পিন্টুর তাচ্ছিল্য সুভাষদের হাবভাব সামলানো অত সহজ ছিল না
মহাকাব্যিক পঁচিশ বছর! কখনও লাল-হলুদ, কখনও সবুজ-মেরুন। কখনও নীল জার্সির ভারত। পুরনো সেই সাম্রাজ্য বিস্তার আর তার ভাঙাগড়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি নিয়ে দীর্ঘ এত বছর বাদে অকপট স্বয়ং প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ত্রয়োদশ কিস্তি। অভিযোগ, তাঁর সাফল্য কেবলই তারকাখচিত টিম পেয়েছিলেন বলে। জবাব দিতে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন এ বার
অনুলিখন: সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০০:০৫:০০
গোলমুখে হাবিব, পিছনেই আকবর, দূরে দাঁড়িয়ে সুরজিৎ
ডেভিড বেকহ্যামকে ড্রেসিংরুমে উত্তেজিত অ্যালেক্স ফার্গুসন বুট ছুড়ে মেরেছিলেন!
সরাসরি নয়। বেকহ্যামের দিকে শট মারতে গেলে ফার্গুসনের বুটটাই খুলে গিয়ে তাঁর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সুপারস্টার ফুটবলারের কপালের ওপর আঘাত করে!
রিয়াল মাদ্রিদের প্র্যাকটিসে দলের আইকন ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে সেই সময়ের ক্লাব কোচ হোসে মোরিনহোর যে কত বার মনোমালিন্য ঘটেছে, তার ইয়ত্তা নেই!
বেশ কয়েক বছর পরে এখনও মিডিয়ায় সেই বাদানুবাদের মশলাদার খবর ফলাও করে হেডিং পায়! কখনও রোনাল্ডো ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে প্রাক্তন কোচের নামে। কোনও সময় আবার উল্টোটা— মোরিনহো নিন্দেমন্দ করছেন রোনাল্ডোকে।
মেসি যে মেসি— বার্সেলোনার রাজপুত্র বলা হয়, অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এতটাই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি! অথচ তার সঙ্গেও নাকি বনিবনা হচ্ছিল না বলেই জেরার্দো মার্টিনো বেচারা বার্সেলোনা কোচের চাকরিটা এ মরসুমে খুইয়েছে বলে শোনা যায়! অথচ মার্টিনো মেসিরই দেশোয়ালি—আর্জেন্তাইন! ওর বদলে এখন বার্সেলোনার স্প্যানিশ কোচ লুই এনরিকে নাকি আবার মেসির লোক বলেই খবর!
আমি অবশ্য ইস্টবেঙ্গল অথবা মোহনবাগান, যখন যে দলকে কোচিং করিয়েছি, কখনও তাদের কোনও ফুটবলারের দিকে বুট ছুড়ে মারিনি! নিজের পুরনো টিমের কোনও ফুটবলারের নামে কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরেও প্রেসের কাছে গালমন্দ করিনি!
তা বলে নিজেকে আমি ফার্গুসন বা মোরিনহোর চেয়ে বড় কোচ বলেও ভাবি না! ওঁরা সব নমস্য কোচ।
তবে ফার্গুসন যদি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব আড়াই দশকের বেশি সামলে থাকেন, মোরিনহো যদি রিয়াল মাদ্রিদের মতো মেগাটিমকে নিজস্ব কায়দায় চালিয়ে থাকেন, তা হলে এই অধম পিকে বাঁড়ুজ্যে-ও ভারতীয় স্ট্যান্ডার্ডে দেশের সবচেয়ে দু’টো বড়, তারকাখচিত ফুটবল দলকে বছরের পর বছর সামলেছি, বিশ্বফুটবলের নমস্য কোচেদের তুলনায় অনেক কম বিতর্ক ছাড়াই।
তার মধ্যেও আমার দীর্ঘ পঁচিশ বছরের কোচিং জীবনে সবচেয়ে দুটো মেগাটিম বলতে বুঝি— সাতাত্তরের মোহনবাগান আর পঁচাশির ইস্টবেঙ্গল। পাশাপাশি এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়ার দরকার আছে বলেও আমি মনে করি।
ময়দানে তখন তো বটেই, এখনও মাঝেমধ্যে বলাবলি হয়ে থাকে, পিকের তো কোচিং সাফল্য কেবল সব বড় টিমকে নিয়েই! অমল দত্তের মতো ভাঙা টিম নিয়ে ট্রফি জিতে দেখাতে পারলে বুঝতাম!
সত্যি বলতে কী, অমলদার বড় ক্লাবকে সফল ভাবে কোচিং দেওয়ার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ঊনসত্তরে মোহনবাগানকে শিল্ড চ্যাম্পিয়ন করা কিংবা সাতাত্তরে ইস্টবেঙ্গলকে লিগ দেওয়া— এই দুটো ঘটনাকে আমি অন্তত অমলদার কোচিং জীবনের সেরা পারফরম্যান্স বলে মনে করি।
কিন্তু বড় দল পেলেই যে কোচ সেখানে ট্রফির বন্যা বইয়ে দেবে তারও কোনও মানে নেই। তা হলে আর্সেন ওয়েঙ্গার গত ন’বছরে আর্সেনালকে মাত্র একটা এফএ কাপের বেশি দিতে পারলেন না কেন? অথবা এ দেশের ফুটবলে ঊনআশিতে অত বড় টিম করেও ইস্টবেঙ্গল গোটা মরসুম একটাও বড় ট্রফি জিততে পারেনি কেন?
আসলে তারকায় ভরা বড় টিম সামলানোর কয়েকটা সুবিধের চেয়ে অসুবিধের মাত্রাটা অনেক বেশি! নিজের দীর্ঘ কোচিং অভিজ্ঞতায় আমার অন্তত সেরকমই মনে হয়েছে।
সুবিধে বলতে যেমন হয়তো প্রসূন-সমরেশের হাফলাইনকে হয়তো অন্য পাঁচটা মিডফিল্ড জুটির চেয়ে কোনও স্ট্র্যাটেজি বোঝাতে অনেক কম সময় লাগত। এক দিকে স্কিলে ভরপুর, অন্য দিকে প্রখর বুদ্ধিমান পিন্টুরা আমি যেটা করতে বলছি মাঠে, সেটা অন্য অনেকের চেয়ে চট করে ধরে ফেলে ঠিক সে ভাবেই কার্যকর করেছে ম্যাচের পর ম্যাচ।
কিন্তু আবার পিন্টুর মেগা মেজাজকেও সামলাতে হয়েছে আমাকে। যে কোনও ব্যাপারে, এমনকী সেটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটাকেও অদ্ভুত একটা তাচ্ছিল্য মার্কা ভঙ্গিতে খুব সহজ ভাবার অভ্যেস ছিল পিন্টুর মধ্যে।
হয়তো বড় ম্যাচের দিনও খেলা শুরুর মাত্র আধঘণ্টা আগে পান চিবোতে চিবোতে ক্লাব টেন্টে এল! আমি একটু বিরক্ত ভাব দেখালে উত্তরে বলে দিল, “আরে প্রদীপদা ছাড়েন! খেলা তো হইব মাঠে। তখন দ্যাখবেন!”
সত্যি বলতে কী, যেমন বলত, কাজেও সেটাই দেখাত বেশির ভাগ সময়। কিন্তু সব সময়, প্রায় প্রতিটা ম্যাচের আগে পিন্টুর ও রকম ইয়ার্কির ভঙ্গি মোটেও আমার পছন্দ হত না। সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছি।
জামশিদ ও কৃষ্ণেন্দু রায়ের বল দখলের লড়াই
সুভাষের আবার ছিল বিরাট হাবভাব। হয়তো ওকে বললাম, “আজকের ম্যাচে একটু বেশি দৌড়াস বাবা। ওদের সাইডব্যাকগুলো টাফ আছে।” সুভাষ পাল্টা দিল, “বুলডোজারকে রোলস রয়েস হতে বলছেন তো? বুঝেছি। চিন্তা করবেন না।” মানে সেই হাবভাব!
সুব্রতর ছিল তীব্র ইগো। বিএনআরে গড়পরতা ডিফেন্ডার থেকে বড় টিমে প্রচুর পরিশ্রম করে বিরাট মাপের স্টপার হয়ে উঠেছিল। সত্যি বলতে কী, মোহনবাগানে একটা সময় তো বাবলু প্রায় অরুণ ঘোষের স্ট্যান্ডার্ডে খেলেছে স্টপার পজিশনে! কিন্তু ওর পাশের স্টপারের প্রায় কোনও দিনই প্রশংসা শুনিনি সুব্রতর মুখে। সেই স্টপারও যতই ভাল খেলুক, কিংবা ইন্ডিয়া টিমের প্লেয়ার হোক না কেন!
এ রকম সব নানা ব্যাপারস্যাপার সামলানোর সমস্যা থাকে সব সময় মেগাটিমের কোচের জীবনে।
আমি যেটা করতাম— দলের প্রতিটা তারকা ফুটবলারকে সমান চোখে দেখতাম। ড্রেসিংরুমে বা টিমমিটিংয়ে কাউকে অন্য কারও থেকে ছোট বা বড় করে দেখাতাম না। এবং মনে মনে সত্যি ভাবতামও না। কোনও দিন মনে করিনি আমার টিমে সুধীরের চেয়ে হাবিব বড় তারকা! কিংবা গৌতমের চেয়ে সুভাষের ক্যারিশমা বেশি। অথবা মনোরঞ্জনের চেয়ে কৃশানু বড় ফুটবলার... এ রকম কিছু!
তারকায় ভরা টিমকে চালাতে আমার আর একটা অস্ত্র ছিল— প্র্যাকটিসে দিনের পর দিন নিজে ফুটবলের প্রতিটা জিনিসের ডেমনস্ট্রেশন দেওয়া। শট বলুন, ফ্রিকিক বলুন, উইং দিয়ে দৌড় বলুন, দূরপাল্লার ভলি মারা বলুন, দু’পায়েই শু্যটিং বলুন, ড্রিবল বলুন--- সব-সব আমি নিজে মাঠে এমন ভাবে করে দেখাতাম যে, আমার শিষ্যরা এক-এক জন যতই বড় তারকা হোক না কেন, মনে মনে হয়তো বুঝতে পারত— হ্যাঁ, আমাদের গুরু নিজেও খেলোয়াড়জীবনে যথেষ্ট বড় ফুটবলার, ভাল ফুটবলার ছিল। এ লোককে বেশি ঘাঁটিয়ে লাভ নেই!
সাতাত্তরের মোহনবাগান ফুলে-ফুলে ভরা। গৌতম-প্রসূন-সুধীর-শিবাজি-সুব্রত-হাবিব-আকবর-সুভাষ-শ্যাম, কাকে ছেড়ে কার নাম বলবেন! সবাই সুপারস্টার।
তেমনই পঁচাশির ইস্টবেঙ্গল। ভাস্কর-মনোরঞ্জন-তরুণ-অলোক-সুদীপ-বিকাশ-কৃশানু-জামশিদ-বিশ্বজিৎ! মহাতারকায় ছড়াছড়ি।
ওই দু’টো মেগাটিমেরই কোচ হিসেবে সাফল্য-বার্থতা, দুটোরই স্বাদ পেয়েছি আমি। আর দুটো ক্ষেত্রেই হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি, স্টারস্টাডেড টিম সামলানোর ঝক্কি কী! কতটা! কেমন! সে আমার সমালোচকেরা যে যা-ই বলুন বা ভাবুন না কেন!
সাতাত্তরে যেমন লিগে চরম অপ্রত্যাশিত ভাবে বড় ম্যাচ দু’গোলে হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম না, তেমনই তার পরের চার মাসে পরপর শিল্ড-রোভার্স-ডুরান্ড জিতেছিলাম। পেলের কসমসের সঙ্গে সারাক্ষণ এগিয়ে থেকে শেষমেশ ২-২ ড্র হয়।
পঁচাশিতে তেমন বিদেশের মাঠে (শ্রীলঙ্কায়) আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে গুটিকয়েক বিরল সাফল্যের মধ্যে বোধহয় পড়ে যা!
বল পিন্টু চৌধুরীর পায়ে
কিন্তু তার পিছনে আমাকে যে কত হিসেব কষে চলতে হয়েছে! কত বার যে এক তারকা ফুটবলারের সঙ্গে অন্য তারকা ফুটবলারের ইগো-সমস্যা সামলাতে হয়েছে! মেগাটিমের টিপিক্যাল জমিদারি মনোভাবাপন্ন ‘স্টেজে গিয়ে মেরে দেব’ মার্কা আত্মতুষ্ট মেজাজকে বাস্তবের রুক্ষ জমিতে এনে জাগিয়ে তুলতে হয়েছে! সে সব একমাত্র আমিই জানি।
সাতাত্তরে লিগের বড় ম্যাচ হারার পর মোহনবাগানে অস্থির অবস্থা! প্র্যাকটিসে সমর্থকদের গালাগালের বন্যা বইছে। ফুটবলাররা টেনশনে! কর্তারা ক্ষুব্ধ। সব কিছুকে মাথা ঠান্ডা রেখে সামলেছি। কারণ আমি যে কোচ দলের! মানে আমিই সংসারের অভিভাবক, আমিই পরিবারের ডাক্তার, আমিই বাড়ির পাহারাদার!
একবার তো ম্যাচ চলাকালীন রেফারিকে অনুনয়-বিনয় করে খেলা থামিয়ে মাঠের মধ্যিখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের হাতজোড় করে অনুরোধ করেছিলাম— প্লিজ, দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের একটু সময় দিন। আপনাদের প্রিয় এই দলই এ বছর অনেক ট্রফি জিতবে। একটা লিগ পাইনি ঠিকই, কিন্তু এখনও প্রায় গোটা মরসুম পড়ে আছে। আপনাদের সুসময় ফিরবেই। আমরাই ফেরাব।
বললাম বটে, কিন্তু সেটা করে দেখাতে হলে তো তেমনই প্রস্তুতি দরকার! সকালে টিম প্র্যকটিস ছাড়াও বিকেলে কয়েক জন বিশেষ ফুটবলারকে নিয়ে আলাদা প্র্যাকটিস চালু করেছিলাম মরসুমের মধ্যে। যেটা সচরাচর প্রি-সিজন প্র্যাকটিসে হয়টয়।
হাবিব বড় ম্যাচে সিটার নষ্ট করে মুষড়ে ছিল অনেক দিন। ওর মতো ডাকাবুকো ছেলেরও সেই সময় ফর্ম সামান্য পড়তির দিকে। টিমের অন্য সব সতীর্থের পিছনে ফোড়ন কাটার অভ্যেস থাকা আমার এক তারকা স্টপার হাবিবকে তখন টার্গেট করেছে!
আমি গোটা ব্যাপারটা ক্লাবকর্তা, মিডিয়ার তীক্ষ্ম চোখ এড়িয়ে সামলেছিলাম। হাবিবকে গোপনে নিজের বাড়িতে এনে বুঝিয়েছিলাম, “তুমি দলের কতটা অপরিহার্য শক্তি।”
আবার সেই ফোড়ন কাটা স্বভাবের প্লেয়ারকে আলাদা ডেকে বলে দিয়েছিলাম, “ফুটবল খেলাটা টিমগেম। একটাই সুতোয় এগারোজন বাঁধা। সুতোয় টান পড়লে সবাই হুড়মুড়িয়ে মাটিতে পড়বে। তুমি একা রক্ষা পাবে, ভেবো না। অতএব...!”
বিশ্বাস করুন, তার পর কসমস ম্যাচ থেকে বাকি মরসুমটাই সেই তারকা স্টপার আর হাবিব, মূলত ওরা দু’জনই মোহনবাগানকে মাঠে লিড করেছে। যে কোনও চাপের সময়, যে কোনও উঠে দাঁড়াবার মুহূর্তে! ড্রেসিংরুমে পর্যন্ত দু’জনের মধ্যে কী চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল!
টেনিসের ডাবলসে যেমন জুটির একে অন্যকে সম্মান করার মধ্যেই কোর্টে তাদের সাফল্যের আসল রসায়ন লুকিয়ে থাকে— তেমনই সাতাত্তরের লিগোত্তর মরসুম জুড়ে মোহনবাগানে সেই তারকা স্টপার আর হাবিবের পার্টনারশিপটা ছিল।
পঁচাশিতে আবার মনোরঞ্জন প্রথমে শ্রীলঙ্কা ট্যুরে গেল না। কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই। আমি ওখানে পৌঁছে যখন তরুণ দে-র পাশে বলাই মুখোপাধ্যায়কে আনকোরা স্টপার পজিশনে প্রায় ফিট করে ফেলেছি, আচমকা মনা কলম্বোয় এসে হাজির। কিন্তু আমাকে তখন অনড় দেখে মনোরঞ্জন আবার যেমন আচমকা ওখানে গিয়েছিল, তেমনই টুর্নামেন্টের মধ্যেই ফের কলকাতা ফিরে গেল। সব মিলিয়ে সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের!
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক ফুটবলার, অনেক ক্লাবকর্তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে বিতর্কিত পরিস্থিতিটা সামলেছিলাম। ফুটবল সচিব সুপ্রকাশ গড়গড়ি ওই সময় আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছিল। বিদেশে তো আর ইস্টবেঙ্গল শুধু একটা ভারতীয় ক্লাব নয়, গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে তখন। গড়গড়িও যেটা ওখানে বুঝেছিল। শ্রীলঙ্কায় যা ঘটাবে আমার অত বড় তারকাখচিত দল, সেটা গোটা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সেটাই দুনিয়ার খেলাধুলোয় নিয়ম।
কিন্তু আমার প্রাণপাত চেষ্টাই বলুন, বা বরাবর আমার ঈশ্বরভক্তির কারণেই বলুন— সে যাত্রাও ভাল ভাবে উতরে যেতে পেরেছিলাম। পুরোশক্তির ডিফেন্স না থাকা সত্ত্বেও কলম্বো থেকে আমার ইস্টবেঙ্গল ট্রফি নিয়ে ফিরেছিল।
সাতাত্তরের লিগোত্তর মোহনবাগানের মতোই পঁচাশিতে শ্রীলঙ্কায় ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমেও আমি যদি নীলকন্ঠ হয়ে উঠে টিমের সব বিষপান করে তার শরীরটাকে সুস্থ রাখতে না পারতাম, তা হলে ত্রিমুকুট জেতার রেকর্ড বা বিদেশ থেকে ট্রফি আনার গৌরব পেত কি মোহন-ইস্ট? অত বড় তারকাখচিত দল গড়েও?
তা হলে তো বার্সা, রিয়াল, ম্যান ইউয়ে কোচেরই দরকার পড়ত না! ইস্ট-মোহনেও নয়!
স্টারস্টাডেড দলকে যেমন স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্স বোঝানো তুলনায় সহজ। যেমন মাঠে সেটা করে দেখাতে তুলনায় কম সময় লাগে হয়তো, তেমনই মহাতারকায় ভরা টিমে প্লেয়ারদের আলাদা-আলাদা ইগোকে সামাল দেওয়া, সব নায়কের মন জোগানোর মতো একটা সার্বিক পরিবেশ তৈরি করা ততটাই কঠিন কোচের পক্ষে।
তাই বোধহয় মেগাটিমের কোচ মনে মনে ভাবতেই পারে সেই বিখ্যাত লাইনটা— পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী!
http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/%E0%A6%AA-%E0%A6%A8-%E0%A6%9F-%E0%A6%B0-%E0%A6%A4-%E0%A6%9A-%E0%A6%9B-%E0%A6%B2-%E0%A6%AF-%E0%A6%B8-%E0%A6%AD-%E0%A6%B7%E0%A6%A6-%E0%A6%B0-%E0%A6%B9-%E0%A6%AC%E0%A6%AD-%E0%A6%AC-%E0%A6%B8-%E0%A6%AE%E0%A6%B2-%E0%A6%A8-%E0%A6%85%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%9C-%E0%A6%9B-%E0%A6%B2-%E0%A6%A8-1.94709
No comments:
Post a Comment