প্রতি কুম্ভে এ রকম লাখো লাখো নাগা সাধু কোথা থেকে আসেন? অনেকের বিশ্বাস, এঁরা হিমালয়ের গহনে থাকেন। কুম্ভে দর্শন দেন। কিন্তু এই ধারণার বাস্তব ভিত্তি নেই। এত হাজার হাজার নাগা সাধু হিমালয়ে থাকলে সেখানেও ভিড়ের মৌরসিপাট্টা।
কথা বলে জানা গেল, অন্য সময়ে এঁরা গেরুয়া পরেই থাকেন। গ্রামের মন্দিরে, বটগাছের নীচে যে সব সাধু স্বাভাবিক ভাবে সারা বছর থাকেন, শাহি স্নানের জুলুসে এসে তাঁরাই কেউ কেউ নাগা।
কুম্ভ তো শুধু স্নান নয়, সাধুদের উৎসব। প্রতি চার বছর অন্তর কুম্ভে আখড়ার পদাধিকারীদের নির্বাচন হয়। কে হবেন শ্রীমোহান্ত বা প্রধান, কে হবেন আখড়ার ট্রেজারার বা ‘কারোবারি’ সবেরই নির্বাচন এই কুম্ভে। মোহান্ত, কারোবারি ছাড়াও নির্বাচিত হন ‘কোতোয়াল’ ও ‘পুজারি’।
পুজারির কাজ পুজো করা। কোতোয়াল আখড়ায় শান্তিরক্ষা করেন, সাধুদের বিবাদ-বিসংবাদ মেটান। আমাদের, সাধারণ মানুষের মতোই সামাজিক ব্যবস্থাপনা। আখড়ার প্রধান সন্ন্যাসীরা মনে মনে বিমুক্ত হলেও নাগাবেশ ধারণ করে থাকেন না।
নাগা সন্ন্যাসীদের এক-একটি আখড়ায় এক-এক জন ইষ্টদেবতা। নিরঞ্জনী আখড়ার ইষ্টদেব হলেন কার্তিকেয়। বাঙালির শৌখিন, ফ্যাশনদুরস্ত কার্তিক ঠাকুর নন, দেব সেনাপতি কার্তিকেয়। জুনা আখড়ার ইষ্টদেব মহাযোগী দত্তাত্রেয়। ইনি রুদ্রের আর এক রূপ। আনন্দ আখড়ার ইষ্টদেব সূর্য, অটল আখড়ার গণপতি।
এই আখড়াগুলির সম্পত্তি প্রচুর। বারাণসীতে জুনা আখড়ার আলাদা মঠ ও ঘাট, প্রয়াগে রয়েছে নিরঞ্জনী আখড়ার সদর দফতর। বড় বড় সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরা আলাদা আশ্রমে থাকেন, কিন্তু শাহি স্নানে সকলেই থাকবেন নিজস্ব আখড়ার সঙ্গে। যেমন, পাইলটবাবা। একদা পাইলট ছিলেন, এখন ডাকসাইটে সাধু। অজস্র দেশি, বিদেশি ভক্তমণ্ডলী। কিন্তু তিনি সবসময় শাহি স্নানে থাকবেন জুনা আখড়ার সঙ্গে। সেখানকারই সদস্য তিনি। শ্রীঅমরনাথ শ্রাইন বোর্ডের মোহান্ত দীপেন্দ্র গিরি আবার নিরঞ্জনী আখড়ার। বাঙালি কনখলে আনন্দময়ী মা-র আশ্রম চেনে। সন্ন্যাস-কুলুজিতে তিনি মহানির্বাণী আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর ছিলেন।
আর রথে, ঘোড়ায় চেপে তলোয়ার, বল্লমকে স্নান করাতে আনা হয় কেন? ঐতিহাসিকদের মত, মুঘল আমলের শেষ দিক থেকে এই আখড়াগুলির রমরমা। এঁদের গজির মোহান্তদের ভূসম্পত্তি ছিল, উপরন্তু টাকা ধার দিতেন। রাজা-রাজড়াদের যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসাবেও সার্ভিস দিতেন। নিরঞ্জনী আখড়া যেমন বলে, তাদের প্রতিষ্ঠা ৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। অগ্নি আখড়া বলে, ৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে তাদের শুরু। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার এই দুই মতের কোনওটাই স্বীকার করেননি। তাঁর মতে, নিরঞ্জনী আখড়ার শুরু ১৯০৪ সালে। অগ্নি আখড়া ৪৫৭ নয়, ১৪৫৭ সালে আরম্ভ। নাগা সন্ন্যাসীরা মানুন বা না-মানুন, আধুনিক ইতিহাস কিন্তু যদুনাথের সমর্থনেই।

http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/naga-sadhu-akhra-and-their-stories-1.397119