Saturday, 21 May 2016

কথা শোনার রাজনীতির শতবর্ষ

কথা শোনার রাজনীতির শতবর্ষ

কুমার রাণা

১৯ মে, ২০১৬, ০০:০০:০০
Gandhi

শুশ্রূষা। রিচার্ড অ্যাটেনবরো-র ‘গাঁধী’ ছবির একটি দৃশ্য।

নি রানব্বই বছর আগে হাওড়া স্টেশন থেকে পটনার ট্রেনে উঠলেন রাজকুমার শুক্লা। সঙ্গে তাঁরই মতো গেঁয়ো চেহারার, খাটো ধুতি পরা, ইন্দ্রলুপ্ত, পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই এক পুরুষ। লোকটাকে ধরবার জন্য কত চেষ্টাই না করেছেন রাজকুমার। এ চেষ্টা যতখানি বিহারি কৃষকের অদম্য জেদের ফল, তার চেয়ে বেশি বোধ হয় জন্ম-জন্ম ধরে অর্জিত লোকপ্রজ্ঞায় এই ‘লোকটিই ঠিক লোক’ বোধে উপনীত হওয়ার পরিণতি। ভরসা খুঁজে ফেরা রাজকুমার মানুষটিকে দেখে ভরসা পেয়েছেন।
বিহারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে নেপাল সীমান্তবর্তী জেলা চম্পারণ, সেখানকার নরকটিয়াগঞ্জ স্টেশন থেকে সাত মাইল পথ হাঁটলে তাঁর গ্রাম মুরলি ভারওয়া। গ্রাম থেকে গেছেন লখনউ; কংগ্রেস অধিবেশনে, চম্পারণে রায়তদের উপর নীলকরদের ভয়াবহ অত্যাচারের সুরাহা খুঁজতে। তৎকালীন কংগ্রেসের দিকপাল সব নেতা, লোকমান্য টিলক, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য-র কাছে সবিনয় নিবেদন, চম্পারণের রায়তদের জন্য কিছু করুন। ‘আগে দেশের স্বাধীনতা, তার পর অন্য সমস্যার সমাধান, এখন এ সব শোনার সময় কোথায়?’ রাজকুমারের হতাশা শেষ সীমায় পৌঁছনোর আগে আগেই লোকটিকে দেখলেন। এঁর কথা খানিক শুনেছেন, গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি। কিন্তু, শীর্ণ, দেহাতি চেহারার, সাধারণের মধ্যে মিশে থাকার অসাধারণ বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল মানুষটিকে নিজের চোখে দেখার পর রাজকুমার নিশ্চিত হন, ‘এঁকেই দরকার’। সরাসরি সনির্বন্ধ অনুরোধ: চম্পারণের নীলচাষিদের দুর্দশার কথাটা আপনি জনসমক্ষে তুলে ধরুন। প্রত্যুত্তরে তিনি জানালেন, ‘নিজের চোখে না দেখে আমি কোনও কথা বলব না।’ ‘তা হলে নিজের চোখে দেখে আসবেন, চলুন।’ তিনি কথা দিলেন পরের বছর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ চম্পারণ যাবেন। কিন্তু রাজকুমারের তর সয় না, তাঁর পিছু ধরে চললেন কানপুর, সেখান থেকে আমদাবাদ, অবশেষে কলকাতা থেকে তাঁকে সঙ্গে করে চলা। সে যাত্রা শুরু হল ৭ এপ্রিল ১৯১৭।
পটনায় উঠলেন বিখ্যাত উকিল ও কংগ্রেস নেতা রাজেন্দ্র প্রসাদের প্রাসাদোপম বাড়িতে। রাজকুমার ভেবেছিলেন, সেখানে তাঁদের আতিথ্য জুটবে, জুটেও ছিল, রাজেন্দ্র প্রসাদ বাড়িতে ছিলেন না যদিও। কিন্তু সেই আতিথ্যের সঙ্গে মিশে ছিল জাতপাত, শ্রেণি এবং পদমর্যাদাজনিত বিভাজনের অমানবিকতা। রাজকুমারের সঙ্গীর কাছে এগুলো নতুন নয়, গায়ে মাখেননি। তাঁর দরকার ছিল স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ। রাজকুমারের ইচ্ছাশক্তি প্রবল, কিন্তু তাঁকে কেউ পাত্তা দেয় না— একে চাষি তায় আবার নেপাল সীমান্তের কোন এঁদো গাঁয়ের বাসিন্দা! অতএব ‘যা করার নিজেকেই করতে হবে’ বলে ধর্মাচরণে গোঁড়া হিন্দু মানুষটি আতিথ্য নিলেন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা মজহারুল হকের। ধর্মাচরণ ব্যক্তিগত ব্যাপার, সামাজিক পরিসরে তার অনুপ্রবেশ তাঁর কাছে অনাকাঙ্ক্ষিতই শুধু নয়, প্রতিরোধ্য একটা ব্যাপার। এই বোধেই অল্প কিছু দিন পর যখন চম্পারণে নীলচাষিদের কথা শোনা হচ্ছে, তখন সেখানে তিনি কংগ্রেস নেতাদের আলাদা আলাদা রান্নার ব্যবস্থা তুলে দিচ্ছেন: তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক কংগ্রেস নেতা-কর্মী হাজির হন চম্পারণে, কিন্তু তাঁদের অনেকেই সঙ্গে রান্নার ঠাকুর নিয়ে গিয়েছেন! জাতপাতের ভিন্নতাকে ভেঙে তিনি চালু করলেন এক হাঁড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা।
কিন্তু তিনি তো কেবল সমাজ সংস্কারক নন, আদ্যন্ত রাজনীতিকার। এবং রাজনীতিবিদ বা রাজনীতিজ্ঞই নন শুধু, ব্যবহারিক রাজনীতিই তাঁর জীবন। সে রাজনীতিকে তিনি উত্তীর্ণ করলেন প্রকৃতই লোক-রাজনীতির চূড়ায়। যে কালে বাগ্মিতাই জননেতা হওয়ার পূর্ব শর্ত, যিনি যত প্রলম্বিত/উত্তেজক/আবেগঘন ভাষণ দিতে পারেন, তিনি তত বড় নেতা, সেই সময়কে বিভাজিত করলেন এই আপাত-বৈশিষ্ট্যহীন চেহারার মানুষটি: তাঁর রাজনীতি আশ্রিত হল, বলা নয়, শোনার ওপর। ‘লোকেদের কথা শুনতে হবে, সে কথা যতই অগোছালো, পুনরাবৃত্তি বা অস্পষ্টতা দোষে দুষ্ট হোক না কেন।’ কথা শোনাটাই হয়ে উঠল একটা মস্ত অঙ্গীকার। জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা, সুখ-আনন্দের অংশীদারির ভিতর দিয়ে তাঁদের দিশারি হয়ে ওঠার আত্মপ্রতিশ্রুতি। শ্রবণ একটি গুণমাত্র নয়, তা একটি শর্ত: দেশ-জাতির উন্নতি ঘটানো যদি রাজনীতির উদ্দেশ্য হয়, তা হলে দেশবাসীর কথা শুনতেই হবে। দেশ তো কোনও বিচ্ছিন্ন, বিমূর্ত সত্তা নয়, লক্ষ কোটি নিরন্ন, অবদমিত, প্রথা-শৃঙ্খলিত মানুষকে নিয়েই দেশ। সে দেশের স্বাধীনতা তো কেবল ক্ষমতার হস্তান্তর নয়, আসলে তো তা জনসাধারণের শৃঙ্খলমুক্তি। সে উদ্দেশ্য সাধনে, কান পেতে, মনোযোগ দিয়ে শোনার ভূমিকা যে কতটা নির্বিকল্প, তার ফলিত রূপ দেখা গেল ১৯১৭-র গ্রীষ্মে— চম্পারণে।
রাজকুমার শুক্লার সঙ্গীটি সে দিন বিখ্যাত কেউ নন, কিন্তু শুক্লা তাঁকে যে ভাবে চিনে নিয়েছিলেন, সে ভাবেই তাঁকে আপন মানুষ বলে চিনে নিল তিরহুত-এর জনতা। পটনা থেকে ট্রেনে মুজফ্ফরপুর নামামাত্রই জনতা হয়ে উঠল তাঁর সঙ্গী। সেখান থেকে মোতিহারি, তৎকালীন চম্পারণ জেলা সদর, অধুনা পূর্ব চম্পারণ জেলার মুখ্যালয়। দলে দলে রায়তদের আগমন, সারা দিন ধরে চলছে তাঁদের কথা শোনার কাজ, প্রায় সারা রাত ধরে চলছে সেই সব কথার পরীক্ষানিরীক্ষা, বিশ্লেষণ। বড় বড় উকিল, কংগ্রেস নেতা এবং অধ্যাপকরাও তাঁর সঙ্গী, স্বেচ্ছাসেবী। এ রাজনীতি শাসকের অজানা, এবং ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক। এ রাজনীতি আপাত-নিষ্ক্রিয়, এতে সরকার বিরোধিতার কোনও উচ্চরব রণধ্বনি নেই, নেই সমালোচনায় বিদ্ধ করার প্রকরণ।
অজ্ঞাতপূর্ব এই অনুশীলনের প্রক্রিয়া, শুধু শুনে যাওয়া। অজানা বলেই শাসকের আতংক দ্বিগুণ হল, এবং অচিরে ঘোষণা করা হল, ‘লোকটাকে চম্পারণ ছাড়তে হবে, ওর এখানে থাকাটা বিপজ্জনক, যে কোনও সময় প্রজাবিদ্রোহ হতে পারে।’ এক পুলিশকর্তা তো বলেই বসলেন, ‘এই কথা-শোনার প্রক্রিয়া ‘শ্রেণিযুদ্ধের সূচনা করবে।’ আদালতে হাজিরা দিয়ে লোকটি শান্তকণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, ‘আইন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে আমার প্রথম বোধটা হচ্ছে, আমাকে সরকারি হুকুম মানতে হবে। কিন্তু এ কাজ করতে হলে আমি যাঁদের জন্য এসেছি তাঁদের প্রতি কর্তব্যবোধের বিরুদ্ধেই হিংসার প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’ এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না নীলচাষিদের অবস্থা বিষয়ে তাঁর তদন্ত শেষ হচ্ছে, তিনি চম্পারণ ছেড়ে নড়বেন না। এটা যদি আইন ভাঙা হয়, সরকার তাঁকে জেলে পুরুক, তিনি প্রস্তুত।
সে যাত্রায় সরকার পিছু হটে, তাঁকে গ্রেফতার করে না। গ্রেফতার করা কঠিন ছিল, কথা শোনাটাকে অপরাধ হিসেবে দেখানো সহজ ছিল না। অবশ্য যতক্ষণ তিনি কথা শুনছেন, ততক্ষণ সেখানে পুলিশের লোক উপস্থিত থেকেছে। কিন্তু তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না, তিনি তো গোপনে কিছু করতে চাননি, বস্তুত রাজনীতির প্রকাশ্যকরণই তাঁর রাজনৈতিক শক্তি। পুলিশ যদি সেই প্রক্রিয়ার সাক্ষী থাকতে চায় থাক, তাতে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যায় পড়ল রাষ্ট্র, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, সচিব— কেউই বুঝতে পারছে না এ লোকটাকে নিয়ে কী করা— সে নিজে তো কিছু বলছে না, কেবল শুনছে। এক বেতিয়াতেই পঁচিশ হাজার রায়তের বয়ান নথিভুক্ত হয়: দশ হাজারের সম্পূর্ণ, বাকিদের আংশিক। শুধু শিবিরে বসে নয়, শোনা হচ্ছে গ্রামে গ্রামান্তরে হেঁটে হেঁটে। বিহারের বৈশাখ মানে বাতাসে আগুন, সেই তাপপ্রবাহের ভিতর দিয়ে তিনি হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল, আর যেখানেই যাচ্ছেন, উতরোল হয়ে উঠছে জনতা, শুধুমাত্র তাঁকে এক বার চোখের দেখা দেখার জন্য। তত দিনে লোকে জেনেছেন, তাঁদের কথা শোনারও কেউ আছেন। এই প্রতীতিতে তাঁদের শত শত বছর ধরে জমে থাকা শাসক-ভীতি মুহূর্তে অবলুপ্ত। পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা গলা খুলে বলে যাচ্ছেন নীলকরদের অত্যাচারের কথা, এমনকী নীলকর সাহেবের সামনেও।
শুনতে শুনতে তিনি শেখাচ্ছেনও, কী ভাবে শুনতে হয়। এক নীলকর ভেবেছিল রায়তরা তার সামনে অন্তত কোনও অভিযোগ আনবে না, এবং আরও নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য অসদুপায়ে কয়েক জনকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে প্রলুব্ধ করেছিল। সে ডাকে, ‘আসুন, নিজের কানে শুনে যান, আমি রায়তদের জন্য কত ভাল ভাল কাজ করেছি।’ আমন্ত্রণ গৃহীত হল। কথা শুরু হল স্তাবকতা দিয়ে, আর সঙ্গে সঙ্গে জনতা প্রতিবাদ করে উঠল, ‘মিথ্যা বলছে, ও যা বলছে তার মধ্যে এক ফোঁটাও সত্যি নেই।’ করজোড়ে জনতাকে থামালেন, ‘ওঁকে বলতে দিন। সকলেরই কথা বলার হক আছে। ওঁর কথা শোনার পরে আপনারা আপনাদের কথা বলবেন।’
শোনার পর্ব চলতে থাকল। যিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, চম্পারণে কয়েকটা দিন মাত্র কাটাবেন, সেখানেই তাঁকে ভ্রাম্যমাণ ডেরা গড়তে হল কয়েক মাসের জন্য। ভারতবর্ষের রাজনীতি সাবালক হয়ে উঠল এই কথানুশীলনের প্রক্রিয়ায়।
আর গেঁয়ো চেহারার লোকটি হয়ে উঠলেন লোকনেতৃত্বের প্রতীক। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী থেকে ‘গাঁধীজি’তে পরিণত হওয়াটা বাস্তবিক তাঁর নয়, ভারতবর্ষের উত্তরণ। একশো বছর পরেও তাই চম্পারণ আন্দোলন সমান বা বেশি প্রাসঙ্গিক। আজ কথা শোনার অভ্যাসটাই যেহেতু ভয়ানক ভাবে আক্রান্ত, সেই প্রক্রিয়াটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়টাও অত্যন্ত বেশি। তেমনই জরুরি, মোহনদাসের ‘গাঁধীজি’ হয়ে ওঠার পিছনে রাজকুমার শুক্লার মতো বিহারি কৃষকদের ভূমিকা স্মরণ করা। সেই কৃষককে ঠিক মতো চিনে নেওয়ার ক্ষমতা, তাঁর কথার ভিতর দিয়ে, আচরণের মধ্য থেকে জনসাধারণের অন্তর্বেদনাকে বুঝে নিয়ে রাজনীতির পথ ঠিক করতে পারার ক্ষমতায় যদি গাঁধীজি লোকনেতা হয়ে থাকেন, তবে তাঁকে ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে চিনে নেওয়ার কৃতিত্বটাও রাজকুমার শুক্লার প্রাপ্য।
আজকের দুঃসময়ে, যখন বাঁ হাত টাকা নেয় আর ডান হাত ঘুষি মারে, কথা শোনাটা যখন বিলাসিতা, মেরে কাজ হাসিল করাটা যখন রাজধর্ম, তখন গাঁধীজি হওয়ার মতো কেউ আছেন কি না জানা নেই, কিন্তু রাজকুমার শুক্লারা তো আছেন। কথা শোনার রাজনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার গুরুদায়িত্ব পালনে তাঁরাই ভরসা জোগাতে পারেন। কথা শোনার ভিতর দিয়ে গড়ে তোলা যে সহিষ্ণুতায় গাঁধীজি জীবন ও মৃত্যু দিয়েছেন, তার পুনরাধিষ্ঠানে রাজকুমার শুক্লার উত্তরাধিকার ভারতবর্ষের জিয়নকাঠি।

ঋণ: গাঁধী ইন চম্পারণ, ডি জি তেন্ডুলকর। পাবলিকেশনস ডিভিশন, ভারত সরকার (১৯৫৭) ১৯৯৪
http://www.anandabazar.com/editorial/political-democracy-reaches-100-years-1.390193

কী ভাবে ইংরেজি শেখাতেন বাঙালি কবি (On the teaching style of Rabindranath)

কী ভাবে ইংরেজি শেখাতেন বাঙালি কবি

বিশ্বজিৎ রায়

১৮ মে, ২০১৬, ০০:০০:৪৬

rabindranath
লী লা মজুমদার তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, তখন বর্ষা শেষ হয়ে আসছে। উদয়নের সামনের বারান্দায় ক্লাস। মাথার ওপর নীল আকাশ, ছেঁড়া মেঘ। কবি শেলির স্কাইলার্ক পড়াচ্ছেন। মূল কবিতাটি ইংরেজিতে পড়ার পর তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাংলায়। ‘আর কাউকে এমন কবিতা পড়াতে শুনিনি।’
রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় স্তরে ইংরেজি শিক্ষার জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এটা তার একটা নমুনা। তিনি চেয়েছিলেন ইংরেজি বাঙালি ছেলেমেয়েদের কাজের ভাষার পাশাপাশি ভাবের ভাষাও হোক। তারাও বাংলাও শিখুক, ইংরিজিও জানুক।
রবীন্দ্রনাথের এই দ্বিভাষিক প্রবণতাকে একসময় এ পোড়া পশ্চিমবঙ্গের চিন্তকেরা স্বীকার করতে চাননি। তাঁরা রবীন্দ্রনাথের কিছু কিছু লেখাকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ একমাত্রিক ভাবে বাংলাবাদী। মাতৃদুগ্ধের মতোই মাতৃভাষাকে তিনি নাকি সব সমস্যা সমাধানের উপায় বলে মনে করতেন। কাজেই পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় শিক্ষা থেকে যতটা সম্ভব ইংরেজির ভারকে লঘু করে দেওয়াই ভাল। এতেই রবীন্দ্রনাথের মত ও পথ অনুসরণ করা হবে। এ রবীন্দ্রনাথের মত-পথ নয়। তিনি বাংলা মাধ্যমের পক্ষপাতী, ইংরেজি নিধনের পক্ষপাতী নন। সংকীর্ণ বাংলাবাদী অভিমত পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় শিক্ষাকে জীর্ণ করেছিল, সরকারি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের ওপর সাধারণ মানুষ ভরসা হারিয়েছিলেন। আর তারই ফলে নানা রকমের ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। সাবেকি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলি যদি ইংরেজি শিক্ষার পুরনো ধার-ভার বজায় রাখতে পারত তা হলে এ ভাবে বাঙালি ছেলে-মেয়েরা বাংলা মাধ্যম ছেড়ে নির্বিশেষে ইংলিশ মিডিয়ামের শরণ নিত না। বাংলা এখন হয় তাদের পড়তে হয় না, না হয় বাংলা তাদের দ্বিতীয় ভাষা। এতে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষতি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এমনটা কখনওই চাননি।
লীলা মজুমদারের বিবরণে দেখেছি, ইংরেজি কবিতার প্রতি পড়ুয়াদের আকৃষ্ট করার জন্য কবি বাংলা ভাষা ব্যবহার করছেন। আবার, উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের জন্য ছিল অন্য উপায়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল ম্যাথু আর্নল্ডের ‘সোরাব অ্যান্ড রুস্তম’। এই কবিতা ক্লাসে পড়ানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ রীতিমতো হোমওয়ার্ক করছেন। ক্লাস এইটের পড়ুয়াদের পাঠ্য ছিল এটি। প্রথমে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে মূল কবিতাটি পড়ে শোনাতেন। তার পর ইংরেজিতে ধরে ধরে কবিতাটির গদ্য রূপান্তর করতেন। রূপান্তরিত বাক্যগুলি পড়ুয়াদের বলানো ও লেখানো অভ্যাস করাতেন। কবিতায় ব্যবহৃত অচেনা শব্দ দিয়ে বলাতেন লেখাতেন নতুন বাক্য। এই নতুন বাক্যটি যেন পড়ুয়াদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে সে দিকে খেয়াল রাখতেন তিনি। মূল কবিতায় ছিল ‘the men were plunged in sleep’ রবীন্দ্রনাথ যে নতুন বাক্য লেখালেন সেটি হল ‘herds of buffalos stood plunged in the water’. শান্তিনিকেতনে যে আশ্রম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন রবীন্দ্রনাথ, সেই আশ্রম বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে গরু-মোষের এ ভাবে জলে নেমে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য খুবই চেনা। ইংরেজি কবিতার শব্দ তাদের কাছের চেনা ছবি হয়ে উঠত সন্দেহ নেই।
তবে শব্দকে কাছের ও স্থানীয় করে তোলার জন্য মূলের কাব্যত্বকে যে সংহার করতেন তা কিন্তু নয়। শান্তিনিকেতনের ছাত্র মুলুর অকাল প্রয়াণ হয়েছিল। মুলুকে মনে রেখে যে প্রয়াণলেখ লিখেছিলেন কবি তাতে জানিয়েছিলেন, ‘আমি নুম্যান, ম্যাথু আর্নল্ড, স্টিফেন্সন প্রভৃতি লেখকের রচনা হইতে যে-সকল অংশ উদ্ধৃত করিয়া তাহাকে পড়াইতাম, তাহার মধ্যে গভীরভাবে ভাবিবার কথা যথেষ্ট ছিল।’ বোঝা যায় কেবল কাজের ভাষাটি শেখাই যথেষ্ট নয়, ভাবার কথাও রপ্ত করা চাই। তা না হলে ইংরেজি বাঙালি পড়ুয়াদের আবেগের ভাষা হবে কেমন করে!
কখনও কখনও রবীন্দ্রনাথ পড়ুয়াদের জন্য লিখতেন মৌলিক ইংরেজি নাটক। এ ভাবেই লেখা হয়েছিল ইংরেজি নাটক কিং অ্যান্ড রেবেল। সন ১৯১২-১৯১৩, এই কালপর্বে রবীন্দ্রনাথ ইংল্যন্ডে। বিলেতে বিশিষ্ট মানুষদের সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত কবি, তাঁর ইস্কুলের পড়ুয়াদের কথা কিন্তু তখনও মোটে ভুলে যাননি। মৌলিক ইংরেজি নাটক লিখে পাঠাচ্ছেন। অজিত চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় শান্তিনিকেতনের পড়ুয়ারা এ নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। ‘ইংরেজি সোপান’, ‘ইংরেজি শ্রুতিশিক্ষা’র মতো ইংরেজি শেখার পাঠ্যবই লিখেই দায়-দায়িত্ব মিটিয়ে ফেলেননি শান্তিনিকেতনের গুরুদেব, সহজপাঠের লেখক। ইংরেজিতে নাটক করা যে ভাষাশিক্ষার কাজে খুবই সহায়ক, এ কথা মনে রেখেছিলেন। নাটকটিও ছেলেমানুষি নাটক নয়, বিষয় গভীর। রাজা ও রাজদ্রোহের কাহিনি নিয়ে লেখা এ নাটকটি পড়ুয়াদের মনে অধিকার ও জনমতের ধারণাকে স্পষ্ট করত।
বিদ্যালয় স্তরে ইংরেজি শেখানোর এই সযত্ন আয়োজন কেন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ? বুঝতে অসুবিধে হয় না তিনি বুঝেছিলেন শুধু বাঙালি হয়ে থাকলে বাঙালির মন-পেট কোনওটাই ভরবে না। শুধু কি ইংরেজি? শান্তিনিকেতনের দ্বার ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি ভাষার জন্যও ছিল উন্মুক্ত। বোঝা যায় এক ভাষা-সংস্কৃতির মানুষ যাতে অন্য ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী হন তাই ছিল কবির অভিপ্রায়। এই মনোযোগের জন্য নিজের ভাষা ছাড়তে হবে বা বিদ্যালয় স্তরে সমস্ত বিষয় বাধ্যতামূলক ভাবে ইংরেজিতে পড়তে হবে এমন ইংলিশ মিডিয়ামী দাওয়াই দিতে কবি নারাজ।
১৯১৭-তে শিক্ষাদীক্ষার হালচাল জরিপ করার জন্য স্যাডলার কমিশনকে নিয়োগ করা হল। তাঁরা রবীন্দ্রনাথের বিদ্যালয়ের রুটিন দেখে খুব খুশি। যত ওপরের দিকে উঠছে পড়ুয়া তত ইংরেজি ক্লাসের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব এই কমিশনের সদস্যরা স্বীকার করতেন। ছোটবেলায় পড়ুয়াদের মাতৃভাষার স্বাদ-আহ্লাদ দিতে হবে। কিন্তু অপর ভাষার প্রতি বিমুখ করা যাবে না। সে জন্যই হয়তো তলার ক্লাসে বাংলায় শেলির কবিতা পড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ, উঁচু ক্লাসে ইংরেজি পড়ানোর পদ্ধতি আলাদা।
বেশ কয়েক বছর আগে ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য বাইলিঙ্গুয়াল ইন্টালেকচুয়াল’ নামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন রামচন্দ্র গুহ। সারা ভারতেই যে নানা কারণে দ্বিভাষিকতার বদলে একভাষিকতাই মুখ্য হয়ে উঠছে, এই ছিল তাঁর আলোচ্য। এ কালে শিক্ষিতরা হয় ইংরেজি শিখছে, না হয় শিখছে স্থানীয় ভাষা, যে কোনও একটা ভাষা হয়ে উঠছে তাদের আবেগ ও মেধা প্রকাশের মাধ্যম। আর স্বভাবতই, যাদের ক্ষেত্রে সেটা ইংরেজি তাদের সুযোগসুবিধে বেশি। স্থানীয় ভাষার বাজার-প্রতিপত্তি ইংরেজি ভাষার থেকে কম। তাঁর মতে কাজের ব্যাপারে দ্বিভাষিক-এর অভাব এ কালে হয়তো নেই, কিন্তু মননে ও আবেগে দ্বিভাষিক এ কালে আর ক’জন হন! তাঁর মনে হয়েছিল বঙ্গভূমে এক সময় দ্বিভাষী চিন্তাবিদের প্রাচুর্য বাঙালিদের সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সুপ্রতিষ্ঠা দিয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথও এই দ্বিভাষী বাঙালির গোত্রেই পড়েন। সাহিত্য আকাদেমি থেকে রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি লেখাপত্রের যে চার খণ্ড সংকলন, অনেক দিন আগেই যা প্রকাশিত, তা রামচন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই প্রমাণ করে। ইংরেজি রবীন্দ্রনাথের কাছে নিতান্ত কাজের ভাষা হয়ে থাকেনি, তা রবীন্দ্রনাথের মনন ও আবগের ভাষাও হয়ে উঠেছিল। বাংলার তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হলেও ইংরেজিতে মৌলিক নাটক, প্রবন্ধ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। অথচ তাঁর নাম করেই বাঙালি শিশুদের লেখাপড়া থেকে ইংরেজিকে বিদায় করার আয়োজন হয়েছিল, যে আয়োজনের পরিণামে বৃহত্তর বাঙালি সমাজে দ্বিভাষিকতার ধারাটাই দুর্বল হয়ে গেছে।
ক্ষতি তো যা হওয়ার হয়েছে। ইংরেজি ইংরেজি করে বাংলা ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গে দুয়োরানি করে দেওয়া হল কিন্তু সেই দুয়োরানি-করণের পেছনে শুধু বাংলা ভাষাকে সুয়োরানি করতে চেয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের দায়ও কিছু কম নয়। আসলে কোনও ভাষাই দুয়ো বা সুয়ো নয়। পা মাটিতে রেখে ঘরের দরজা জানলাগুলো খুলে দিতেই হবে। সেই হাটখোলা দরজা-জানলার ভেতর দিয়ে অন্য ভাষা-সংস্কৃতির হাওয়া আসুক। এ পুরনো কথা, চেনা কথা, তবে মাঝে মাঝেই এ কথাগুলো আবার করে ঝালিয়ে নেওয়া ভাল।
 
বিশ্বভারতীতে বাংলার শিক্ষক

http://www.anandabazar.com/editorial/how-poet-used-to-teach-english-in-those-days-1.389319#popup

Thursday, 5 May 2016

25 People Who Had Just One Job And Failed

25 People Who Had Just One Job And Failed Marvelously At It

While everybody makes mistakes, and often deserve a second chance, some are just unforgivable. It takes another level of genius to screw up the simplest things. But the world is a fascinating place with some very fascinating people. So we found some of most fascinating. Enjoy these geniuses who had just one job and blew it, magnificently.

1. Since when did onions resemble corn?

corn
Image Credit: imgur

2. So you can actually choose your fortune.

cookie
Image Credit: fundir.org

3. An over-achiever in Geography 

asia
Image Credit: fundir.org

4. Slow claps

fan
Image Credit: reddit

5. No, it doesn't.

float
Image Credit: imgur

6. What was this guy thinking/on?

stop
Image Credit: youhadonejob.org

7. Good luck getting this work

remote
Image Credit: youhadonejob.org

8. This too

icecream
Image Credit: acidcow

9. *No comment*

batman
Image Credit: adocuradomundo.blogspot.com

10. This guy thought he was Houdini! 

poster
Image Credit: imgur

11. How?!

toilet paper
Image Credit: carigold.com

12. There are two sides to every door

door
Image Credit: fundir.org

13. *Shaking my head*

cup
Image Credit: graphicami.org

14. How to design a kitchen least effectively 

drawer
Image Credit: reddit

15. Expletive 

dentist
Image Credit: pantip.com

16. What is the point of this?

gate
Image Credit: imgur

17. Multipurpose clothing

pants
Image Credit: imgur

18. Our sympathies!

greeting
Image Credit: youhadonejob.org

19. An exit on its head

exit
Image Credit: imgur

20. Ouch!

kids
Image Credit: imgur

21. Uh oh

coke
Image Credit: twinking.tk

22. Imma whack this guy!

toilet
Image Credit: reddit

23. This door ain't closin'. Ever!

door
Image Credit: reddit

24. Bet this fellow lost his job

slide
Image Credit: dropoffun

25. How ironic

alignment


http://www.indiatimes.com/culture/who-we-are/25-people-who-had-just-one-job-and-failed-marvelously-at-it-247512.html?utm_source=FB&utm_medium=paid