শিবরামের গল্পশৈলী আর শৈলর চিত্রশৈলী ছিল সহোদর।
দুজনের নামের শুরু ‘শ’ আর পদবি ‘চক্রবর্তী’ হওয়ায় অনেকেই ভাবতেন এই দু’জন মানুষ বুঝি দুই ভাই।
শুধু তাই নয় শিবরাম চক্রবর্তীর যে কার্টুন প্রতিকৃতি শৈল চক্রবর্তী এঁকেছিলেন, সেটাই শিবরামের পরিচিত প্রতিকৃতি। মজার কথা হল, এক সঙ্গে কাজ করতে করতে শৈল চক্রবর্তীরও শিবরামের মতো ‘পান’-এর দোষ এসে গিয়েছিল।
তেমনই এক বর্ণনা আছে এক জায়গায়।
একদিন সকালে তিনি গেছেন শিবরামের মেসে। গিয়ে দেখেন শিবরাম যথারীতি তক্তপোশো উপুড় হয়ে শুয়ে। আর ঘরে নতুন আমদানি হয়েছে একটি ইজি চেয়ার।
শৈল শিবরামকে ডেকে তুলে বললেন, ‘‘এই ইজি চেয়ার বস্তুটি কী ভাবে আমদানি হল দাদা?’’
‘‘আহা ওটা ইজি চেয়ার নয়, মোস্ট আনইজি চেয়ার।’’
শিবরামের উত্তরে সেই চেয়ারের সামনে গিয়ে শৈল দেখলেন সত্যিই তাই। চেয়ারের মাঝখানে বসার জায়গাটার কাপড় ছিঁড়ে ফর্দাফাঁই। তাই কেউ দিয়ে গেছে বোধ হয়। আর শিবরামও অম্লানবদনে নিয়ে নিয়েছেন।
শৈলর দিকে তাকিয়ে শিবরাম বললেন, ‘‘দেখলেন তো ওটার পিঠস্থানটাই শুধু সুস্থ আছে।’’
শৈল উত্তর করলেন, ‘‘হ্যাঁ তবে সিটস্থান একেবারে শূন্য।’’
শিবরামের অনেক শিবরামীয় ঘটনার সাক্ষী ছিলেন শৈল চক্রবর্তী।
একবারের ঘটনা।
সাতসকালে শিবরাম এসে হাজির শৈলর বাড়িতে। হাতে একগোছা কাগজ। কাগজের বান্ডিলটা শৈলর সামনে নামিয়ে দিলে শিবরাম বললেন, ‘‘এই নিন, আমার পরের বইয়ের পাণ্ডুলিপি। সবকটা গল্পের ছবি করে দিন।’’
শৈল বললেন, ‘‘ঠিক আছে রেখে দিন, করে রাখব।’’
‘‘না না, আমার আজই চাই। আপনি করতে থাকুন। আজ আমি আপনার বাড়িতেই থাকব,’’ বলে শিবরাম নিশ্চিন্তে শৈলর স্ত্রীকে বললেন, ‘‘কই বউদি, এখন এক বাটি তৈলচর্চিত মুড়ি দিন। আর আমার দুপুরের আহারও এখানেই।’’
বেচারা শৈল গল্প পড়ে কাজ করতে শুরু করলেন। আর শিবরাম তেল দিয়ে মুড়ি মাখা খেয়ে তারপর স্নান করে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে শৈলরই বিছানায় টেনে ঘুম।
বিকেলে কাজ শেষ হল।
ছবিগুলো হাতে দিয়ে শৈল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আচ্ছা শিবরামবাবু, আপনি নিজেই গল্পগুলো নিয়ে এলেন কেন? এগুলো তো প্রকাশকের কাজ।’’
‘‘আহা বোঝেন না কেন, আমার গল্প হল ছিপ আর আপনার ছবি হল চার। এবার তো প্রকাশক টপ করে গিলবে। আর ফেরাতে পারবে না। একেবারে নগদ বিদায় নিয়ে ছাড়ব।’’
শুনে শৈল হেসে অস্থির। আর শিবরাম রওনা দিলেন প্রকাশকের দফতরে