সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট
বসন্তের অলস দুপুরে হঠাৎ বুকে চমক লাগানো বাসনওয়ালার কাঁসরের আওয়াজ, ঠংঠং শব্দে টানা রিকশার এগিয়ে চলা, বিকেলে হতেই বেলফুলের মালা আর রাত বাড়তেই কুলফি মালাইওয়ালার ডাক মিশে যায় পাড়ার আনাচে কানাচে। গায়ে গায়ে নতুন পুরনো অসংখ্য বাড়ি, প্রকাশকদের দফতর, বই বাঁধাইয়ের কারখানা আর ছাপাখানা— এই নিয়েই আমার পাড়া সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট। এ পাড়ার ল্যান্ডমার্ক পাড়ার মুখে বেনিয়াটোলা লেনে আনন্দ পাবলিশার্স-এর বহু স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটা। এ সব নিয়েই আমার পাড়ার বর্ণময় ছবিটা।
এক দিকে আমহার্স্ট স্ট্রিট শিবমন্দিরের গা ঘেঁষে শুরু হয়েছে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট। অন্য দিকে, মহাত্মা গাঁধী রোড সংলগ্ন বেনিয়াটোলা লেন পেরিয়ে আমাদের পাড়াটা কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে গিয়ে মিশেছে। কাছেই কলেজ রো, নবীন পাল লেন ও ট্যামার লেন। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। শৈশব, কৈশোর, যৌবন অতিক্রম করে চলছে বার্ধক্যের দিনযাপন।
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের হাওয়া এ পাড়াতেও প্রভাব ফেলেছে। এ পাড়ায় আগে ছিল মূলত গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের বসবাস। এখন অন্যরাও এসেছেন। পাড়া থেকেই গন্ধবণিক মহাসভা, শিক্ষা সমিতি ও দাতব্য সভার সূত্রপাত। আশপাশে পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে বহুতল। আসছেন নতুনরা। এক সময় পাড়ায় নতুন কেউ এলে পুরনোরা গিয়ে আলাপ করতেন। নতুন জায়গায় তাঁদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না খোঁজখবর নিতেন, এ ভাবেই তাঁরাও পাড়ার আরও পাঁচটা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে যেতেন। আজ ছবিটা ভিন্ন। পাড়ায় কে এল, কে বা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র গেল সে খবর রাখার সময় কারই বা আছে? কালের প্রভাবে সকলেই যেন আত্মকেন্দ্রিক, নিজেদের নিয়ে থাকতে ভালবাসেন। তবে যে কোনও সমস্যায় পাড়ার যুবকেরা এগিয়ে এসে সাহায্য করে। কাছেই কলেজ স্কোয়্যারে হয় পাখির প্রদর্শনী। সেখানেই চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বসে বহু পুরনো চড়কের মেলাও।
এক দিকে আমহার্স্ট স্ট্রিট শিবমন্দিরের গা ঘেঁষে শুরু হয়েছে সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট। অন্য দিকে, মহাত্মা গাঁধী রোড সংলগ্ন বেনিয়াটোলা লেন পেরিয়ে আমাদের পাড়াটা কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে গিয়ে মিশেছে। কাছেই কলেজ রো, নবীন পাল লেন ও ট্যামার লেন। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। শৈশব, কৈশোর, যৌবন অতিক্রম করে চলছে বার্ধক্যের দিনযাপন।
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের হাওয়া এ পাড়াতেও প্রভাব ফেলেছে। এ পাড়ায় আগে ছিল মূলত গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের বসবাস। এখন অন্যরাও এসেছেন। পাড়া থেকেই গন্ধবণিক মহাসভা, শিক্ষা সমিতি ও দাতব্য সভার সূত্রপাত। আশপাশে পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে বহুতল। আসছেন নতুনরা। এক সময় পাড়ায় নতুন কেউ এলে পুরনোরা গিয়ে আলাপ করতেন। নতুন জায়গায় তাঁদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না খোঁজখবর নিতেন, এ ভাবেই তাঁরাও পাড়ার আরও পাঁচটা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে যেতেন। আজ ছবিটা ভিন্ন। পাড়ায় কে এল, কে বা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র গেল সে খবর রাখার সময় কারই বা আছে? কালের প্রভাবে সকলেই যেন আত্মকেন্দ্রিক, নিজেদের নিয়ে থাকতে ভালবাসেন। তবে যে কোনও সমস্যায় পাড়ার যুবকেরা এগিয়ে এসে সাহায্য করে। কাছেই কলেজ স্কোয়্যারে হয় পাখির প্রদর্শনী। সেখানেই চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বসে বহু পুরনো চড়কের মেলাও।
ছবি: রণজিৎ নন্দী
সময়ের প্রভাবে পাড়াপড়শির সঙ্গে যোগাযোগটা কমেছে ঠিকই তবে ছিন্ন হয়নি আত্মিক সম্পর্ক। কমেছে বাড়িতে যাতায়াতের অভ্যাসটাও। এখন রাস্তায় কিংবা উৎসবে অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হলে ক্ষণিকের জন্য তাঁরাও অতীতের স্মৃতিতে ডুব দেন।
সময়ের সঙ্গে কমলেও হারায়নি এ পাড়ার আড্ডা। এ পাড়ার আড্ডা মানে নিছক সময় কাটানো নয়। গল্পের পাশাপশি সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনাও হয়। বাদ যায় না বাজেট থেকে নির্বাচন। এই আড্ডাটাই মানুষে মানুষে যোগাযোগটা ধরে রেখেছে। এখনও দু’টি রকে প্রতি দিন সন্ধ্যায় আড্ডা বসে। এ ছাড়াও ছুটির দিনে আড্ডার ঝলকটা বেশি চোখে পড়ে।
অন্য পাড়ার মতোই এ পাড়াতেও বসেছে জোরালো আলো, নিয়মিত জঞ্জাল অপসারণ, রাস্তা পরিষ্কার করাও হয়। কাউন্সিলর স্বপ্না দাস এলাকার উন্নয়নে ভালই কাজ করছেন। এখনও এ পাড়ায় টিকে আছে খেলাধুলোর পরিবেশ। তবে সেটা ছুটির দিনে বেশি দেখা যায়। কাছেই কলেজ স্কোয়্যারে রয়েছে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের উপরেই রয়েছে নরেন সেন স্কোয়্যারের মাঠটি
এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। এক দিকে শিয়ালদহ স্টেশন, অন্য দিকে হাওড়া স্টেশন। কাছেই মেডিক্যাল কলেজ আর আমহার্স্ট স্ট্রিটে বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মাড়োয়ারি হাসপাতাল। ঢিল ছোড়া দূরত্বে বইপাড়া, হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বাড়ির পিছনেই প্যারীচরণ দাসের ঠাকুরবাড়ি। এখানে আছে সর্বমঙ্গলা ও পঞ্চকন্যা ঠাকুরবাড়ি ও বহু প্রাচীন দয়াময়ী দুর্গামন্দির।
এক সময় এ পাড়ায় থাকতেন কিছু বিখ্যাত মানুষ। বেনিয়াটোলা লেনে থাকতেন সেকালের প্রখ্যাত চিকিৎসক রতনচন্দ্র পাল। যিনি শবদেহের ব্যবচ্ছেদকারী প্রবাদপ্রতীম মধুসূদন গুপ্তের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কাছেই থাকতেন ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকার সম্পাদক নরেন সেন। পাড়াতেই থাকতেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন দুই সচিব দীপক দাস (যিনি পল্টু দাস নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন) আর জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত। সীতারাম ঘোষ যাঁর নামে এই রাস্তাটি তিনি ছিলেন বড়িশা ঘোষ পরিবারের আদি পুরুষ। এ পাড়ায় চার পুরুয আমাদের বসবাস। পূর্বপুরুষদের কীর্তিস্বরূপ তিনটি প্রাচীন শিব মন্দির মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
কাছেই মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। সেখানেই যাতায়াত ছিল ভারত-বিখ্যাত শিল্পীদের। বেগম আখতার থেকে রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, কানন দেবী কে না আসতেন সেখানে।
এ অঞ্চলে বেশ কিছু দুর্গাপুজো হলেও কালীপুজোর আকর্ষণটা কিন্তু বেশি। আশপাশেই রয়েছে কিছু বিখ্যাত কালীপুজো। যেমন সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে ফাটাকেষ্টর কালীপুজোটি। এই পুজোয় উত্তম-সুচিত্রা থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন কে আসেননি? তবে পাড়ার পল্লি যুবকবৃন্দের ঘরোয়া দুর্গাপুজোটি বাড়ির পুজোর আমেজটা আজও ধরে রেখেছে।
এলাকার বাজার বলতে কলেজ স্ট্রিট বাজার। পুরনো বাজারের জায়গায় গড়ে উঠেছে আধুনিক বাজার। তাতে হারিয়ে গিয়েছে বহু দিনের পরিচিত ক্রেতা বিক্রেতার আন্তরিক সম্পর্কটা। হারিয়েছে কালীপুজোয় ফানুস ওড়ানোর ঐতিহ্যও। তবে বিশ্বকর্মা পুজোয় এখনও অল্প হলেও ঘুড়ি ওড়ে। আগে ছাদের কার্নিশে কাচের বয়ামে যে আচার শুকোতো তার সদ্ব্যবহার হত প্রতিবেশির পাতে। সে সব আজ শুধুই স্মৃতি।
এ পাড়াটাই আমাকে দিয়েছে মূল্যবোধ, সংস্কার। এখানেই পেয়েছি অনাবিল আনন্দ। সারাটা জীবন এখানে কাটিয়ে জীবনের শেষটাও এখানেই কাটাতে চাই। শিকড়ের টান হয়তো একেই বলে।
সময়ের সঙ্গে কমলেও হারায়নি এ পাড়ার আড্ডা। এ পাড়ার আড্ডা মানে নিছক সময় কাটানো নয়। গল্পের পাশাপশি সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনাও হয়। বাদ যায় না বাজেট থেকে নির্বাচন। এই আড্ডাটাই মানুষে মানুষে যোগাযোগটা ধরে রেখেছে। এখনও দু’টি রকে প্রতি দিন সন্ধ্যায় আড্ডা বসে। এ ছাড়াও ছুটির দিনে আড্ডার ঝলকটা বেশি চোখে পড়ে।
অন্য পাড়ার মতোই এ পাড়াতেও বসেছে জোরালো আলো, নিয়মিত জঞ্জাল অপসারণ, রাস্তা পরিষ্কার করাও হয়। কাউন্সিলর স্বপ্না দাস এলাকার উন্নয়নে ভালই কাজ করছেন। এখনও এ পাড়ায় টিকে আছে খেলাধুলোর পরিবেশ। তবে সেটা ছুটির দিনে বেশি দেখা যায়। কাছেই কলেজ স্কোয়্যারে রয়েছে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের উপরেই রয়েছে নরেন সেন স্কোয়্যারের মাঠটি
এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। এক দিকে শিয়ালদহ স্টেশন, অন্য দিকে হাওড়া স্টেশন। কাছেই মেডিক্যাল কলেজ আর আমহার্স্ট স্ট্রিটে বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মাড়োয়ারি হাসপাতাল। ঢিল ছোড়া দূরত্বে বইপাড়া, হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বাড়ির পিছনেই প্যারীচরণ দাসের ঠাকুরবাড়ি। এখানে আছে সর্বমঙ্গলা ও পঞ্চকন্যা ঠাকুরবাড়ি ও বহু প্রাচীন দয়াময়ী দুর্গামন্দির।
এক সময় এ পাড়ায় থাকতেন কিছু বিখ্যাত মানুষ। বেনিয়াটোলা লেনে থাকতেন সেকালের প্রখ্যাত চিকিৎসক রতনচন্দ্র পাল। যিনি শবদেহের ব্যবচ্ছেদকারী প্রবাদপ্রতীম মধুসূদন গুপ্তের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কাছেই থাকতেন ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকার সম্পাদক নরেন সেন। পাড়াতেই থাকতেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন দুই সচিব দীপক দাস (যিনি পল্টু দাস নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন) আর জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত। সীতারাম ঘোষ যাঁর নামে এই রাস্তাটি তিনি ছিলেন বড়িশা ঘোষ পরিবারের আদি পুরুষ। এ পাড়ায় চার পুরুয আমাদের বসবাস। পূর্বপুরুষদের কীর্তিস্বরূপ তিনটি প্রাচীন শিব মন্দির মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
কাছেই মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। সেখানেই যাতায়াত ছিল ভারত-বিখ্যাত শিল্পীদের। বেগম আখতার থেকে রাইচাঁদ বড়াল, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, কানন দেবী কে না আসতেন সেখানে।
এ অঞ্চলে বেশ কিছু দুর্গাপুজো হলেও কালীপুজোর আকর্ষণটা কিন্তু বেশি। আশপাশেই রয়েছে কিছু বিখ্যাত কালীপুজো। যেমন সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে ফাটাকেষ্টর কালীপুজোটি। এই পুজোয় উত্তম-সুচিত্রা থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন কে আসেননি? তবে পাড়ার পল্লি যুবকবৃন্দের ঘরোয়া দুর্গাপুজোটি বাড়ির পুজোর আমেজটা আজও ধরে রেখেছে।
এলাকার বাজার বলতে কলেজ স্ট্রিট বাজার। পুরনো বাজারের জায়গায় গড়ে উঠেছে আধুনিক বাজার। তাতে হারিয়ে গিয়েছে বহু দিনের পরিচিত ক্রেতা বিক্রেতার আন্তরিক সম্পর্কটা। হারিয়েছে কালীপুজোয় ফানুস ওড়ানোর ঐতিহ্যও। তবে বিশ্বকর্মা পুজোয় এখনও অল্প হলেও ঘুড়ি ওড়ে। আগে ছাদের কার্নিশে কাচের বয়ামে যে আচার শুকোতো তার সদ্ব্যবহার হত প্রতিবেশির পাতে। সে সব আজ শুধুই স্মৃতি।
এ পাড়াটাই আমাকে দিয়েছে মূল্যবোধ, সংস্কার। এখানেই পেয়েছি অনাবিল আনন্দ। সারাটা জীবন এখানে কাটিয়ে জীবনের শেষটাও এখানেই কাটাতে চাই। শিকড়ের টান হয়তো একেই বলে।
http://www.anandabazar.com/calcutta/the-smell-of-new-book-showed-the-area-1.336102#
No comments:
Post a Comment