অবশেষে চুনীর গায়ে লাল–হলুদ রঙ
জীবনে কখনও মোহনবাগানের জার্সি ছাড়া ফুটবল মাঠে আর কিছু গায়ে চাপাননি। সেই চুনী গোস্বামীর গায়ে শনিবারের বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় উঠল লাল–হলুদ উত্তরীয়, সঙ্গে লাল–হলুদ গোলাপের তোড়া। ইস্টবেঙ্গলের ৯৬তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে এটাই স্মরণীয়তম ঘটনা। আর সেটা গায়ে চাপিয়ে এর পর চুনী যা বললেন, তার তাৎপর্য অপরিসীম। মোহনবাগানের অন্যতম ঘরের ছেলের বক্তব্য, ‘সামগ্রিকভােব ফুটবল ক্লাব হিসেবে ইস্টবেঙ্গল যতটা এগিয়েছে, সেটা মোহনবাগানের থেকে বেশি।’ কথা উঠেছিল ইস্টবেঙ্গলের পঞ্চপাণ্ডবকে নিয়ে। চুনী বললেন, ‘পঞ্চপাণ্ডবের কথা বলা হয়। কিন্তু পি কে, চুনী, বলরামকেও আলাদা করা যায় না। আমরা হয়ত একসঙ্গে ক্লাব ফুটবলে খেলিনি, কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে আমাদের যা অবদান, তাতে পি কে, চুনী, বলরামও থেকে যাবে।’ এর পরই বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গল থেকে সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুধীর কর্মকার, গৌতম সরকারের মতো ফুটবলার উঠেছে। আসলে জানি না, আমার মোহনবাগান ভক্তরা কী ভাববেন, কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে ইস্টবেঙ্গলের অবদান অনস্বীকার্য। এই দুই ক্লাব একে অন্যের পরিপূরক। ভারতীয় ফুটবলে দুই ক্লাবেরই সমান অবদান। প্রচুর ভাল ফুটবলার উঠেছে দুই ক্লাব থেকে। আজ এখানে এসে আমি আপ্লুত।’
নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুরুতে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয় প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের স্মৃতিতে। তুমুল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও উপস্থিতির হার যথেষ্ট ভাল ছিল। তার জন্য ক্লাব সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত এবং সচিব কল্যাণ মজুমদার কৃতজ্ঞতা জানান দর্শকদের। বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জির হাত দিয়ে ফুটবল অ্যালমানাকের উদ্বোধন হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় এই মরশুমের ফুটবলারদের সঙ্গে পরিচয় পর্বের মধ্যে দিয়ে। ফুটবলাররা ছাড়াও এই ‘র্যাম্প ওয়াকে’ ছিলেন কোচ, সাপোর্ট স্টাফ সবাই।
এর পর পুরস্কার প্রদান। সবার আগে ভারত গৌরব সম্মান দেওয়া হয় মহম্মদ হাবিবকে। ২ লক্ষ টাকা, লাল–হলুদ উত্তরীয়, স্মারক দেন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জি। জীবনকৃতির জন্য রমেশচন্দ্র সেন স্মৃতি ট্রফি পান চন্দন ব্যানার্জি এবং ব্যোমকেশ বসু স্মৃতি ট্রফি পান সম্বরণ ব্যানার্জি। চন্দন ব্যানার্জির হাতে পুরস্কার তুলে দেন ক্ষিতি গোস্বামী, সম্বরণকে পুরস্কৃত করেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। দু’জনকেই স্মারক ও ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। চন্দন ব্যানার্জি অর্ধেক টাকা দান করেন ইস্টবেঙ্গল, কাস্টমস, ভেটারেন্স ও জর্জ টেলিগ্রাফের মালিদের জন্য। বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে রবার্ট পান সোনার বুট। প্রণব দাশগুপ্ত তাঁর হাতে তুলে দেন বানোয়ারিলাল স্মৃতি ট্রফি। তিনিও পান ৫০ হাজার টাকা। অজয় বসু স্মৃতি সম্মান পান সাংবাদিক ধীমান সরকার। পুষ্পেন সরকার স্মৃতি সম্মান পান চিত্রসাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়। দু’জনকেই ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। শচীন তেন্ডুলকার ফাউন্ডেশনের জন্য সুমন অর্ধেক টাকা দান করেন। শচীনের অবসরের সময়ে তাঁর নিজের তোলা একটি ছবি ইস্টবেঙ্গল সচিবের হাতে তুলে দেন সুমন। সেই ছবিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সই করেছেন শচীন। দুই রেফারি সুব্রত সরকার ও উদয়ন হালদারকে দেওয়া হয় যথাক্রমে প্রতুলচন্দ্র চক্রবর্তী ও পঙ্কজ গুপ্ত স্মৃতি সম্মান। দু’জনকেই সম্মানিত করেন ক্লাবকর্তা দেবব্রত সরকার।
আপ্লুত হাবিব বললেন, ‘যখন ইস্টবেঙ্গলে খেলে গেছি, তখন ভাবতাম ক্লাব থেকে কিছুই পেলাম না। কিন্তু আজ আমি অভিভূত। আবার ডাকলে আসব।’ তাঁর প্রশংসা করে চুনী বললেন, ‘ওর শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অতুলনীয়। যখন টি এফ এ–র ডিরেক্টর হলাম, হাবিবকেই প্রথম কোচ করে এনেছিলাম।’ চন্দন ব্যানার্জি বলেন, ‘আমি, অশোক চ্যাটার্জি, শান্ত মিত্র তিন প্রাক্তন এখন অসুস্থ। কিন্তু আমরা বেঁচে আছি ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি বলে।’ সম্বরণ বলেন, ‘প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই সম্মান পেলাম। ফুটবলার, ক্রিকেটারদের আর্কাইভ করুক ক্লাব।’ বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জি বললেন, ‘ছোট থেকে মোহনবাগান সমর্থক হয়েও স্বীকার করি, ইস্টবেঙ্গলের রেকর্ড অনেক ভাল।’
http://aajkaal.in/sports/%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%B9%E0%A6%B2/
No comments:
Post a Comment