আফজল গুরু – বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে?
না, এটা আমার লেখা নয়। লোকে সাধারণত নিজের ব্লগে নিজের লেখাজোখাই রাখে, আমি সচরাচর তার ব্যতিক্রম নই, তবে এইবারের জন্য নিয়ম ওভাররাইড করে অন্যের লেখা নিজের ব্লগে রাখছি, যাতে আরও আরও বেশি লোক লেখাটা পড়তে পারে। এই বিষয়ে আমারও লেখার ইচ্ছে ছিল, ইন ফ্যাক্ট, আমি নিজে একটা লেখা লিখব আবার, এর পরে, কিন্তু ফর দ্য রেকর্ড, এই লেখাটা এখানে থাক, কারণ আফজলকে নিয়ে আমি লিখলে, তার বয়ান হুবহু এক রকমেরই হত। আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে রৌহিন। আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করতে হলে অনেকটা দেরি হয়ে যেত। বিশেষত, এই মুহূর্তে, রাজনৈতিক, মিডিয়া এবং বন্ধুবান্ধবের লেভেলেও পুরো ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণভাবে ঘেঁটে দিয়ে যেভাবে দেশপ্রেমের একটা সরল ইকোয়েশন বানাবার সক্রিয় প্রচেষ্টা করছে, তাতে অনেক বেশি বেশি করে এই ধরণের স্বর আসা উচিত বলে আমি মনে করি। এবং সেটা এক্ষুনি আসা উচিত। এখনই।
লেখাটা রৌহিনের। রৌহিন, আমার বন্ধু, ওর অনুমতিক্রমে এই লেখাটাকে আমার ব্লগে জায়গা দিলাম।
কথায় বলে “হাকিম নড়ে তবু হুকুম নড়ে না”।
হুকুম, রায়। সে বড়ো কঠিন ঠাঁই। একবার রায়দান হয়ে গেলে আর তার কোন নড়চড় হবার জো নেই – বিশেষতঃ সে রায় যদি আসে সর্বোচ্চ আদালতের এজলাশ থেকে। রায়দান মানে বিচারপর্ব সমাপ্ত, শেষ কথা বলা হয়ে গিয়েছে। আইন বলে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চতর আদালতে পুনর্বিচারের জন্য আনা যায় (যদিও সে বড় সহজ কম্মো নয় – ভুক্তভোগী মাত্রেই তা জানেন) – কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবে তার ওপর কোন আপীল চলে না। একমাত্র ব্যতিক্রম মৃত্যুদণ্ড – যেখানে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিলেও তা পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো যায় রাষ্ট্রপতির কাছে – তারপর রাষ্ট্রপতি সেই রায় বহাল রাখতে পারেন অথবা ক্ষমা / পরিবর্তন করতে পারেন – অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সে সুযোগটুকুও নেই। এই ব্যবস্থা আপাতভাবে আপত্তিকর মনে হলেও হতে পারে – কিন্তু বহুস্তরীয় ব্যবস্থা, বিচারবিভাগের দক্ষতা এসবের ভিত্তিতে এই বিচার ব্যবস্থাই শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসাবে মান্য। কিন্তু শ্রেষ্ঠ মানেই কি তা প্রশ্নের উর্দ্ধে? এই ব্যবস্থার দক্ষতা কি প্রশ্নাতীত?
স্বয়ং সুপ্রীম কোর্ট এই বিষয়ে কি বলেছেন একটু দেখা যাক – “All powers belong to the people and it is entrusted by them to specified institutions and functionaries with the intention of working out, maintaining and operating a constitutional order. To any civilized society, there can be no attributes more important than the life and personal liberty of its members. That is evident from the paramount position given by the courts to the Article 21 of the Constitution. These twin attributes enjoy a fundamental ascendancy over all other attributes of the political and social order and consequently, the Legislature, the Executive and the Judiciary are more sensitive to them than to the other attributes of daily existence. The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse, either under express constitutional provision or through legislative enactment is provided to the judicial organ. But, fallibility of human judgment being undeniable even in the most trained mind, a mind resourced by a harvest of experience, it has been considered appropriate that in the matter of life and personal liberty, the protection should be extended by entrusting power further to some high authority to scrutinize the validity of the threatened denial of life or the threatened or continued denial of personal liberty. The power so entrusted is a power belonging to the people and reposed in the highest dignitary of the state.” (AIR 1989 SC 653 – State Vs Kehar Singh) – সর্বোচ্চ আদালত অন্ততঃ এমন দাবী করেন নি যে তার কথাই “শেষ” কথা। বস্তুতঃ “শেষ কথা” বলে কিছু হয় কি না শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে এই অনুচ্ছেদ।
কিন্তু এই স্বচ্ছতা খুব সহজলভ্য নয় – সর্বোচ্চ আদালতের থেকেও। সম্প্রতি (কোন সময় থেকে “সম্প্রতি” ধরবেন সেটা পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় (এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানে অপরাধী, ভিক্টিম, এবং তাদের নিকটজনদের সাপেক্ষে) দেখা গেছে এই স্বচ্ছতার অভাব। এমন কি সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে এমন কিছু রায়ও আমরা সম্প্রতি দেখেছি। কিছু উদাহরণ – ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি, আরুশী তলওয়ার হত্যা মামলায় তলোয়ার দম্পতির যাবজ্জীবন, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি অথবা আফজল গুরুর ফাঁসি। এরকম কেস আরো বেশ কিছু আছে অবশ্যই – কিন্তু এগুলোকে বেছে নেবার পিছনে একটা মৌলিক কারণ রয়ে গেছে – সব কটি ক্ষেত্রেই জনমত এই সব শাস্তির পক্ষে প্রবলভাবে ছিল এবং সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে রায়দানে বিচারের নির্মোহ যুক্তিপরম্পরার তুলনায় জনতার আশা আকাঙ্খা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আপাততঃ আমরা এই তালিকার সর্বশেষ নামটি একটু খতিয়ে দেখবো – আফজল গুরু। খতিয়ে দেখবো অর্থাৎ কিছু প্রশ্ন করব – তুলব, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। এটা ধরে নিয়ে যে “The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse” এবং “fallibility of human judgment being undeniable even in the most trained mind”।
আফজল গুরুর ইতিহাস মোটামুটি পাঠকের জানা আছে – তবু একবার সংক্ষেপে মনে করে নেওয়া ভালো। ২০০১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর বিকালবেলা ভারতীয় সংসদ ভবনে এক অভুতপূর্ব আত্মঘাতী জঙ্গী হানায় পাঁচজন পুলিশকর্মী, একজন সংসদের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী, একজন মালী এবং পাঁচ জঙ্গীর সবাই নিহত হন – এবং প্রায় ২২ জন গুরুতর আহত হন (পরে এদের মধ্যে আরো দুজনের মৃত্যু হয়)। এই ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ দাবি করে পুরো অপারেশনটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়েছিল জঙ্গী সংগঠন অধুনা বিলুপ্ত লস্কর-ই-তৈবা এবং জইশ-ই-মহম্মদ নামক দুটি উগ্রপন্থী সংস্থার দ্বারা। এই ঘটনার মূল চক্রান্তকারী হিসাবে পুলিশ মোট চারজনকে গ্রেফতার করে – এরা হলেন নভজ্যোৎ সাঁধু ওরফে আফসান, শওকৎ হোসেন, এস এ আর গিলানি এবং মহম্মদ আফজল গুরু। এদের মধ্যে আফসান এবং গিলানীকে সুপ্রীম কোর্ট পরে মূল অভিযোগগুলি থেকে রেহাই দেয়। শওকৎ হোসেনকে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও পরে তা যাবজ্জীবন কারাবাস এবং শেষে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ড সুপ্রীম কোর্টে বহাল থাকে। আফজল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আবেদন করেন যা রাষ্ট্রপতির দফতরে পড়ে থাকে।
এরপরে কিছু ঘটনাক্রম কালানুক্রমে সাজানো যাক – ২৩শে জুন ২০১০ – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আফজলের ক্ষমাভিক্ষার প্রার্থনা না-মঞ্জুর করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জানায়। ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ আজমল কাসভের (২৬/১১ মুম্বাই হানার অভিযুক্ত) ফাঁসির হুকুম হয়। ১০ই আগস্ট ২০১১ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাষ্ট্রপতির দফতরকে আবার চিঠি দিয়ে জানায় যে তারা আফজলের ক্ষমাভিক্ষা না-মঞ্জুর করার সুপারিশ করছে। ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১১ দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বোমা বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামী নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন দাবী করে আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ডের বদলা নিতে এই বিস্ফোরণ তারা ঘটিয়েছে। এর প্রায় এক বছর পরে, ১৬ই নভেম্বর ২০১২, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী আফজল গুরু সহ মোট সাতটি প্রাণভিক্ষার আবেদন, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগে না-মঞ্জুর করার সুপারিশ করেছিল, পুনর্বিবেচনার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের কাছে পাঠান।
২৩শে জানুয়ারী ২০১৩ শিন্ডে শুধু আফজল গুরুর আবেদনটি পুনরায় না-মঞ্জুর করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ফেরৎ পাঠান। ৩রা ফেব্রুয়ারী ২০১৩ রাষ্ট্রপতি আফজলের ক্ষমাভিক্ষার আবেদন না-মঞ্জুর করেন। এর ঠিক ছ’দিনের মাথায়, ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সকাল আটটায় আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। অদ্ভুত ব্যপার হল এই ফাঁসির খবরটা এমনকি মিডিয়ার কাছেও ছিল না। আফজলের বাড়ির লোককে ওইদিন (৯ই ফেব্রুয়ারী) পাঠানো একটি চিঠিতে বিষয়টা জানানো হয় – যা তারা হাতে পান ফাঁসি হবার দুদিন পর (১১-০২-২০১৩)। শ্রীনগর পোস্ট অফিস জানায় তারা শনিবার সন্ধ্যায় চিঠিটি পান এবং পরদিন রবিবার হওয়ায় একদিন পরে সোমবার চিঠিটি ডেলিভারি করেন। আফজলের মৃতদেহ তিহার জেলেই কবর দেওয়া হয় এবং তার পরিবার দেহ সৎকার বা এমন কি আফজলকে শেষ দেখার সুযোগটুকুও পাননি। ফাঁসির পরদিন শুধু দূরদর্শনে এই ফাঁসির খবর ঘোষিত হয় এবং সেই সময়ে যাতে কোনরকম প্রতিবাদ সংগঠিত হতে না পারে তাই পুরো কাশ্মীরে কার্ফিউ জারি করা হয়। দূরদর্শনের ঘোষণার পর জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জনতাকে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ জানান। সমস্ত কেবল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
এবারে আমরা ফিরে যাই বিচারপর্বে – অর্থাৎ কীভাবে সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া এগোল, কীভাবেই বা চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করেও শুধু দুজনকেই শাস্তি দেওয়া হল, কিভাবে শুধুমাত্র আফজলের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকল, কী কী প্রমাণের ভিত্তিতে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল ইত্যাদি।
২০০১এর ১৩ই ডিসেম্বর মাসে পার্লামেন্ট আক্রমণের ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ তার ঠিক দু’দিনের মাথায়, ১৫ই ডিসেম্বর আফজলকে শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার করে। আফজলের কাছে তারা কীভাবে পৌঁছল? আদালতে পুলিশের বয়ান থেকে জানা যায় যে তারা প্রথম গ্রেফতার করে এস এ আর গিলানিকে – কিছু ফোন কলের সূত্র ধরে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে তারা গ্রেফতার করে শওকৎ হোসেন গুরু এবং তার স্ত্রী আফসান গুরু ওরফে নভজ্যোত সাঁধুকে এবং সবশেষে মহম্মদ আফজল গুরুকে। গিলানি বা অন্যান্য মামলাগুলি এখানে যদিও আলোচ্য নয়, তবু পাঠককে একবার মনে করিয়ে দিই যে যে ফোন কলের সূত্র ধরে গিলানিকে গ্রেফতার করা হয় সেটি শেষ অবধি আদালতে টেঁকেনি এবং তার ভিত্তিতে গিলানির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগগুলি ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং গিলানি শেষ অবধি মুক্তি পেয়ে যান। আফজলের বিচার হয় POTO (Prevention of Terrorism Ordinance) আইনের আওতায় যা পরে সংসদে আইন হিসাবে পাশ হয় এবং POTA (Prevention of Terrorism Act)তে রূপান্তরিত হয়। ১৪ই মে ২০০২ (সময়টা খেয়াল রাখবেন – গুজরাট কাণ্ডের তখনো তিন মাসও কাটেনি) বিচারপতি এস এন ধিংড়ার বিশেষ আদালতে এই বিচার শুরু হয় এবং রেকর্ড দ্রুততায় মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ৮০ জনের সাক্ষ্য সহ বিচার সম্পূর্ণ করে রায় দেওয়া হয়।
এই বিচার প্রসঙ্গে আইনের চোখে “অবান্তর” কতগুলো “গুজব” আছে – যেগুলো নিয়ে আমরা স্বভাব নিন্দুকের মত একটু প্যাঁচালি পাড়ব। যেমন জাস্টিস শ্রী ধিংড়া – দিল্লি এবং শ্রীনগর আদালত চত্বরে এঁর পরিচিতি “হ্যাঙ্গিং জাজ” বলে – এঁর হাত দিয়েই নাকি ভারতে সবচেয়ে বেশি ফাঁসির রায় বেরিয়েছে। এই মামলায় ধিংড়া সাহেবকে বিচারপতি করা হয়েছিল আইনমন্ত্রকের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে। ওদিকে মামলার ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের নাম রাজবীর সিং – পদাধিকারবলে তিনি তখন ছিলেন স্পেশাল সেলের এসিস্টান্ট কমিশনার। আইনতঃ কোন সমস্যা নেই – কিন্তু ওই যে নিন্দুকদের ব্যপার। দেশের পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলায় তদন্তকারী অফিসার হলেন একজন এসিপি – পূর্ণাঙ্গ কমিশনার জুটল না। নিয়োগ করলেন স্বয়ং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানী – যিনি নাকি আবার “লৌহপুরুষ” হিসাবে খ্যাত ছিলেন একসময়ে (ছাতির মাপ ছাপ্পান্ন ছিল না পঞ্চান্ন সেটা এই অধমের জানা নেই)। রাজবীরের হয়ে কথা “বার করা”র দায়ীত্বে ছিলেন ডিসিপি অশোক চাঁদ। ইনিও দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের “স্বনামধন্য” এবং “সুযোগ্য” অফিসার বলেই (কু?)খ্যাত।
আরো আছে – দুর্জনে বলে আফজল এই মামলায় গ্রেফতার হবার পরে বিচার শুরু হওয়া অবধি পাঁচ মাস কাল কোন আইনজীবি পায় নি – অর্থাৎ কেউ মামলা লড়তে রাজি হয়নি। শেষে মামলা আদালতে ওঠার পর “আসামী নিজে থেকে কোন আইনজীবি নিয়োগ করতে না চাওয়ায়” (আদালতের বয়ান) আদালত নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ১৭ইমে আইনজীবি সীমা গুলাটি এবং তার সহকারী নীরজ বনশলকে ডিফেন্স কাউন্সেল হিসাবে নিয়োগ করেন। অবাক ব্যপার – দেড় মাসও কাটেনি, জুলাই মাসের পয়লা তারিখে সীমা গুলাটি নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নিলেন। কারণ? – গুলাটি নাকি আরেক অভিযুক্ত গিলানির হয়ে মামলা লড়বেন, তাই তাঁর পক্ষে আফজলের হয়ে লড়া আর “সম্ভব নয়”। তা এই দেড় মাসে গুলাটি তার মক্কেলের হয়ে কী কী করলেন? একটি সিদ্ধান্ত – সব অভিযুক্তের ডিফেন্স কাউন্সেলরা সমবেতভাবে ঠিক করেন তারা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আদালতে কোনরকম চ্যালেঞ্জ করবেন না – যেমন মৃত জঙ্গীদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ইত্যাদি। এই সিদ্ধান্ত পরে আফজলের মৃত্যুবাণ হয়ে দেখা দিয়েছিল – কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। সীমা এই দেড় মাসকালে একবারের জন্যও তাঁর মক্কেলের কাছ থেকে কোনরকম নির্দেশ নেন নি বা আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেন নি। পরে এই বিষয়ে মহামান্য আদালতের পর্যবেক্ষণ -“counsel had exercised her discretion reasonably. The appellant accused did not object to this course adopted by the amicus throughout the trial” (SCJ, p 140)। অর্থাৎ মহামান্য আদালতের মতে মক্কেল তার উকিলের কাজের প্রতিবাদ করেননি – ভরসা করেছেন – কী মস্ত ভুল! তা সীমা ছেড়ে দিলেন, অসুবিধা নেই – আফজলের পরবর্তী কাউন্সেল, ২রা জুলাই থেকে সেই আদালতেরই ঠিক করে দেওয়া (গণতন্ত্রের পীঠস্থান – একটা লোক বিচার পাবে না তা তো হতে পারে না) – নীরজ বনশল। আজ্ঞে হ্যাঁ – সীমা গুলাটির জুনিয়র উকিল। একটু সাম্প্রদায়িক বদনাম আছে – তাতে কি, “ডিফেন্স” তো সলিড। আদালত বলেছেন, “taking an overall view of the assistance given by the court and the performance of the counsel, it cannot be said that the accused was denied the facility of effective defence” (ibid pp 141-42)।
চুপ চুপ – গণতন্ত্র। তা বনশল সাহেবেরও প্রয়োজন মনে হয়নি একবারের জন্যও তাঁর মক্কেলের সঙ্গে দেখা করার, তার পরামর্শ বা নির্দেশ নেবার। এবার অবশ্য আফজল আর ভরসা রাখতে পারেনি (ছ্যাঃ ছ্যাঃ) – ৮ই জুলাই সে কোর্টে তার কাউন্সেলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং চার জন উকিলের নাম উল্লেখ করে তার হয়ে মামলা লড়ার জন্য। কিন্তু কী মুশকিল দেখুন তো, একজনেরও সময় হল না – অতএব মহামান্য আদালতের নির্দেশক্রমে নীরজ বনশলই বহাল রইলেন। রাম জেঠমালানি (এই মামলায় গিলানির উকিল) পরে এক জায়গায় বলেছেন পুরো শুনানিতে নীরজের কাজ ছিল শুধু আদালতে উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়া (“his presence and participation have caused confusion and prejudice vitiating the trial”) । নীরজের কথা এই বলে শেষ করব যে তিনি ডিফেন্স কাউন্সেল হিসাবে প্রসিকিউশনের একজন সাক্ষীকেও ক্রস-এগজামিন করেননি এই মামলায়। পিরিয়ড।
প্যাঁচালি অনেক হল – এবার আসল মামলায় ঢোকা যাক। আফজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী আর কীসের ভিত্তিতে সেই অভিযোগ প্রমাণ হল “Beyond the shadow of doubt”? অভিযোগ – ১৩ই ডিসেম্বর ২০০১ ভারতীয় পার্লামেন্টে যে আত্মঘাতী জঙ্গী হানা হয়, মহম্মদ আফজল গুরুই তার মূল চক্রী এবং তিনি লস্কর-ই-তৈবা এবং জঈশ-ই-মহম্মদ নামক দুই জঙ্গী সংগঠন (এই হামলা যাদের যৌথ অপারেশন বলে প্রচার)-এর সঙ্গে যোগসাজশে এই কাজ করেছেন। এই কাজের বিনিময়ে ১২ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে আফজল, গিলানি এবং শওকৎ মিলে মোট দশ লাখ টাকা পান – ধরা পড়ার সময়ে যে টাকা তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আফজলের যে “জবানবন্দী” এই মামলার মূল “পাথুরে প্রমাণ” হিসাবে মান্য হয়েছে সেখানে বলা আছে যে জঈশ এর নেতা মৌলানা মাসুদ আজহার এবং পাক আইএসআই-এর কাশ্মীর এলাকার সুপ্রীম কমান্ডার জনৈক গাজী বাবা ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নাশকতার ছক করে। গাজী বাবার নির্দেশে জনৈক তারিক আহমেদ মহম্মদ আফজল গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাকে আজাদ কাশ্মীরের জন্য জেহাদে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। আফজল এরপরে জনৈক মহম্মদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালাতে থাকে এবং নিহত পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে চারজনকে (হামজা, হায়দার, রাজা এবং রাণা) সে-ই জোগাড় করে এবং তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং ল্যাপটপ জোগান দেবার ব্যবস্থা করে। অপারেশনের আগে দিল্লিতে তাদের গোপন ডেরার ব্যবস্থাও আফজলই করে। দিল্লিতেই এই জঙ্গীরা আফজলের খুড়তুতো ভাই শওকৎ হোসেন গুরু এবং তার স্ত্রী আফসান গুরু এবং আফজলের প্রতিবেশি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষার লেকচারার এস এ আর গিলানির সংস্পর্শে আসে। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় – আফজল কোথাও সরাসরি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত নন – তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ষড়যন্ত্র এবং দেশবিরোধী কাজের। প্রমাণ-অপ্রমাণ ব্যতিরেকে বলা যায়, এই ধরণের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে – কিন্তু তা “বিরলের মধ্যে বিরলতম” অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
এবার দেখা যাক ওই সব পাথুরে প্রমাণ কী করে পাওয়া গেল। মজার ব্যপার হল আফজলের পুরো মামলাটা যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, পরবর্তীকালে তার মূল ভিতগুলো সব একে একে ধসে গেছে। যে গিলানির সঙ্গে ফোনের যোগসাজশে আফজলকে গ্রেফতার করা হয় তিনি প্রসিকিউশনের শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই মামলায় বেকসুর খালাস পান – এবং তার বিরুদ্ধে ওই “ফোনের এভিডেন্স” আদালতে টেঁকেনি।
পরে এক এক করে পাকিস্তান যোগ, আই এস আই, জঈশ বা লস্কর যোগ সবই অপ্রমাণিত হয় এবং মূল মামলা থেকে বাদ যায় (অথচ এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে প্রায় পরমাণু যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং উভয়পক্ষের প্রায় ৮০০ সেনা এবং অন্ততঃ ১০০ নাগরিক – যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ শিশু – মারা যান। চোদ্দজনের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় দুই রাষ্ট্র মিলে প্রায় এক হাজার মানুষ খুন করে। উভয়পক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতিতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়)।
বস্তুতঃ এই পুরো মামলায় আফজলের নিয়োগ তাহলে শেষ পর্যন্ত কে বা কারা করেছিল, তার কোন উত্তর নেই। উত্তর নেই, একটা এতবড় আন্তর্জাতিক স্তরের ষড়যন্ত্রের প্রধান চক্রীর পুরষ্কার মাত্র দশ লাখ টাকা (বা প্রাথমিক তত্ত্ব অনুযায়ী তার তিন ভাগের এক ভাগ) কেন সেই হাস্যকর প্রশ্নেরও। উত্তর নেই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের – যেমন, তিন তিনটে আদালত যেখানে আফজলের মামলার শুনানি হয়েছে, প্রত্যেকে তাকে একজন “আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী” হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে আফজল অন্যূন ১৯৯৩ সাল থেকে নিয়মিত কাশ্মীরের মিলিটারি সংগঠন স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এস টি এফের কাছে আত্মসমর্পনকারী হিসাবে রিপোর্ট করেন এবং ২০০০ সালে আফজলকে এস টি এফ আরো একবার গ্রেফতার করে এবং প্রায় ছ’মাস নিজেদের হেফাজতে রাখে। ছাড়া পাবার জন্য এস টি এফের হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দিতে হয়েছিল বলেও আফজল তার জবানবন্দীতে (কোর্টের সামনে করা) জানিয়েছে। তাহলে তাদের নজরদারী এড়িয়ে আফজল এতবড় একটা ষড়যন্ত্রের অংশীদার হল এবং তা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করল কেমন করে?
আরো মজার কথা – যে তারিক আহমেদএর কথা আগে বলা হয়েছে গাজী বাবার চর হিসাবে, জানা যাচ্ছে সেই ব্যক্তি নব্বই-এর দশকে এস টি এফ এর ইনফর্মার ছিলেন এবং আফজলকেও তিনি সেই কাজে যোগ দেবার প্রস্তাব দেন। আরো আছে। পার্লামেন্টে নিহত জঙ্গীদের অন্যতম, জনৈক “হামজা” সম্বন্ধে জানা যায় যে এই ব্যক্তি ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে থানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জম্মু কাশ্মীর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় – যাদের সঙ্গে এস টি এফ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেই চলে থাকে। সুতরাং এই জঙ্গী হানার পেছনে “আসলে” কারা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি ধোঁয়াশাতেই রয়ে গেছে। এসব উত্তর না পেলে অবশ্য কারো কিছু আসে যায় না – দেশবাসী “শত্রু”র ফাঁসি হয়েছে, এই খবরেই খুশী। “জানি বাবা, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও প্রধানমন্ত্রীর নাম ঠিকানা – আর জানিনা”।
কিন্তু তাহলে হাতে রইল কি – শুধু পেনসিল? না না তা কেন – আফজলের স্বীকারোক্তি রয়েছে যে। পাথুরে প্রমাণ। এই সমস্ত ষড়যন্ত্রে তার ভূমিকা আফজল যে নিজে মুখে স্বীকার করেছে। কোথায়? মহামান্য আদালতের সামনে? আজ্ঞে না না – পুলিশের কাছে। এবং – হ্যাঁ, এবং মিডিয়ার সামনে। রীতিমত প্রেস কনফারেন্স করে বিবৃতি দিয়ে। কিন্তু তারও আগে, এনডিটিভি-তে ব্রেকিং নিউজ – আফজলের গোপন জবানবন্দী – যা নাকি তারা পুলিশের বিশেষ সোর্সের কাছ থেকে “কিনে” নিয়েছে। বস্তুতঃ এই জবানবন্দীতে আফজল যা যা বলেছে, সাংবাদিক সম্মেলনেও প্রায় একই কথা, একই ভাষায় বলেছে – শুধু একটা জায়গা বাদে। সাংবাদিক সম্মেলনে (ঘটনাচক্রে স্কুপটা আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেখানে একমাত্র আজ তক ছাড়া ভারতের আর কোন প্রথম সারির মিডিয়া ছিলই না) আফজল এই মামলায় গিলানির জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন (তখনো গিলানি অভিযোগমুক্ত হননি এবং প্রসিকিউশন প্রাথমিক গল্পে টিকে আছে) – পরে এসিপি রাজবীর যাদব উপস্থিত মিডিয়াকে অনুরোধ করেন “দেশের স্বার্থে” ওই অংশটি যেন প্রচার না করা হয়। এবং দেশপ্রেমিক মিডিয়া এই অনুরোধ রক্ষা করেন। একমাত্র কেরলের একটি এবং কাশ্মীরের একটি স্থানীয় সংবাদপত্র ছাড়া কোন সর্বভারতীয় মিডিয়ায় এই অংশটির কোন উল্লেখ দেখা যায় নি।
আর আজ তকের ওই ব্রেকিং নিউজে ওই “ছোট্ট” এনোমালিটুকু ছিলনা – আফজল একদম পুলিশের চাহিদামত গল্প খুব কনভেনিয়েন্টভাবে টিভির পর্দায় বলে যায়। এই স্বীকারোক্তিকে আদালত এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে অন্যান্য অসম্পূর্ণতা এবং অসঙ্গতিকে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন নি মৃত্যুদণ্ড দেবার আগে। অথচ এটাই কিন্তু আফজলের একমাত্র জবানবন্দী নয়। আফজল আরেকটা জবানবন্দী দিয়েছিল – হ্যাঁ, মহামান্য আদালতের সামনে, যেখানে সে বারবার তার প্রতি আনা প্রতিটা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমন কি এই বহুচর্চিত এবং “গুরুত্বপূর্ণ” জবানবন্দী নিয়েও তার বক্তব্য, পুলিশ তাকে ওই জবানবন্দী লিখে দিয়েছে এবং তা মিডিয়ার সামনে বলতে বাধ্য করেছে ভয় দেখিয়ে। যে “গোপন জবানবন্দী” আজ তক ফাঁস করেছে সেটা আসলে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের একটা রিহার্সালের রেকর্ডিং। ওই স্বীকারোক্তি দেবার জন্য পুলিশ তাকে পুরো এক দিন নগ্ন করে রেখেছে, দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে, নিজের মূত্রপানে বাধ্য করেছে। পাঠক, এই মামলার অফিসার ইন চার্জ এবং তার সহকারীর “সুনাম”গুলো আরেকবার মনে করে দেখবেন। POTAর বলে বলীয়ান পুলিশের কাছে করা স্বীকারোক্তি আদালতের কাছে এক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় আদালতের সামনে করা স্বীকারোক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
আফজলের বিরুদ্ধে আরো একটা প্রমাণ – সে মৃত জঙ্গীদের চিনত এ কথা “প্রমাণিত” হয়েছে। কীভাবে? না আফজল এদের সনাক্ত করেছে এবং সনাক্তকরণ পত্রে তার সই আছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও সনাক্তকারী হিসাবে আফজলের নাম লেখা আছে। সনাক্তকরণ পত্র তৈরি করে পুলিশ এবং তাতে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয় সনাক্তকারীর। আফজল আদালতের সামনে তার স্বীকারোক্তিতে স্পষ্টই জানিয়েছে যে তাকে পোটায় গ্রেফতার করার পর স্পেশাল সেলের অফিসারেরা তাকে নানারকম কাগজে সই করান – এবং এর মধ্যেই ওই সব সনাক্তকরণপত্রগুলিও ছিল। এগুলি সে সই করতে না চাইলেও তাকে সই করতে বাধ্য করানো হয়। এই সনাক্তকরণ রিপোর্ট বিষয়ে আফজলের উকিল তদন্তকারী অফিসারকে কোনরকম ক্রস এগজামিন করেননি, এই যুক্তিতে (!) আদালত এই বক্তব্য নাকচ করে দেয়। অন্যদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, পাঠকের খেয়াল থেকে থাকবে, ডিফেন্স কাউন্সেলদের যৌথ সিদ্ধান্তে আদালতে চ্যালেঞ্জ করাই হয়নি। অতএব দ্বিতীয় পাথুরে প্রমাণও হাজির, যার ভিত্তিতে “সন্দেহাতীত”ভাবে এই মামলায় আফজলের জড়িত থাকার, ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেবার কথা প্রমাণিত হল। অতএব এ হেন জাতীয় শত্রুর মৃত্যু ছাড়া কী-ই বা পাওয়ার থাকতে পারে? দেশের মানুষ তা-ই চায়।
আজ্ঞে হ্যাঁ – রায়ের বয়ানেও আইনের যুক্তির চেয়ে এই চাহিদাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে – “Afzal is characterised as a “menace to the society”, whose “life should become extinct” to satisfy “the collective conscience of the society.” (SCJ PP 203-04)। দেশবাসীর হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধ। জাতীয় মিডিয়া উল্লাসে ফেটে পড়েছিল রায়ের পর – এবং রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়েছিল আফজলের ফাঁসির খবর তারা আগেভাগে না জানতে পারায় – এ কথা ভুলবেন না। এই “জনমত” তৈরীর পিছনে কী নিরলস পরিশ্রম তারা করেছে, তা অন্য কোথাও আলোচনা হতে পারে – বর্তমান আলোচনার বিষয় অন্য। সেই গোড়ার কথায় আরেকবার ফিরে যাই – “The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse”। আমরা কি আবার ভাবতে বসব, আমরা, একবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষ, ভারতবাসী, “সিভিলাইজড সোসাইটি” হিসাবে গণ্য হবার উপযুক্ত কি না? যদি তা হই, বা অন্ততঃ নিজেদেরকে তাই মনে করি, তবে কি আরেকবার ওই মান হারা, প্রাণ হারা মানবের দ্বারে গিয়ে বলার সাহস রাখবো, “ক্ষমা করো”?
তথ্যসূত্রঃ
1. Of Capital And Other Punishments – by K.Balagopal (pdf link –http://balagopal.org/wp-content/uploads/2012/11/Of-Capital-And-Other-Punishments.pdf)
2. Guilty of an unsolved crime? – by Mihir Srivastava (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/afzal11.htm)
3. Statement of Mohammad Afzal to the Court (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/azfal6.htm)
4. Should Mohammad Afzal die? – by Nirmalangshu Mukherjee (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/afzal5.htm)
5. Satyameva Jayate?: With Regard to the Impending Execution of Mohammad Afzal Guru in Tihar Jail, – by Shuddhabrata Sengupta (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/afzal8.htm)
6. Pranab Mukherji’s Reply to Home Minister L. K. Advani’s Statement in Parliament on 18 December 2001 (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/afzal14.htm)
7. Manmohan Singh’s Reply to Home Minister L. K. Advani’s Statement in Parliament on 18 December 2001 (http://www.revolutionarydemocracy.org/afzal/afzal15.htm)
8. N.D. Pancholi’s Letter to NDTV regarding the Afzal Guru case (http://www.sacw.net/free/pancholitoNDTV.html)
http://achalsiki.com/2016/02/17/%E0%A6%86%E0%A6%AB%E0%A6%9C%E0%A6%B2-%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%80-%E0%A6%A8/
No comments:
Post a Comment