কী অলক্ষুনে কথা রে বাবা। বলে কি না আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বাংলা ভাষা আদি গঙ্গার মতো মরে হেজে  যাবে।
ষাট  ষাট। না ষষ্ঠীর দাস বলার দরকার  নেই। দেবতার দ্বারে দ্বারে মাথা ঠুকতেও হবে না। থাকবে থাকবে,  বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে।
সত্যি থাকবে তো ? নাকি এ নেহাতই আশার কথা !  
এটা ঠিকই ভাষা মরে যায়।  পৃথিবী থেকে অনেক ভাষাই লুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত ভাষা, বিলুপ্ত প্রজাতির সে বড়  বেদনার ইতিহাস লড়াই করে বজায় রাখতে পারেনি নিজেদের অস্তিত্ব।
আন্দামানের নানা দ্বীপের জনজাতির কথাই ভাবুন না কেন! তারা নেই, তাদের ভাষা নেই।  কেন  ভাষা মরে  তাই নিয়ে ডেভিড ক্রিস্টালের মতো ভাষা-ভাবুক বই ফেঁদেছেন।  এ সবই  হক  কথা। তবে বাংলা ভাষার মাথায় আন্দামানি ভাষার মতো বিলুপ্তির খাঁড়া ঝুলছে বলে মনে হয় না। কেন এ কথা বলছি তা এ ভাষার ইতিহাস-ভূগোল, অতীত-বর্তমান  ঘাঁটলে টের পাওয়া যাবে।
সে অষ্টাদশ শতক। 
দ্য গ্রেট মুঘলরা একে একে শেষ হয়ে গিয়েছে। হবেই। অমর কে কোথা কবে।  তাদের হীন-ক্ষীণ বংশধরেরা আর রাজ্যপাট সামলে রাখতে পারলে না। বাণিজ্য করতে আসা ইংরেজ কোম্পানি ক্রমে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে লাগলে।
পূর্বাংশে এমনিতেই মুঘলদের প্রতিপত্তি তেমন ছিল না,  ইংরেজদের  বেশ বারফাট্টাই  জমে উঠল। পলাশীর মাঠে সিরাজ যুদ্ধে হেরে গেল, মরে গেল। সেটা ১৭৫৭। তার বছর তিনেকের মধ্যে ১৭৬০-এ  বাংলাভাষার  খ্যাতিমান কবি ভারতচন্দ্র,  যিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভা আলো করেছিলেন,  তিনি মারা গেলেন।
আহা কী বাংলাই না লিখতেন সেকেলে  ভারতচন্দ্র! কানে মনে এক ঝটকায় লেগে যেত। কী সব লাইন। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’, ‘বড়োর পীরিতি বালির বাঁধ’, ‘দিবসে মজুরী করে/ রজনীতে গিয়া ঘরে/ নারী লয়ে যে থাকে সে সুখী’  আর উদাহরণের লিস্টি লম্বা করে কী হবে ?
এই সব লাইনের মর্ম একালেও সমানে মালুম হয়। কালজয়ী।  চাকরি বাঁচাতে বর এক দিকে, বৌ আরেক দিকে। এতে কী সুখ জমে! বিছানা খাঁ খা।ঁ সারাদিনের মজুরি করে রজনীতে ঘরে গিয়ে যে নারীকে পায় সেই তো সুখী।
বড় মানুষদের মেজাজ বোঝা ভার। ইলেকশনের মরসুম। এই কাছে টানে তো এই গলা ধাক্কা। বড়োর পিরিতি বালির বাঁধের মতো,  ভরসা নেই। তা এসবের মধ্যে এ বাজারে  তো গেরস্তদের একটাই প্রার্থনা, আমার সন্তান অন্তত যেন দুধ ভাত খেয়ে বেঁচে বর্তে থাকে।
এমন ভাবে জীবনের অভিজ্ঞতাকে যিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারতেন সেই ভারতচন্দ্র চলে গেলেন।  কৃত্তিবাস, কাশীরাম, মুকুন্দ, বৈষ্ণব পদাবলি, রামপ্রসাদ, ভারতচন্দ্র। একটা যুগ শেষ।
এর পর বাংলা ভাষার কী হবে ? মরবে, মরবে।
ইংরেজ কোম্পানি তখন  ছুঁচ হয়ে ঢুকে ক্রমে ফাল হচ্ছে। কৃষ্ণনগর-টগর ফৌত। কলকাতা নতুন কমলালয়। সেখানেই রাজধানীশ্রী। চাকরি-বাকরি।
অলংকরণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
আগেকার দিনের মতো আরবি ফারসি নয়,  ইংরেজি ভাষা ভাল করে শিখলে চাকরি-বাকরি পাওয়া যাবে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ফলে ইংরেজি ইংরেজি করছে বাঙালিরা। যে যেমন পারছে, যতটা পারছে শিখছে। 
কে কতটা ইংরেজি জানে সুযোগ সুবিধে পেলে, কিংবা সাহেব দেখলেই জানান দিচ্ছে।  রাজনারায়ণ বসু লিখেছিলেন,  সাহেবের পালকি যাচ্ছে, চাকরি চাওয়া  বাঙালি ইংরেজি-জানার ছড়া কাটছে। ‘কিউকম্বার মানে শশা, প্লৌম্যান মানে চাষা’। আহা বাহা।  ওয়ার্ড বুক মুখস্ত   বললে যদি নতুন বাজারে চাকরি মেলে। জুটেও যাচ্ছিল  কারও কারও।
বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন মুচিরামের কথা,  ঈশানবাবুর পালিত পুত্র। সে তখনকার দিনে গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়ামে  পড়া ছেলে। ইংরেজি কতটা জানে তা না বলাই ভাল, তবে কথায় ‘মাই লর্ড’ আর ‘ইয়োর অনার’  বলতে-লিখতে জানে। ব্যস। হিল্লে হয়ে গেল। এই অবস্থায় কে আর বাংলা পড়বে ?
ইংরেজি জানা উচ্চদরের উচ্চশিক্ষিত বাবু তার  বৌকে বলছে, ‘ছাই ভস্ম বাঙ্গলাগুলো পড় কেন ? ওর চেয়ে না পড়া ভাল যে। পড়িলে demoralize হয়। আমি ও সব ছুঁয়ে hand contaminate করি   না। বাঙ্গলা ফাঙ্গলা ও সব ছোটলোকে পড়ে। polished society-তে কি ওসব চলে?’ 
বঙ্কিমচন্দ্র এই ইংলিশ মিডিয়াম বাবুর কথা লিখেছিলেন ১৮৭৪ নাগাদ। তা পড়লে মনে হবে বুঝি এখনকার ‘ইংলিশ মিডিয়াম ছেলে মেয়ের গার্জেন’-এর  ডায়ালগ। ‘বাঙ্গলা ফাঙ্গলা’ ও সব আমার ছেলে-মেয়ের আসে না। 
উনিশ শতকে তো বাংলা মরে যায়নি।  বঙ্কিমের পর রবীন্দ্রনাথ, বাংলা কী হতে পারে আর কী করতে পারে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
উনিশ থেকে বিশ শতক। বাংলা ভাষার জল যে কত কলকল করে বইল তার ঠিক-ঠিকানা নেই। তিন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিমল কর, সমরেশ বসু, সুনীল-শক্তি-শ্যামল-সন্দীপন-তারাপদ আরও অনেকে।  সাহিত্যে ভর দিয়ে ভাষা রইলে। সুতরাং বাংলা  ভাষা সেদিন যখন মরেনি, এখন আজ থেকে পঞ্চাশ বছরে পরেই বা  মরবে কেন?
জানি জানি! বলবেন একালের রোগটা আরও কঠিন।
অনেক ইতি-উতি প্রশ্ন।  বইমেলা হয় নিয়ম করে কিন্তু বাংলা বইয়ের বিকিকিনি কি আশাপ্রদ? বাংলায় হালে যাঁরা গপ্পো উপন্যাস লিখছেন তাঁরা কজন পপুলার, পাঠকভোগ্য ? কয়েক বছরে বেশ কয়েকটা নতুন প্রকাশক মাথা তুলেছেন, বাজারে অন্য রকম বই এনেছেন,  কিন্তু এতে কি বৃহত্তর বাংলা বাজারের পালে হাওয়া লেগেছে ? এগুলো রোগের উপসর্গ। আসল রোগটা হল বাংলা ভাষা সংস্কৃতির প্রতি উদাসীনতা।
সাধারণ পাব্লিক আর  বাংলা খাচ্ছে না। খাবে কেন ?  কী আশায় বুক বাঁধবে ?    তা এই  রোগটা তো আমাদের মধ্যে একদল ইচ্ছে করেই  বাঁধালেন। তাও বাঁধালেন রবীন্দ্রনাথের দোহাই দিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গের আগমার্কা বামপন্থীদের কথা বলছি। এককালে রবীন্দ্রনাথকে তাঁরা জমিদারের  ছেলে, পরের টাকায় লপচপানি করা বুর্জোয়া বলে দূরে রেখেছিলেন। সেই বুঝি ভাল ছিল। হঠাৎ কী খেয়াল হল, ‘তিনি আমাদের লোক’ বলে রবীন্দ্রনাথের ওপর সরকারি সিলমোহর লাগিয়ে দিলেন। রবীন্দ্রনাথ না কি মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা বলেছিলেন।
বলেছিলেন, তবে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার কথা বলেননি, লার্নিং ইংলিশের মতো সাহিত্যগুণহীন বই দিয়ে  না-শেখানোর মতো  ইংরেজি শেখানোর কথা বলেননি। বরং শান্তিনিকেতনে খুব মন দিয়ে তিনি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি শেখাতেন। নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথকেও ভাল করে ইংরেজি শেখাতে কসুর করেননি।
রবীন্দ্রনাথ  কেমন করে ক্লাস নিতেন  তাঁর নথিপত্র কিছু আছে। কী পরিশ্রম যে করতেন! বাংলা মিডিয়ামের ফাঁকিবাজ মাস্টারমশাইরা যদি একটু ভাবতেন।
রবীন্দ্রনাথ  প্রথমে একটা ইংরেজি কবিতা পড়ে শোনালেন। তারপর সরল ইংরেজি গদ্যে পদ্যটার মানে বলে দিলেন। তারপর পদ্যের এক একটা লাইন তুলে ছেলেমেয়েদের সেটাকে আরও কত রকম ভাবে লেখা যায় দেখাতেন। এমনকী স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যাতে ইংরেজিতে নাটক করতে পারে তার জন্য ইংল্যান্ড থেকে ইংরেজি নাটক লিখে পাঠিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল ছেলে-মেয়েরা বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাই শিখুক। দুই ভাষা কেন, যত পারে ভাষা শিখুক। অন্যান্য ভারতীয় ভাষা, বিদেশি ভাষা।
স্বাধীনতার আগে পরে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় বেশ কিছু বাংলা মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠেছিল। সেখানে দুটো ভাষা অন্তত  দিব্যি শেখা যেত। ভাল বাংলা স্কুল ছিল বলে বাংলা গান, বাংলা বই, বাংলা ছবি এসবের প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহও ছিল।  এই সব  বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে এখন বিশ্বখ্যাত এমন মানুষজনের সংখ্যা কম  নয়। ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর কথাই ভাবুন না। দক্ষিণ কলকাতার ছেলে, বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্র।
আগমার্কা বামপন্থীরা পরিকল্পনাহীন ভাবে সব কিছু বাংলায় করতে গিয়ে আমাদের এই  বাংলা আর ইংরেজি ‘লার্নিং’-এর ভিতটাকে  নষ্ট করে দিলে। বাঙালি বাংলা ভাষা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ হারালে, সেল্ফ কনফিডেন্স বলে কিছু যেন রইল না।
১৯৮৬ সাল নাগাদ স্কুলে স্কুলে লার্নিং ইংলিশ পর্ব। তার ফলে বাঙালি পড়ুয়াদের মধ্যে ইংরেজির কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে গেল।
এ দিকে আবার ১৯৯০-এর পর থেকে ক্রমে ক্রমে অর্থনীতির চেহারা গেল বদলে। বিদেশি পুঁজি এল, কোম্পানি এল। দেশি কোম্পানি বিলিতি কোম্পানি এরকম ভাগা-ভাগি আর বজায় রাখা গেল না। মিলে মিশে ঘণ্ট।
তাদের কাছে চাকরি করতে গেলে ইংরেজি জানা চাই। লার্নিং ইংলিশ পড়া বাংলা মিডিয়ামদের পক্ষে চাকরি পাওয়া মুশকিল। সুতরাং সবাই ভেবে নিলে ইংলিশ মিডিয়ামই গতি। বাংলা-ফাংলা পড়ে কী হবে? এখান থেকেই রোগ উঠল পাকিয়ে। ইংরেজি বুঝি ধরে, বাংলা বুঝি এবার মরে। আর মাত্র পঞ্চাশ বছর। তারপরেই আংলা বাংলার মৃত্যু। খই  ছড়াতে ছড়াতে সোজা ইলেকট্রিক চুল্লি।
সেই মরার লক্ষণ সব নাকি নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের শরীরে-অশরীরে ফুটে  ফুটে উঠছে। উচ্চারণের দফা-গয়া। কে যে কী অ্যাকসেন্টে বাংলা বলে! সেই বিচিত্রবাদিনী  রাত্রিদিন বাংলা ব্যান্ড, বাঙালির এফ এম, বাঙালির চ্যানেলে নেত্য করছে। একটা বাংলা শব্দ তো সাতটা ইংরেজি, তিনটে হিন্দি। ক্রিয়া পদের মাথামুণ্ডু নেই। মিস্ড কল মারে, আদর পায় , হ্যাপি থাকে। বানানের কথা বেশি না বলাই ভাল। বাংলা বই পড়ার বালাই নেই। সুতরাং। গো, ওয়েন্ট, গন। পঞ্চাশ  বছরের মধ্যে সেই যে বাংলা  ইলেকট্রিক চুল্লিতে গন গনাগন হবে , তারপর নেভার রিটানর্। আবার সে এসেছে ফিরিয়া বলার লোক থাকবে না। 
এ কথা অবশ্য পুরোটা মানা যাচ্ছে না। আলো এখনও নেভেনি। কেন ? এ বার সে কথা।
প্রথমত এই সংকট শুধু বাংলা ভাষার নয়। অন্যান্য ভারতীয় ভাষার ক্ষেত্রেও এই সমস্যা প্রবল। ইংরেজির সঙ্গে তাদেরও লড়াই করতে হচ্ছে।
আর ইংরেজি! সেখানেও কি সংকট  নেই ? খোদ ইংল্যান্ডে মাঝে মাঝেই কথা উঠছে নব্য প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়ে। তারা ইংরেজি বানান, ব্যাকরণ কিস্যু জানে   না। শুধু টেক্সট করে এস এম এস। ইংরেজির সেই কৌলীন্য নেই। রানির ইংরেজি এখন অচল।  ভাষাটাকে যে যেমন করে পারে ব্যবহার করেছে।  আমরা ভারতীয়রাই এই ভাষাটাকে কত ভাবে কত উচ্চারণে বলি।
বিমল করের গপ্পের ম্যাজিশিয়ান গোয়েন্দা কিকিরা-র কথা মনে নেই! কিকিরার বাবার নাক একজন অ্যাংলো ঘুষি মেরে ভেঙে দিয়েছিল। অ্যাংলোরা হাফ ইংলিশ। সেই থেকে কিকিরা-র ইংরেজি ভাষার ওপর বেজায় রাগ। তাঁর ‘মুখ থেকে হরদম ইংলিশ বেরোয়, নো গ্রামার’, এই সব দি গ্রেট বাঙালির মার খেয়েও ইংরেজি ভাষা দিব্যি বেেঁচে আছে। তাহলে বাংলাই বা মরবে কেন? সংকট তো শুধু বাংলার নয়।
অন্য একটা কথাও খেয়াল করার। লার্নিং ইংলিশ পর্বেও অন্য রকম বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে বেশ কিছু বাঙালি ছেলেমেয়ে দিব্য বাংলা ইংরেজি শিখে নিয়েছে। এখন  ত্রিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে তাদের বয়স। 
তাদের অনেকেই দেশের বাইরে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে  বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমানের কাজ করে। বাংলা ভাষার সঙ্গ কিন্তু ছাড়েনি। কনফিডেন্স অটুট। এদের অনেকেই  দেশের ছেলে-মেয়েদের জন্য বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার ব্লগ চালায়।
বিশ্বাস না হলে  কেমব্রিজের রাজিবুল ইসলাম,  জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অর্ণব রুদ্রের প্রোফাইল দেখুন। 
আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করি সেই বিশ্বভারতীতে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সিদ্ধার্থ শিবকুমার আর পরন্তপ। দুজনেই বাংলা ভাষার জন্য যাকে বলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়।
সিদ্ধার্থ তিনপাহাড় বলে একটা কালচারাল ওয়েবসাইট চালায়, ইংরেজি বাংলা দুই সেখানে পাশাপাশি পাত পেড়েছে। পরন্তপ আবার ধ্রুপদী বাংলা বই ডিজিটাইজ করতে ব্যস্ত। পরন্তপ ও তার বন্ধুদের দৌলতে অনলাইন অবনীন্দ্রনাথ পড়া যাচ্ছে।
সিদ্ধার্থ পরন্তপ এরা তো তিরিশের তলায়, তরুণ তুর্কি এছাড়া তরুণ  কবিরা তো আছেই। রাকা দাশগুপ্ত এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর থিয়োরেটিক্যাল ফিজিক্সে পোস্ট ডক করে, বাংলায় কবিতা লেখে।  রাকা লিখেছিল, ‘মানুষ পুতুল হোক, পুতুলও মনুষ্য হয়ে যাক’।
ওর কবিতার লাইন একটু অন্য রকম করে ভাবতে ইচ্ছে করে। এই আমাদের  জটিল সময়। মানুষ শুধু পুতুল হচ্ছে না, পুতুলও মানুষ হচ্ছে।
এক দিকে মনে হচ্ছে প্রাণহীন  নির্জীব হয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা,  আরেক দিকে ভাষা নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে এই টানাপড়েন চলছে, চলবে। এতে ভাষাটা মরে  যাবে  তা নিশ্চিত করে  বলতে পারি না।
কী বা বলতে পারি নিশ্চিত করে! শুধু  বলতে ইচ্ছে করে শত্রুর মুখে দিয়ে ছাই, আমরা বাংলায় তুমুল হই হল্লা করে যাই। আসল কথা সময়ই বলে দেবে।


http://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/%E0%A6%86-%E0%A6%AE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC-%E0%A6%B2-%E0%A6%AD-%E0%A6%B7-1.22735#