অনশনে কিডনি, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত। দু’পাউন্ড ওজন কমে গিয়েছে। বলা হল, পাকিস্তানকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ বার তিনি মুখে কিছু দিন। গাঁধী জানালেন, ‘‘দিল্লির হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টানদের মধ্যে বন্ধুত্বই হতে পারে আমার অনশনের উত্তর।’’ পাকিস্তানের কথা বললেন, ‘‘আমাদের সরকার একটা উদার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তান কী ভাবে এর প্রতিদান দেবে?’’
১৭ তারিখ সকালে এলেন নেহরু। দিল্লির অবস্থা এখন ভাল। মহাত্মা অনশন তুলে নিন। শিষ্যের অনুরোধও ফিরিয়ে দিলেন তিনি, ‘‘তাড়াহুড়ো দরকার নেই। যা করবে, তার মধ্যে যেন সততা থাকে।’’
সন্ধ্যায় শরীর আরও খারাপ। কংগ্রেস সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের বাড়িতে বসল ১৩০ সদস্যের কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি। প্রস্তাব, ‘সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব আমরা।’ রাতেই গাঁধীর কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হল, এ বারও তিনি নারাজ। সব দল সই করলেও হিন্দু মহাসভা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ যে নেই!
রবিবার তিনি বিপদপ্রান্তে। পেটে ব্যথা, ওজন কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে ফের শান্তি কমিটির মিটিং। হাজির হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস-এর প্রতিনিধি গণেশ দত্ত। ‘মুসলমানেরা যাঁরা দিল্লি থেকে চলে গিয়েছেন, ফের এখানে এলে আপত্তি নেই। আমরা পুলিশ বা সেনা ছাড়াই সর্বতো ভাবে সাহায্য করব,’ লেখা হল সেখানে।
মোহনদাস এখন আশ্বস্ত। দুপুরে অনশন ভাঙলেন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ হাতে তুলে দিলেন কমলালেবুর রসের গ্লাস। বিকেলে প্রার্থনাসভায় এ দিন জানালেন, ‘‘সত্যের নামে অনশনে গিয়েছিলাম। ঈশ্বরের নামে এত দিন আমরা লুঠপাট, গণহত্যা, ধর্মান্তর, মেয়েদের অপহরণ ও ধর্ষণকে প্রশ্রয় দিয়েছি। জানি না, সত্যের নামে কেউ এই জিনিস করার সাহস পায় কি না।’’
এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে গেল পরবর্তী সূচি। ৮/৯ ফেব্রুয়ারি তিনি পাকিস্তান যাবেন। দু’দেশের গরিব মানুষকেই বাঁচাতে হবে।
পাকিস্তান যাওয়াটা অবশ্য হয়ে ওঠেনি। রবিবার দুপুরে তিনি অনশন ভাঙার আগেই কনট প্লেসের মেরিনা হোটেলে উঠে পড়েছেন পুণে থেকে আসা এস দেশপাণ্ডে। এটি ছদ্মনাম। মাস ফুরনোর আগে, ৩০ জানুয়ারি তাঁকে স্বনামেই চিনেছিল বিশ্ব: নাথুরাম গডসে।
https://www.anandabazar.com/supplementary/rabibashoriyo/gandhiji-s-final-hunger-strike-1.746818?ref=archive-new-stry
No comments:
Post a Comment