বড় দলের কোচিংয়ে ম্যান ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব কী বিরাট, প্রথম মরসুমেই হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম।
বাহাত্তরের ইস্টবেঙ্গল টিমের সেই সিনিয়র সাইডব্যাকের নাম এখানে লিখে তাকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না। তবে সে কিন্তু আমাকে প্রচুর বেগ দিয়েছিল। যে কোনও কারণেই হোক, ইস্টবেঙ্গলের সেই ঘরের ছেলে আমার লাল-হলুদের কোচিংয়ে আসাটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। প্র্যাকটিস থেকেই অসহযোগিতা শুরু করেছিল আমার সঙ্গে। তার পর লিগেও।
এমনকী নিজেই এক দিন আমাকে বলে, “আমি তো ইস্টবেঙ্গলে অনেক খেললাম। আপনি তরুণ কাউকে সুযোগ দিন।”আমিও সেই সিনিয়রকে বিশ্বাস করে তার জায়গায় তরুণ বসু মজুমদারকে কয়েকটা ম্যাচ খেলালাম।
ও মা! তার পর ইস্টবেঙ্গলেরই কয়েকটা সূত্র আমাকে জানাল, ও নাকি ক্লাবকর্তাদের কার্যত নালিশ করেছে, তাকে টিমে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না! বুঝুন ঠ্যালা। পরে আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, সেই ফুটবলার সম্পর্কে যে খবর আমার কাছে এসেছে, সেটা সত্যি। এ সব ক্ষেত্রে আমি পরের চব্বিশ বছর যে পন্থা অনুসরণ করেছি, সেটা বড় দলে আমার কোচিং কেরিয়ারের প্রথম বছরেও করেছিলাম।
নিজের অবাধ্য ছাত্রকে এড়িয়ে চলা। যাতে না সে বড় কোনও ক্ষতি না করে বসে! কিন্তু বিধি বাম! বাহাত্তরে গোটা লিগে একটাও গোল না খেয়ে ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ এল সেখানে গিয়ে তিনটে ম্যাচ খেলার। কিন্তু ততক্ষণে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কোচকে না জানিয়ে দলের ভিন্ রাজ্যের ফুটবলারদের ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন। নতুন নজির গড়ে লিগ জেতার আনন্দের আতিশয্যে!
হাবিব-আকবর-লতিফুদ্দিন, কিংবা চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ— কেউ বিহার তো অনেকে হায়দরাবাদে চলে গিয়েছে। আমার সেই সিনিয়র ডিফেন্ডারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। তো ওই সময় আমি নিজেকে নিজেই বুঝিয়েছিলাম, মনে করি না কেন যে, ওই প্লেয়ারকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই! আর যদি কোনও সমস্যা হয়ে থাকেও, তা হলে এ রকম ভাবি না কেন যে, সেই কোচ আমি নই, অন্য কেউ!
এ ভাবে নিজের মনকে সামলে বাংলাদেশ ট্যুরে সেই সিনিয়রকে দলে রেখে ইস্টবেঙ্গল টিম নিয়ে গেলাম।
আর কী আশ্চর্য! বাংলাদেশে তিনটে ম্যাচেই ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে সেই ফুটবলার কী অসাধারণই না খেলেছিল! চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচে আমরা হাফটাইমে তিন গোলে এগিয়ে থাকলেও সেই সাইডব্যাকের কল্যাণে ইস্টবেঙ্গলও তিনবার গোল খাওয়া থেকে বেঁচেছিল।
এত বছর পরেও স্পষ্ট মনে আছে, হাফটাইমে তিন গোলে পিছিয়ে পড়ায় বিরক্ত বাংলাদেশ সমর্থকেরা বেশির ভাগ তখনই মাঠ ছেড়ে চলে যান। আর যাওয়ার সময় প্রায় প্রত্যেকে মাঠের একটা করে চেয়ার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেকেন্ড হাফে খেলা শুরুর সময় সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। গ্যালারিতে দর্শক নেই, চেয়ারও নেই!
তবে এই কাহিনির উপসংহার চাটগাঁয়ের দর্শক বা চেয়ার নয়। বড় ক্লাবে আমার কোচিং জীবনের প্রথম বছরেই ম্যান ম্যানেজমেন্টের কাহিনি। ম্যান ম্যানেজমেন্ট যে কোনও পেশায়, যে কোনও প্রতিষ্ঠানে অবশ্যম্ভাবী এক ফ্যাক্টর। ‘স্টারস্টাডেড’ দলে আরও অবশ্যম্ভাবী ফ্যাক্টর।
এই যেমন ইউরোপিয়ান ফুটবলে হোসে মোরিনহো যখন যে বড় টিমের কোচ থাকে, দেখবেন ট্রেনিং থেকে শুরু করে ম্যাচ তো বটেই, এমনকী প্রি-ম্যাচ বা পোস্ট-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনেও ও যেন ম্যান ম্যানেজমেন্ট করছে! যে ম্যাচে হয়তো ওর টিম খুব খারাপ খেলে হেরেছে, মোরিনহো প্রচণ্ড শক্তিশালী ইউরোপিয়ান মিডিয়ার কবল থেকে নিজের স্টার ফুটবলারদের বাঁচাতে প্রেস মিটে নিজেই এমন সব গরমাগরম মন্তব্য করবে যে, প্রচারমাধ্যমের পুরো নজরটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেবে জেনেবুঝে। যাতে ওর টিম আরও বেশি চাপে না পড়ে। পরের ম্যাচগুলোতেও খারাপ না খেলে। আধুনিক ফুটবলে ম্যান ম্যানেজমেন্ট এখানে পৌঁছে গিয়েছে!
আমার ম্যান ম্যানেজমেন্ট শেখা খেলতে খেলতে। আসলে ডেটমার ক্র্যামার যে আমাকে বলতেন, আমার ফুটবল-সত্তাতেই নাকি একটা ভবিষ্যতের কোচ লুকিয়ে ছিল, নিজের জীবনের প্রত্যন্তে পৌঁছে মনে হয়, কথাটা ধ্রুবসত্য।  রহিম সাহেব আমাদের সেই স্টারস্টাডেড ইন্ডিয়া ফুটবল টিম, যারা বাষট্টির এশিয়াডে সোনা জিতেছিল, সেই বিরাট দলের ভারসাম্য রেখেছিলেন কঠিন শৃঙ্খলার পাশাপাশি দারুণ ম্যান ম্যানেজমেন্টেও।
পেশায় স্কুলের হেডমাস্টার রহিম স্যারের সুবিধে ছিল, বরাবর মাস্টারি যেমন করেছেন মিলিটারি স্কুলে, তেমনি ফুটবল কোচিংও দিয়েছেন পুলিশ টিমকে। হায়দরাবাদ পুলিশ। অন্ধ্র পুলিশ। চূড়ান্ত ডিসিপ্লিন ওঁর কোচিংয়ের অন্যতম মন্ত্র ছিল। তার মধ্যেও আজিজ, লতিফের মতো নিজের হায়দরাবাদের ছেলেদের যে ভঙ্গিতে, যে ভাষায় বকাঝকা করতেন প্র্যাকটিসে ভুল দেখলে বা ম্যাচে খারাপ খেললে, চুনী- বলরাম-জার্নাল-থঙ্গরাজ, আমাকে সে ভাবে বকতেন না।
তবে ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা দেওয়ার স্টাইলে ভারতীয় দলে বাংলা, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের ফুটবলারদের টাইট দিতেন রহিম। যা ম্যান ম্যানেজমেন্টের জ্বলন্ত নিদর্শন। যেমন ধরুন, নিজের শহর হায়দরাবাদের ছেলেদের চুনী-আমার সামনে বকাঝকা করে বুঝিয়ে দিতেন, তোমরাও সাবধান! খারাপ করলে কপালে এ সব নাচছে!
তার মধ্যেও রহিমকে দেখেছি, হায়দরাবাদের ফুটবলার হওয়া সত্ত্বেও মইনকে এড়িয়ে চলতেন। বিশেষ বকাঝকা করতেন না। আসলে সেন্টার ফরোয়ার্ড মইন ওর খেলার মতোই মুখেও ‘রোবাস্ট’ ছিল। যাকে যা খুশি বলে দিত। ভীষণ চেঁচামেচি করত। মেওয়ালালকে বসিয়ে ইন্ডিয়া টিমে খেলেছে তো আর এমনি-এমনি নয়!
আমি দীর্ঘ পঁচিশ বছরের কোচিং জীবনে এ রকম কোনও নির্দিষ্ট শিষ্যকে ভয় না খেলেও, কয়েক জনকে প্রয়োজনে এড়িয়ে গিয়েছি। যখন বুঝতাম, আমার কোনও ছাত্র ইচ্ছে করে ফাঁকি মারছে, একটা লেবেল পর্যন্ত তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু তাতেও সে নিজের স্বভাব না পাল্টালে ছেড়ে দিতাম। এড়িয়ে চলতাম। পরের মরসুমের তাকে না রাখার জন্য ক্লাবকর্তাদের পরিষ্কার বলে দিতাম। কিন্তু সেই বেয়াড়া ফুটবলারের সঙ্গে কখনও সরাসরি সংঘাতে যাইনি। কারণ সেটা আমার চরিত্র নয়।
তবে আমি নিজের সব ছাত্রকে সমান বকাঝকা করেছি, এ ব্যাপারে কোনও তারতম্য রাখিনি— এতটাও দাবি করব না। সেটা মিথ্যে বলা হবে। হাবিব আমার থেকে সবচেয়ে কম বকা খেয়েছে। কারণও আছে। হাবিব আমার কোচিং জীবনে দেখা সবচেয়ে নিষ্ঠাবান ফুটবলার। দিনে পাঁচবার নমাজ পড়ত। ঠিক সে রকম ফুটবলের ব্যাপারেও ছিল ধর্মপ্রাণ। ভীষণ রকমের সৎ।
বাকি ছাত্রদের বকাঝকার ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার অবশ্য করতাম। কখনও টিমের অবাঙালি ফুটবলারের সামনে কোনও বাঙালি ফুটবলারকে বকাঝকা করিনি। কিংবা ঠিক উল্টোটাও করিনি কোনও সময়। যে ফুটবলারকে বকাঝকা করার দরকার পড়েছে, আলাদা করে ডেকে বলেছি। যার জন্য বড় টিমের বড় বড় ফুটবলারের ইগো সামলাতে আমি খানিকটা সুবিধে পেয়েছি।
আর একটা সুবিধে ম্যান ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে আমার ছিল। নিজে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হওয়ায় আমার ছাত্ররা আমাকে চট করে ঘাঁটাতে সাহস পায়নি কখনও। টিমের ফুটবলার থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সবাই জানত, এই লোকটা নিজেও বিরাট ফুটবলার ছিল। গড়পরতা কোচের মতো এর সঙ্গে ব্যবহার করলে চলবে না। টিমের ভারী ভারী নামের ফুটবলারের মতো এই কোচও ভারী।
দরকারে যে কঠিন হইনি তাও নয়। তখন আমি মোহনবাগান কোচ। ডুরান্ড কাপের ম্যাচে সুযশ বেরা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হুমড়ি খাওয়ায় ওর এক বিখ্যাত সতীর্থ ওকে মাঠেই লাথি মেরেছিল। সেই তারকা স্টপারকে সটান ডেকে বলে দিয়েছিলাম, দ্বিতীয় বার এ রকম দেখলে সোজা কলকাতা পাঠিয়ে দেব। নিজেকে কত বড় প্লেয়ার ভেবেছ?
আটাত্তরে পৌঁছেও আমি মনে করি, আমার কোচিংয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হল নিজের সততা। হার-জিত, ভাল-খারাপ, আনন্দ-দুঃখ, কোচিং জীবনের সমস্ত পরিস্থিতিতে সব সময় সৎ থেকেছি। যেমন এই মুহূর্তেই দীর্ঘ ধারাবাহিকের শেষ কিস্তি লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, আড়াই দশকেরও বেশি কোচিং কেরিয়ারে অনেক ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যারা হয়তো তেমন ধারাবাহিক নয়। মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠেছে। কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই, নিজের দিনে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। ক’জনের নাম বলব? তাতেও বোধহয় কয়েকজন বাদ পড়ে যাবে। সে রকম হলে রাগ করিস না বাবা! বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, তরুণ দে, অরূপ দাস, অতনু ভট্টচার্য, প্রবীর মজুমদার, কার্তিক শেঠ, অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুযশ বেরা, শ্যামল ঘোষ, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, উলগানাথন, শিশির ঘোষ, মইদুল ইসলাম...।
নব্বই দশক, বড় ম্যাচ, পিকে তখন সবুজ-মেরুন শিবিরে
মইদুলকে যদি আমি আরও আগে পেতাম, ও যা খেলেছে জীবনে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাল স্টপার করে তুলতাম হয়তো। আশির দশকের মাঝামাঝি আমার ইস্টবেঙ্গলে কী অনবদ্য ফুটবলটাই না খেলেছিল মইদুল! হার্টে একটা ফুটো আছে নাকি ওর। দিল্লিতে একটা ম্যাচে সিন বোন-এ এমন চোট পেল, এক ইঞ্চি গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থাতেও ডিফেন্সে নেতৃত্ব দিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচিয়েছে মইদুল।
দীর্ঘ কোচিং জীবনে আর একটা আক্ষেপ আছে আমার—এশিয়ান গেমসে দেশকে সোনা দিতে না পারা। কোচ হিসেবে সত্তরের এশিয়াডে ব্রোঞ্জ জিতেছি। এখনও মনে হয়, ওটা রুপোও হতে পারত। কোরিয়া আর ইরান যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দু’টো দেশকেই সোনার পদক দেওয়া হয়েছিল। তা হলে ওদের পরেই থাকা ভারতকে কেন রুপো দেওয়া হয়নি আজও মাথায় ঢোকেনি আমার! বিরাশিতে দিল্লি এশিয়াডে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভারতীয় দলকে তৈরি করেছিলাম। এক চুলের জন্য কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে পড়তে হয়েছিল।
তবে বড় ক্লাবের কোচ হিসেবে কোনও আক্ষেপ নেই আমার। বরং প্রত্যাশার বেশিই সাফল্য পেয়েছি। বড় ক্লাবের কথায় একটা মজার ব্যাপার মনে পড়ে গেল। এই দীর্ঘ ধারাবাহিক লেখার ফাঁকে আমার অনেক ছাত্রের ফোন পেয়েছি। মাঝেমধ্যে কোনও অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে গিয়েছে। তো কেউ কেউ যেমন তাকে নিয়ে কিছু ভাল কথা আমি লেখায় আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছে, তেমনি অনেকে অনুযোগের সুরে বলেছে, কী প্রদীপদা? আমি বাদ আপনার এত বড় লেখাতেও!
কিন্তু লেখার শেষে পৌঁছে গিয়ে আজ সাফ বলছি, আমার অসংখ্য ছাত্রের কারও থেকে ধন্যবাদ পাওয়ার প্রত্যাশায় আমি নিজের অকথিত কোচিং জীবন লিখতে বসিনি। আবার তেমনি নিজের কোন শিষ্য আমার ওপর অভিমান করবে সেই ভেবেও কারও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করিনি। যেটা সত্যি, বলার চেষ্টা করেছি। নিজের কাছে সৎ থেকেছি।
জীবনের শেষবেলায় পৌঁছেও নিজের আত্মার শুদ্ধির চেষ্টা করেছি। নইলে আমার যে চার ছাত্রের কথা ধারাবাহিকে বোধহয় সবচেয়ে বেশি লিখেছি, সেই সুধীর-হাবিব-গৌতম-সুভাষের কেউ তো আমাকে একবারও ফোন করেনি!
কোচদের সম্পর্কে তো একটা মোক্ষম কথাই আছে— এক জন কোচ সবচেয়ে শক্তিশালী তার ট্রেনিং সেশনে আর সবচেয়ে অসহায় ম্যাচে!
আজ এর সঙ্গে আর একটা লাইন যোগ করলাম আমি— কোচ ছাত্র তৈরি করেই চলবে আর ছাত্রের ব্যবহার যেমনই হোক, মাস্টারমশাই সব সময় চাইবে ছাত্রের মঙ্গল!

http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/%E0%A6%95-%E0%A6%B0%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%A4-%E0%A6%B2-%E0%A6%96%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%B8-%E0%A6%A8-1.105479