সত্যিকারের সম্রাটেরও কি এমনই হয়!
চিরকালের জন্য মুকুট, সিংহাসন, রাজবেশ, রাজপাট ছেড়ে আসার পরে?
কখনও শোকার্ত।
কখনও আবেগের ভারে টলমল।
নিঃসঙ্গ। নিরুত্তাপ।
শেষ বিকেলের অস্তরাগ মিলিয়ে যাওয়া ম্লান সন্ধের মতো।
প্রাণচঞ্চল লেগেছে এক-আধবারই। নাতি-নাতনি পরিবৃত সেই হাবিবকে দেখে মনে হয়েছে ঈশ্বরের বাগানে বসে আছি।
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তখন মুহূর্তে ধুয়ে মুছে সাফ চারপাশে হামলে ওঠা যাবতীয় ক্লেদ।

• বড়েমিঞার দাদাগিরি
‘‘শালা, মজাক হ্যায়! কেয়া সমঝা? জিন্দেগি মে দোবারা অ্যায়সা চান্স হামকো মিলেগা?’’
সত্তর দশকের গোড়ার দিক। রোভার্স ফাইনালের দিন মুম্বইয়ে ইস্টবেঙ্গল টিম হোটেল। বেলা এগারোটা বাজতে চলেছে। আর সেই সময় কখনও সুধীর-পিন্টু, আবার কখনও গৌতম-সুভাষের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গর্জন করে চলেছেন হাবিব!
বড়েমিঞার সে এক রুদ্রমূর্তি তখন!
পিন্টু-গৌতমদের সকালে বারবার ডেকেও দরজা খোলাতে না পেরে কোচ পিকেও হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
‘‘ওরে হাবিব, দেখ তো বাবা পারিস কি না বজ্জাতগুলোর ঘুম ভাঙাতে! ভোররাত পর্যন্ত ফুর্তি করবে তো, সকালে উঠবে কী করে? আজ ফাইনাল, সেই হুঁশটুকুও নেই!’’ বলতে বলতে পিকের চোখেও তখন জল বেরিয়ে আসার জোগাড়।
মহাগুরুর শেষ কথাটা শুধু মুখ থেকে বেরনোর অপেক্ষা! প্রিয়তম শিষ্য হাবিব তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন।
‘‘কেয়া বোলতা হ্যায় প্রদীপদা? শালা কো মজাক হ্যায় না কেয়া!’’ চিলচিৎকার করতে করতে হাবিব নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটলেন সুধীর-সুভাষদের ঘরের দিকে।
তার পর সেই রুদ্রমূর্তি। গর্জন। গালিগালাজের ঝড়। পারলে টিমমেটদের দরজা লাথি মেরে ভেঙে দেন! কয়েক মিনিটের মধ্যে সুধীর-পিন্টু-গৌতমরা যে যাঁর ঘর থেকে সুবোধ বালকের মতো বেরিয়ে এলেন। রেডি হয়ে সটান কোচের ঘরে টিম মিটিংয়ে। এবং একেবারে সঠিক সময়ে!

• আজম ‘অত্যাচার’
সত্তর দশকের ময়দানের মহারথী ফুটবলারদেরও লিডার। অথচ সেই হাবিবও হায়দরাবাদে ফিরলে দাদা আজমের ‘অত্যাচারের’ শিকার!
ভাবা যায়!
ওঁদের পাঁচ ভাইয়ের সবচেয়ে বড় আজম। সারা জীবন হায়দরাবাদ পুলিশ টিমে দাপটে খেলেছেন। পঞ্চাশের দশকে টানা পাঁচ বার রোভার্স চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ পুলিশ দলের এক জন। পরে দেশের অন্যতম সেরা ফুটবল রেফারি।
একই সঙ্গে ‘কুখ্যাত’ পুলিশ অফিসার!
হায়দরাবাদের বাড়িতে ড্রইংরুমে তখন হাবিব আমাদের সামনে একা বসে। বিবি, মেয়ে, পুত্রবধু, নাতি-নাতনিরা সব অন্দরমহলে। একটু যেন আমতা আমতা করেই আজম প্রসঙ্গে বলছিলেন মিঞা।—
‘‘এমনও কয়েক বার হয়েছে, কলকাতার বড় টিমের অ্যাডভান্স রাখতে আমি দু-এক দিনের জন্য হয়তো বাড়ি ফিরেছি। দাদা আমাকে ধমকে-চমকে সেখান থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়ে নিয়েছে। নিজের দাদা তো! নিতেই পারে। কিন্তু কেড়ে নিত বলে আমার এখনও কষ্ট হয়!’’
একটু থেমে আরও বললেন, ‘‘খুব বদমেজাজি ছিল ও। সারা জীবন পুলিশে চাকরি করেছে তো! নিজে খেলোয়াড় হলেও বাকি সময়টা চোর-বদমাইশদের সঙ্গে কাটিয়ে বদমেজাজি হয়ে গিয়েছিল।’’
ফুটবলার আজম নিয়ে কিন্তু গভীর নস্টালজিক প্রৌঢ় হাবিব।—‘‘ছোটবেলায় ওর খেলা দেখেই তো ফুটবলের প্রেমে পড়া আমার,’’ বলে সখেদে আরও যোগ করলেন মিঞা। —‘‘জানেন, ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে টানা পাঁচ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন যে দিন হয়েছিলাম, প্রথমেই মনে হয়েছিল আজমভাইও এ ভাবেই টানা পাঁচ বার রোভার্স কাপ জিতেছে। ওফ! আমাকেও সে রকম একটা দুর্ধর্ষ সাফল্যের অনুভূতি দিলেন ইনসাআল্লাহ!’’

• হায়েস্ট পেইড রহস্য
গোটা সত্তর দশক তো বটেই। আশির দশকের গোড়ার দিকে অবসর নেওয়ার দু-এক মরসুম আগেও হাবিব ময়দানের হায়েস্ট পেইড ফুটবলারদের মধ্যে পড়তেন!
কী ভাবে নিজের দর এত উঁচুতে বেঁধে রাখতে পেরেছিলেন বুট জোড়া তুলে রাখার সামান্য আগে পর্যন্তও?
এত দিন পরে সেই রহস্যও হায়দরাবাদে বসে প্রথম ফাঁস করলেন বড়েমিঞা।
‘‘ও ভি এক গেমপ্ল্যান থা দাদা। ডাবল স্ট্রাইকার কা অ্যাটাক, দেখা হ্যায় তো, উসিকে য্যায়সা।’’ জানকীনগরের বাড়ির উল্টো দিকের রকে আড্ডার মেজাজে বসা হাবিবের ঠোঁটে তখন মুচকি হাসি। বিরল!
‘‘ওই সময় বেশির ভাগ সিজনে আমাকে আর আকবরকে একসঙ্গে নিতে চাইত কলকাতার বড় ক্লাব। আর আকবরের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে আমাদের দরটা আমিই সিনিয়র হিসেবে দিতাম বড় ক্লাবের অফিশিয়ালদের। দু’জনের একসঙ্গে দর। তাতে আমার কত বা আকবরের কত, সেটা পরিষ্কার জানাতাম না। কিন্তু আসলে আমার পেমেন্টটা প্রায় প্রতি বছরই ময়দানে হায়েস্ট থাকত।’’
হাবিবের রহস্য ফাঁস করার  মুহূর্তেই বাইকে চেপে হাজির আকবর। দাদার কথা শেষ হলে ভাই বললেন, ‘‘মজার ব্যাপার কী হত জানেন? ওই ফর্মুলায় হাবিবভাই যদি কেরিয়ারের শেষের দিকেও আশি-নব্বই হাজারে বড় ক্লাবে খেলেছে, তো আমিও সত্তর-পঁচাত্তরের বেশি পেমেন্ট পেয়েছি। কয়েক বার তারও বেশি।’’

• পিকে বনাম অমল
‘‘আমার মত যদি চান তা হলে বলব, এটা তুলনার বিষয়ই নয়।’’ প্রসঙ্গটা উঠতেই যেন নিজের পেনাল্টি বক্সের ভিতর বিপদের গন্ধ পেয়ে লম্বা ক্লিয়ারেন্স হাবিবের।
ততক্ষণে রক থেকে উঠে পড়ে ঘরে চলে এসেছেন। সোফায় পা তুলে বসে। তার পর কী মনে করে বলতে শুরু করলেন, ‘‘প্রদীপদাকে ক্লাব কোচের আগেও ন্যাশনাল কোচ পেয়েছিলাম আমি। সেই সত্তরের এশিয়াড থেকেই প্রদীপদার ফুটবল ফিলোজফি আমার আদর্শ। দেখেছি এই খেলাটাই ওঁর ধ্যানজ্ঞান।— ‘জিতনা হোগা ভাই, আওর জিতনে কে লিয়ে কোসিস করনা হোগা, হর্ টাইম সপনা দেখতে রহেনা পড়েগা।’ — আর এটা উনি আমার মধ্যে বুনে দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন। প্রথমে ইন্ডিয়া টিমে। তার পর বাহাত্তর থেকে টানা প্রায় এক যুগ। কখনও ইস্টবেঙ্গলে, তো কখনও মোহনবাগানে।’’
মহাগুরু ‘প্রদীপদা’-কে নিয়ে হাবিবের কথা যেন ফুরোবার নয়! —‘‘ডিসিপ্লিন… হর্ ম্যাচ মে আগ কি তরহা জ্বলনে কা যো হিম্মত—  সব শেখা প্রদীপদার থেকে। প্র্যাকটিসে ফুটবলের সব কিছু অসাধারণ ডেমনস্ট্রেশন দিয়ে দেখিয়ে দিতেন নিজে। ‘পারব না’, ‘অসম্ভব’ শব্দ দুটো ওঁর মুখে কোনও দিন শুনিনি। যেটা নিজের মধ্যেও আমি ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম।’’
পিকের প্রেরণা এতটাই হাবিবের উপর প্রভাব ফেলেছিল! বিস্তারিত করলেন মিঞা—
‘‘একাত্তরে ইন্ডিয়া টিমের রাশিয়া ট্যুর। মস্কো ডায়নামোর কাছে দু’গোলে পিছিয়ে আছি। বোধহয় সেকেন্ড হাফ হবে। হারব এক রকম পাকা। কিন্তু আমার অভ্যেস হারি-জিতি, প্রতিটা বলের পিছনে তাড়া করা। সেটা করতে গিয়েই একবার দেখি আট জন রাশিয়ান ফুটবলারের মাঝে আমি একা। বিশ্বাস করুন আট জন!
আর ওরা আমার সঙ্গে বলটা নিয়ে ‘মুরগি’ খেলা শুরু করল। এ ওকে পাস দেয়, ও তাকে পাস দেয়, সে আবার আরেক জনকে বলটা দিয়ে দেয়...। আর আমি যার কাছে বলটা যাচ্ছে, তার দিকে ছুটে বেড়াচ্ছি। এ ভাবে মিনিটখানেক চলল। মুখে ফেনা উঠে আসছে আমার। লেকিন ম্যায় ভি ছোড়নেওয়ালা নেহি। টিমমেটদের ডাকছি। জান দিয়ে চেঁচাচ্ছি... শালা তুম লোগ কাঁহা মর পড়া? আরে ভাই খুদা কসম। মেরা পাস আও! চেঁচাচ্ছি আর রাশিয়ানগুলোর পায়ে ডাইভ মারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাচ বাত, এই করতে করতে সত্যিই এক  রাশিয়ানের থেকে বলটা কেড়ে নিয়ে ক্লিয়ার করে দিলাম। তার পর আছাড় মাটিতে। চিৎপটাং!’’
একটানা অনেকক্ষণ বলে হাবিব থামলেন। আর উল্টো দিকের সোফায় বসে দ্রুত বুঝলাম— ২০১৫ নয়, এখন এই ঘরে ১৯৭১ বিরাজ করছে!
হাবিব উত্তেজিত!— ‘‘ছাত্রদের এ ভাবে চাগিয়ে দেওয়াই তো গুরুর কাজ। প্রদীপদা সেটা পারতেন। আবার ওনার কোনও স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে টিমের কোনও ফুটবলার একমত না হলেও কিছু মনে করতেন না। বরং ম্যাচে প্রদীপদার স্ট্র্যাটেজি ভুল প্রমাণ হলে নিজের টিমের প্লেয়ারের কাছে দোষ স্বীকার করার মতো স্পোর্টসম্যানও ছিলেন আমার গুরু।’’
এই যদি তাঁর ‘প্রদীপদা’ হন, তো অমল দত্ত ছিলেন তাঁর চোখে অসাধারণ ফুটবলপাণ্ডিত্য সম্পন্ন এক প্রবল মুডি কোচ। ইগো সর্বস্ব।—
‘‘অমলদার কোচিং জ্ঞান প্রদীপদার মতোই। অসাধারণ। ওই রকমই ফুটবলঅন্তপ্রাণ। কিন্তু ভীষণ ‘আমি আমি’ করতেন। প্রায় সবেতেই। আর ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব খারাপ ছিল। কখন যে কোন ফুটবলার সম্পর্কে কী বলে বসবেন!’’ খুল্লমখুল্লা হাবিব। 
বলে চললেন, ‘‘বড় ক্লাবে কোচিংয়ের চেয়েও বেশি দরকার গেমপ্ল্যান। আর ম্যান ম্যানেজমেন্ট। প্রচুর তারকাকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে হয় সেখানে। প্রত্যেক স্টারকে আলাদা আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। আবার টিমস্পিরিটও ধরে রাখতে হয়। সেটাই ম্যান ম্যানেজমেন্ট। অমলদা সেখানে নিজেই তারকাসুলভ হাবভাব নিয়ে চলতেন। অথচ ফুটবলার হিসেবে কিন্তু উনি প্রদীপদার পাশে কিছুই নন।’’
আবার ছোট্ট একটু থামা। তার পর যেন বোমা হয়ে ফাটলেন, ‘‘বলতে পারেন বিরাশিতে ইস্টবেঙ্গল টিমে অমলদার বিশ্রী ম্যান ম্যানেজমেন্টে তিতিবিরক্ত হয়েই আমার অবসর নেওয়ার চিন্তা জাগে প্রথম! পরের বছরই রিটায়ার করি।’’
চমকে যেতে হয় ওঁর কথায়। সে কেমন? খোলসা করলেন বড়েমিঞা।—
‘‘বিরাশিতে ইস্টবেঙ্গলের কী টিম! ভাস্কর থেকে বিশ্বজিৎ। সুধীর থেকে মনোরঞ্জন। তরুণ-অলোক। প্রশান্ত, অমলরাজ। মিহির, কার্তিক শেঠ, আকবর। সব পজিশনই দারুণ। অথচ বোধহয় লিগ ছাড়া কোনও ট্রফি নেই গোটা মরসুমে। এখনও মনে আছে, পরের বছরই ইস্টবেঙ্গল প্রদীপদাকে আবার কোচ করেছিল!’’
• কোচ হাবিব কা গুস্সা
টিএফএতে তিনি চুনী গোস্বামী-পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই মেগাস্টার কোচেরই ডেপুটি। জামশেদপুরের অ্যাকা়ডেমিতে টানা পনেরো বছর ছিলেন ফুটবলার তৈরির কাজে। তখন ভারতীয় দলে আসল প্লেয়ার সাপ্লাই লাইন ছিল টিএফএ-ই।—
‘‘সেই চাকরিও ম্যাচিওরড্ হওয়ার কয়েক বছর আগে আমি ছেড়ে দিলাম। বেশ কিছু টাকা বোনাস, গ্র্যাচুইটির ক্ষতি করেও,’’ বললেন হাবিব। এই বলার সময় আগের সেই উত্তেজনা উধাও। বদলে আবার বিষণ্ণ।
‘‘তার কয়েক বছরের মধ্যে হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম কী ভুলটাই না করেছি! কেন যে ময়দানে বড় ক্লাবের কোচ হওয়ার লোভে পড়লাম,’’ আবারও মিঞার গলায় কষ্ট ঝরে পড়ছে।
নব্বই দশকের শেষের দিক। টিএফএ ছেড়ে দিয়ে মহমেডান স্পোর্টিং দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাবিব। কিন্তু অল্প সময়েই কর্তাদের ময়দানি রাজনীতির চক্করে পড়ে যান।
তখন মহম্মদ হাবিবের মতো চিরকালের লড়াকু, অসমসাহসী যোদ্ধাও বলতে গেলে মাটিতে ধরাশায়ী!
অথচ ফুটবলার জীবনে তিন প্রধানের ঝানু কর্মকর্তাদের দরকারে ‘টাইট’ দেওয়াটা হাবিবের কাছে ছিল জলভাত। অনেকটা আকবরকে পেনাল্টি বক্সে থ্রু বাড়ানোর মতো। মহমেডানে কোচ হয়ে এসে বড় ক্লাবের সেই কর্তাদেরই সামলাতে পারেননি বড়েমিঞা।
‘‘মাথা নিচু করে আজ স্বীকার করে নিচ্ছি ময়দানের বড় ক্লাবের কোচ হওয়ার যোগ্য আমি নই। কোনও দিন ছিলাম না,’’ সাফ বলে দিলেন নবাব।
তার পর একটু ভেবে আরও বললেন, ‘‘আধুনিক ময়দানের প্যাঁচপয়জার জানা না থাকলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমে়ডানে কোচিং করা অসম্ভব।
এত নোংরা রাজনীতি ওখানে! আমাদের খেলার সময়েও যে এ সব ছিল না, তা নয়। তবে এতটা মারাত্মক বেশি ছিল না!’’
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সে বার হাবিবের মহমেডান তুখোড় ফাইট দিয়েছিল।—
‘‘কিন্তু টিমের ব্যাপারে যদি অফিশিয়ালরা অত বেশি নাক না গলাত, তা হলে আমি নিশ্চিত সে বার আমরা আরও ভাল রেজাল্ট করতাম। বলতে পারেন ময়দানের কর্তাদের নোংরা রাজনীতি দেখে ঘেন্নায় আমি কলকাতা থেকে পালিয়ে আসি!’’ —আবার সেই অবসন্ন সম্রাট।
‘‘কোচিং করানোর মতো শরীর এখনও আছে আমার। ইচ্ছেও আছে, যে ময়দান আমাকে এত দিয়েছে তাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। প্রদীপদা যেমন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু যত দিন না বড় ক্লাবে অফিশিয়ালদের নোংরা রাজনীতি বন্ধ হচ্ছে, কোচের উপর নন-টেকনিকাল লোকেদের খোদাগিরি থামছে, তত দিন ওই মুখো হব না, এই আমি আজ বলে দিলাম।’’ রাগ-যন্ত্রণা-দুঃখ সব তখন যেন মাখামাখি হয়ে নবাবের মুখে ফিকে হয়ে যাওয়া রামধনুর চেহারা নিয়েছে।
বড় বেদনার সেই রামধনু!
সত্তর দশকের ময়দান কাঁপানো নবাব এখন অসহায় রাগে মনে মনে গুমড়ে যান। বড়েমিঞা আজ হায়দরাবাদের বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি।
তবু ফুটবল খেলাটার আস্ত গ্রিনরুমটাকে মনের কোটরে রেখে দিয়েছেন! সকলের আড়ালে। গোপনে।

http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/special-interview-of-mohammed-habib-1.176940?ref=archive-new-stry