চারদিন আমিষভোগ , নাটমন্দিরে গলা কাঁপত অহীন্দ্র চৌধুরীরজয়ন্ত সাউলোকগাথায় কথিত আছে মত্যে র্ এসে মা দুগা র্ সাজেন জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁ বাড়িতে , অন্নগ্রহণ করেন অভয় মিত্রের বাড়িতে আর উত্সবের গান -বাজনা শোনেন নাকি শোভাবাজার রাজবাড়িতে৷ লোকগাথা হলেও এহেন ঘটনা বাঙালির আভিজাত্যেরই প্রতীক৷ তাই প্রচলিত কথার সত্যতা যাচাই করতে হাজির হলাম শিবকৃষ্ণ দাঁ বাড়িতে৷ যথারীতি শুরু হয়ে গেছে মায়ের সাজের প্রস্ত্ততি৷ বাড়ির অন্যতম বয়োজ্যেষ্ঠ অসীমকুমার দাঁ জানালেন , ‘মায়ের এই সাজ প্রথম এসেছিল বিদেশ থেকে৷ পূব র্পুরুষদের আমলে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে রেষারেষি চলত আমাদের পুজোর৷ তখনই প্রথম ফ্রান্স থেকে মায়ের গয়নার সাজ ডাকে আনানো হয়৷ ডাকে এসেছিল বলে একে বলা হত ডাকের সাজ , আর সেই থেকেই ‘ডাকের সাজ ’ কথার প্রচলন৷ মায়ের গায়ের গয়নাই শুধু নয় , চালচিত্রের নকশার কাজও তখন ছিল সোনার , পরে তা বদলে এক ধরনের বিশেষ ধাতুর কাজ করা হয় যা আনা হয়েছিল ফ্রান্স এবং জামা র্নি থেকে৷ পঞ্চমীর রাতেই মাথায় মুকুট , গলায় সাতনরি হার , চিক , বাজুবন্ধ , কোমরবন্ধে সেজে ওঠেন মা৷ প্রস্ত্ততি হয় দেবীর বোধনের!
কুমোরটুলির অভয় মিত্রের বাড়ির কথা লোকগাথায় প্রচলিত থাকলেও আজ আর তার কোনও অস্তিত্বই নেই৷ মায়ের সেই প্রচলিত অন্নভোগ আজ হয় কলকাতার চোরবাগানের চ্যাটাজি র্ বাড়িতে৷ শুধু অন্নভোগই নয় , একমাত্র এই চ্যাটাজি র্রাই মাকে নিবেদন করেন আমিষভোগ৷ পুজোর তিনদিন বাড়ির ছেলেরাই নিজে হাতে ভোগ রান্না করেন , রান্নার শেষে নিজেরাই তা বেড়ে রমন চট্টোপাধ্যায় জানালেন , সন্তমীর দিন মাকে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি , পাঁচ ভাজা , একটা মাছ ভাজা , চাটনি , পায়েস৷ এর পর আরম্ভ হয় ছত্রভোগ৷ তাতে থাকে অন্ন , শুক্তো , এক একদিন এক এক রকমের ডাল , আলু পটলের অথবা তেঁতুলের চাটনি , পায়েস , ঘরে তৈরি ল্যাংচা , বোঁদে৷ অষ্টমীর দিন খিচুড়ি , পাঁচ ভাজা , লাউ -চিংড়ি , মাছের অম্বল , পায়েস৷ নবমীতে ভোগ হয় খিচুড়ি , পাঁচ ভাজা , মাছের ঝাল , চাটনি , পায়েস৷ অন্নভোগে দেওয়া হয় অন্ন , শুক্তো , শাকের ঘণ্ট, ডাল , তরকারি , পাশে র্ মাছ ভাজা , পোলাও , ভেটকি মাছের ঘণ্ট, চিংড়ির মালাইকারি , চাটনি , পায়েস , দই , মিষ্টি৷ সন্ধি পুজোয় লুচি , ভাজা আর মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয় মাকে৷ দশমীতে অরন্ধন৷ তাই নবমীর রাতেই তৈরি হয় ভাত , পুঁইশাকের ছ্যাঁচড়া , মুসুর ডাল , চালকুমড়ো , ইলিশ মাছের টক , পায়েস৷ সাজ হল , ভোগ হল , বাকি রইল মায়ের আনন্দ উত্সবের পালা৷ পলাশির যুদ্ধ জয়ের পর রাজা নবকৃষ্ণ দেব সুতানুটির এই রাজবাড়িতেই যুদ্ধজয়ের উত্সব পালনের জন্য আয়োজন করেন দুগা র্পুজোর৷ সেটিই কলকাতায় দুগা র্পুজোর সূচনাও বটে!
শোভাবাজার রাজবাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য রথীন্দ্রনাথ দেব বাড়ির লম্বা দালানে বসে বললেন , ‘সামনের এই উঠোনে পুজোর একমাস ধরে চলত যাত্রা , পালা গান , কবির লড়াই , খেউড়৷ লড র্ কাজ র্ন , ওয়ারেন হেস্টিংস , কোম্পানির বড় বড় কর্তারা ছিলেন আমাদের বিশেষ অতিথি , তাই তাঁদের জন্য থাকতো বাইজি নাচের ব্যবস্থা৷ আমরা ছোটবেলায় দেখেছি থিয়েটার , শাজাহান , সিরাজদৌল্লা , মজি র্না -আবদাল্লা , আলিবাবা৷ তিনি দিন ধরে রাতভর চলত নাচ -গান যাত্রা৷ মাঝরাতে যখন অনেকেই আর সুস্থ থাকতেন না৷ নাটক শেষ হয়ে গেলে ‘এনকোর ’ বলে চেঁচাতেন৷ পদা র্ পড়ে গিয়ে আবার শুরু করা মজি র্নার গান , ‘ছিছি এত্তা জঞ্জাল ’৷ আজও চোখে ভাসে অহীন্দ্র চৌধুরীর শাজাহানের সেই হাত কাঁপানো দৃশ্য৷ ’ বৃদ্ধ নিমেষেই হারিয়ে যান অতীতের সেই গৌরবময় সেজে উঠছে শোভাবাজার রাজবাড়ি
Ei Samay 19-10-2015
No comments:
Post a Comment