Wednesday, 27 May 2015

How Akbar went from great to not-so-great

How Akbar went from great to not-so-great


akbar-serial
A still from a TV serial on Maharana Pratap, which depicts Akbar (above) as a bigot who wants to dominate the Maharana.
The Akbar vs Rana Pratap debate is driven by myth-making rather than facts, say scholars.

In the latter half of the 16th century, when Elizabethan England was persecuting Catholics and the Spanish Inquisition had become an instrument of terror, one Indian ruler had established the first nursery of Indian secularism at Fatehpur Sikri. He held socio-religious and spiritual discussions with men of different faiths at the ibadatkhana.That was Mughal emperor Akbar, a man far ahead of his time.

But the emperor's legacy is now under siege. Last week in Delhi, members of a Hindutva outfit defaced the signage of a road named after Akbar and several other Muslim rulers. They wanted these roads renamed after Hindu rulers like Shivaji and Maharana Pratap.


http://timesofindia.indiatimes.com/home/sunday-times/deep-focus/How-Akbar-went-from-great-to-not-so-great/articleshow/47402293.cms

Days later, Union home minister Rajnath Singh demanded the epithet 'great' for Rana Pratap. He also said that the rest of the country should follow Rajasthan's example and devote a full chapter to the Mewar ruler in history textbooks. Many interpreted this as an official signal to knock down one of India's most remarkable rulers.

A smear campaign against the emperor seems to be currently running on social media. Tweets, Facebook posts, blogs and chainmail are calling Akbar a "rapist, looter and killer coming from a family of drunkards, illiterates, homosexuals and child molesters". And all sorts of falsehoods culled from TV serials, myths, legends, and propaganda are being passed off as the "real history of Akbar".

"It's unfortunate that people are so gullible that they lap up fiction as fact. While there can be no doubt that Maharana Pratap was an important figure in history, it's unfair to compare him with Akbar," says archaeologist and historian Dr KK Mohammed, who discovered Akbar's ibadatkhana at Fatehpur Sikri in the 1980s.

The scholar elaborates his point with a historical anecdote: "Once in Hormuz, some Portuguese had tied a copy of the Quran around the neck of an ass and released it in the market. When Hamida Bano Begum, Akbar's mother, learnt about it, she asked the emperor to tie the Bible around a dog's neck and release it in Agra. Akbar refused. If the actions of the Portuguese were wrong, then this would be wrong too, he reasoned. His stance showed his remarkable mind and spirit."

Professor Jos Gommans of Leiden University says for the cohesion of India as a nation, Akbar will do a much better job as a hero than Rana Pratap or Shivaji. "Akbar inspired even Dutch liberals in the mid-19th century to build a secular society without religious interference."

Dirk Collier, author of The Emperor's Writings: Memories of Akbar the Great, points out that historical facts are being ignored in the debate. "The resistance of Maharana Pratap against Akbar has often been portrayed as a desperate and noble struggle for Hindu independence against the overwhelmingly superior forces of a Muslim invader, but, as most historians agree, it was hardly that. The Hindu kings of Amber, Bikaner and Bundi sided with Akbar, and even Rana Pratap's own brother Sagaraj did the same. Pratap's army, on the other hand, included large Afghan contingents. Only 30 years before the fall of Chittor, an earlier Rana of Mewar had marched against the neighbouring king of Malwa in alliance with the Muslim sultan of Gujarat. In other words: the Mewar conflict was essentially one of local rivalries," he says.

A current television serial eulogises Rana Pratap and vilifies Akbar as an ever-scheming, bloodthirsty bigot. Its impact has been such that one blogger says her five-year-old neighbour is yet to study history but already hates Akbar. But, argues historian Tripta Wahi, Akbar's secularism remains unmatched even today. "He separated religion from the state — his Tauheed-i-Illahi or Din-i-Illahi was essentially a reflection of that policy. It was Akbar who had abolished slavery in India. He also abolished sati in his empire, centuries before Sir William Bentinck," she says.

Wahi also points out that in the 1560s, when the Mughals were trying to create a bigger state system, the indigenous states, Hindu as well as Muslim, were resisting it. "Akbar was resisted by the Sharqis of Jaunpur, the Afghan sultans of Bengal, the Bahmani kingdom and its splinter states, Gujarat and Malwa — all these were Muslim kingdoms. And some of them resisted for far longer than Mewar. Yet you don't hear the proponents of Hindutva talking about Chand Bibi or Malik Ambar of Ahmednagar sultanate."

The historian points out that Akbar made intelligent use of secularism in his statecraft. For instance, post-war, he treated defeated Rajputs and Muslims differently. He returned to Rajputs their vatanjagirs (patrimonial estates) and gave them high mansabs in his military bureaucracy. Neither favour was granted to defeated Muslim landed gentry. Akbar wanted the Rajputs to become important shareholders in his successes. Across the border in Pakistan, Akbar is not seen as a great ruler either. Islamic hardliners there sometimes dismiss him as the "infidel king" for his secular views. All of Pakistan's missiles or weapon systems are named after Babur, Ahmed Shah Abdali, Mahmud of Ghazni or Muhammad Ghori but none after Akbar.

Ironically enough, in India, there are no public buildings or spaces named after the Great Mughal. But there are roads, universities and public buildings — including an airport — named after Maharana Pratap.

Wednesday, 20 May 2015

Avijit Ray-r Lekha

আমরা প্রায়ই জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া, শমশের আলীদের কথা বলি যারা নানা ধরণের ত্যানা-প্যাঁচানো ইন্টারপ্রিটেশনের মাধ্যমে কোরানকেবিজ্ঞানময়বানানোর মিশন নিয়ে কাজ করেন কিন্তু এই সব জোকার্নায়েকরা কিন্তু ইসলাম ধর্মের একচেটিয়া নয়, সব ধর্মেই কম বেশি আছেন আজকে আমরা সেরকম একজন হিন্দু জোকার্নায়েকের কথা শুনব
সম্প্রতি দেখলাম - ভারতের প্রধানমন্ত্রী খবরের শিরোনাম হয়েছেন, না মন্ত্রীত্বের কারণে নয়, হিন্দুদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ আর মহাকাব্যগুলোতে আধুনিক বিজ্ঞানের খোঁজ পেয়ে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে –‘Indian prime minister claims genetic science existed in ancient time’:
মোদির মতে মহাভারতের উপকথা অনুযায়ী কর্ণের জন্ম হয়েছিল জরায়ুর বাইরে। তাই কর্ণ নির্ঘাতটেস্ট টিউব বেবিকিংবা হয়তোজেনেটিক ক্লোনিংএর ফল। কর্ণের জন্ম ঠিক কিভাবে হল তা স্পষ্ট করে না বললেও এটা স্পষ্ট করেই বলেছেন - প্রাচীন ভারতের ঋষিরাজেনেটিক সায়েন্সজানতেন
কর্ণ আসলে ছিলেন পাণ্ডব জননী কুন্তীর প্রথম পুত্র। তবে তিনি কুন্তীরবৈধ সন্তানছিলেন না। তাঁর আদি নাম ছিল বসুষেণ। তবে অনেক পরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় নিজের অঙ্গ কেটে তার মৃত্যু প্রতিরোধক কবচ এবং কুণ্ডল দান করায় তিনিদাতা কর্ণনামে খ্যাত হন। কর্ণের জন্মকাহিনীটা অবশ্য মজার। রগচটা মুনি দুর্বাসা এক সময় অতিথি হিসেবে কুন্তীর ঘরে এসেছিলেন। তখন কুন্তী কুমারী, বিয়ে থা কিছুই করেননি। কুন্তী খাইয়ে দাইয়ে দুর্বাসার নানা সেবা যত্ন করলে দুর্বাসা খুশি হয়ে তাকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দেন। এই মন্ত্র পড়লে কুন্তী যে দেবতাকে ডাকবেন, সেই কুন্তীর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে আসবেন, এবং সেই দেবতার ঔরসে কুন্তীর পুত্রলাভ হবে
এখন মন্ত্র কাজ করে কিনা দেখতে হবে তো। আর কুন্তীর বয়সও তখন খুব বেশি না। টিনেজ টাইপ কৌতূহল তো আছেই। তো একদিন বাড়ির চিপায় গিয়ে কুন্তী মন্ত্র পড়ে সূর্যকে আহবান করলেন। সাথে সাথে সূর্যদেব এসে পড়লেন। কুন্তী তো তখন ভয়ে অস্থির। মন্ত্র পড়লেই যে এটা ঘটবে তা তো বুঝতেই পারেননি তিনি। তার উপর তিনি কুমারী। সূর্যের ঔরসে পুত্র হলে সমাজে মুখে দেখাবেন কি করে। এখন সূর্যও নাছোড়বান্দা। সুন্দরী কুন্তী মন্ত্র পড়ে নিয়ে এসেছে এখন কি আর তিনি সব কাজ সেষ না করে ফিরে যাবেন নাকি। তাহলে আর দেবতা কিসে! কাজেই মিলন হতেই হল। অবশ্য মিলনের আগে সূর্য কথা দিলেন এর ফলে পুত্র লাভ করলেও কুন্তী সমাজেকুমারী থাকবেন। এর সূত্র ধরেই কর্ণের জন্ম হল। কিন্তু এই পুত্র নিয়ে কুন্তী তো পড়লেন মহা ফ্যাসাদে। সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে তিনি একটি পাত্রে মধ্যে পুরে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন। পরে সুতবংশীয় অধিরথ আর তার স্ত্রী রাধা সেই শিশুকে নদী থেকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারেবসুষেণনাম দিয়ে প্রতিপালন করেন। কর্ণ বড় হয়ে কৌরবদের পক্ষে হয়ে পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সে নিয়ে আরো কাহিনী আছে
কিন্তু সেটা কথা নয়। কর্ণের এই জন্মকাহিনীতে নিখাদ রূপকথার ছোঁয়া ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু আমি তা বললে কি হবে মোদীর মত জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারের অবতারেরা এর মধ্যে একেবারে আধুনিকজেনেটিক সায়েন্সখুঁজে পেয়েছেন
মোদী তার ভাষণে আরো একটি উদাহরণ হাজির করেছেন। হিন্দু দেবতা বাবা গণেশের ধরে যে হাতীর মুণ্ডু, তা দেখে নাকি মনে হয় প্রাচীন ভারতেরপ্লাস্টিক সার্জনদের কাজ এটি। গণেশ হচ্ছেন শিব এবং পার্বতীর পুত্র। হিন্দুরা গণেশকেসিদ্ধিদাতাভেবে পুজো করেন। এখন গণেশের মাথায় হাতীর মুণ্ডু আসল কিভাবে নিয়ে নানা উপকথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়টি হল, গণেশের জন্ম হবার পরে অনেক দেবতাদের ভিড়ে শনিও দেখতে এসেছিলেন নবজাতককে। কিন্তু শনির স্ত্রী একসময় শনিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তিনি যার দিকে দৃষ্টি দেবেন, তারই বিনাশ হবে। তাই নবজাতককে দেখতে এলেও শনি নবজাতকের মুখের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু পার্বতী শনিকে তার পুত্রের চেহারা দেখার জন্য বার বার অনুরোধ করতে থাকেন। শনি তার অভিশাপের কথা প্রকাশ করার পরেও পার্বতী নাছোড়বান্দা ছিলেন, এবং শনিকে গণেশের চেহারা দেখতে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে শনি তাকালেন। শনির দৃষ্টি শিশুমুখে পরা মাত্র শিশুর মুণ্ডু দেহ-চ্যুত হয়ে গেল। নিয়ে স্বর্গে তোলপাড় দেখা দিলে সে খবর বিষ্ণুর কাছে পৌঁছায়। তিনি আসার পথে মাঠে শুয়ে থাকা একটা হাতী দেখে সুদর্শন চক্রের সাহায্যে কেটে নিয়ে এলেন আর গণেশের গলার সাথে যুক্ত করে দে। এই হল কাহিনি। তবে পুরাণ ভেদে এই কাহিনির কিছু উনিশ বিশ আছে। যেমন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে শিবের প্রতি কশ্যপের অভিশাপের ফলে গণেশের মুণ্ডচ্ছেদ ঘটেছিল। স্কন্দ-পুরাণের মতে সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে অষ্টম মাসে প্রবেশ করে গণেশের মস্তকচ্ছেদন করেছিলেন। রূপকথায় যা হেরফের থাকুক, সেটা রূপকথাই, কোথাও প্লাস্টিক সার্জন খুঁজে পাননি। অবশ্য আমি আপনি না পেলে কি হবে মোদী সাহেব ঠিকই খুঁজে পেয়েছেন
আমি বছর খানেক আগে অবিশ্বাসের দর্শন নামে একটা বই লিখেছিলাম। সেখানে হারুন ইয়াহিয়া, শমশের আলীদের পাশাপাশি হিন্দু ভাববাদীদেরও অপবিজ্ঞানচর্চার নানা উদাহরণ হাজির করেছিলাম। বইটিতে দেখিয়েছিলাম - এরা কেউই আসলে ধোয়া তুলসি-পাতা নয়; বরং, একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। কিছু হিন্দু ভাববাদীবৈজ্ঞানিকআছেন, যারা মনে করেন মহাভারতে কৃষ্ণ অর্জুনকে যে বিশ্বরূপ দেখিয়েছে তা আসলে বিগব্যাং ছাড়া কিছু নয়। মৃণাল দাসগুপ্ত ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান আকাদেমীর বিখ্যাত বিজ্ঞানী। উনি দাবি করেন, আজ আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত নতুন তত্ত্ব তথ্য প্রতিদিনই আবিষ্কার করছে, তার সবকিছুই নাকি প্রাচীনকালের মুনি ঋষিরা বের করে গেছেন। বেদে নাকি সেসমস্ত আবিষ্কারখুবই পরিষ্কারভাবেলিপিবদ্ধ আছে। মি. দাসগুপ্তের ভাষায়, রবার্ট ওপেনহেইমারের মতো বিজ্ঞানীও নাকি গীতার বিশ্বরূপ দর্শনে এতই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে ল্যাবরেটরিতে আণবিক শক্তির তেজ দেখে নাকি গীতা থেকে আবৃত্তি করেছিলেন-
দিবি সূর্য্যসহস্রস্য ভবেদ যুগপদুত্থিতা।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ ভাসন্তস মহাত্মনঃ
বিজ্ঞান জানা কিছু শিক্ষিত হিন্দু বুদ্ধিজীবী আছেন যারা ভাবেন আধুনিক বিজ্ঞান আজ যা আবিষ্কার করছে, তা সবই হিন্দু পুরাণগুলোতে লিপিবদ্ধ জ্ঞানের পুনরাবৃত্তি। হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান রামকৃষ্ণ মিশন তাদের মুখপত্রউদ্বোধন’- বলা শুরু করেছে যে, কৃষ্ণগহ্বর কিংবা সময় ধারণা নাকি মোটেই নতুন কিছু নয়। হিন্দুধর্ম নাকি অনেক আগেই এগুলো জানতে পেরেছিল। কীভাবে? ওই যে বহুল প্রচারিত সেই আপ্তবাক্যেব্রহ্মার এক মুহূর্ত পৃথিবীর সহস্র বছরের সমান কিছু ধর্মবাদীর দৃষ্টিতে মহাভারতের কাল্পনিক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল আসলে একপারমাণবিক যুদ্ধ’ (Atomic War) প্রশান্ত প্রামাণিক নামে ভারতের একজনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক’ ‘ভারতীয় দর্শনে আধুনিক বিজ্ঞানবইয়ে তার কল্পনার ফানুসকে মহেঞ্জোদারো পর্যন্ত টেনে নিয়ে বলেছেন-‘সম্ভবত দুর্যোধনেরই কোনো মিত্র শক্তি পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে থাকবে মহেঞ্জোদারোতে’ (পৃ. )সবই ব্যাদে আছেমার্কা এইসব বকচ্ছপ ভাববাদীরা অবলীলায় দাবি করে ফেলেন যে, নলজাতক শিশু (Test Tube Baby) আর বিকল্প মা (Surrogate Mother) আধুনিক বিজ্ঞানের দান মনে করা হলেও তা হিন্দু সভ্যতার কাছে নাকি নতুন কিছু নয়। দ্রোণ-দ্রোণী, কৃপ-কৃপীর জন্মের পৌরাণিক কাহিনিগুলো তারই প্রমাণ। এমনকি কিছুদিন আগে উপসাগরীয় যুদ্ধে ব্যবহৃত স্কাড আর প্যাট্রিয়ট মিসাইল নাকি হিন্দু পুরাণে বর্ণিতবরুন বাণআরঅগ্নিবাণবই কিছু নয়। তারা সবকিছুতেই এমনতর মিল পেয়ে যান। যেমনিভাবে ভারতেরদেশ’-এর মতো প্রগতিশীল পত্রিকায় ২২ এপ্রিল ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশিতবিজ্ঞান ভগবাননিবন্ধের লেখক হৃষিকেশ সেন বেদান্তে বর্ণিত উর্ণনাভ বা মাকড়শার মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মডেলের মিল পেয়ে গেছেন
এপ্রসঙ্গে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী . মেঘনাদ সাহার জীবন থেকে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায়, মেঘনাদ সাহা 'একটি নতুন জীবন দর্শন' (১৩ নভেম্বর, ১৯৩৮) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে, 'সবই ব্যাদে আছ' নামে একটি কটাক্ষমূলক উক্তি করেছিলেন। এই উক্তিটি নিয়ে অনিলবরণ রায় নামের এক হিন্দুত্ববাদী ব্যাপক জলঘোলা করা শুরু করলে, এর ব্যাখ্যায় মেঘনাদ সাহা বললেন -
***
"...
প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দেই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, ‘ আর নতুন কি হইল, সমস্তই ব্যাদ- আছে আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, 'মহাশয় সব তত্ত্ব বেদের কোন অংশে আছে তাহা অনুগ্রহ পূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?' তিনি বলিলেন, ‘আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই 'ব্যাদে' আছে
বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্দু জ্যোতিষ অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে
অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচর্য একাদশ শতাব্দীতে অতিস্পষ্টভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নতুন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত "অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী" শ্রেণীর তার্কিকগন ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচর্য কোথাও পৃথিবী অপরাপর গ্রহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে - একথা বলেন নাই। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর এবং অপরাপর গ্রহের পরিভ্রমণপথ নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ভাস্করাচার্য বা কোন হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পণ্ডিত কেপলার, গ্যালিলিও বা নিউটনের বহু পূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন, এইরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছু নয়। ..."
****
কিন্তু মুশকিল হল হিন্দু সমাজে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার দর্শন নয়, অনিলবরণ রায়রাই দাপটে রাজত্ব করছেন, মাথার উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন অবিরত। নরেন্দ্র মোদীর আজকের সংলাপগুলো অনিলবরণ রায়দেরই রেখে যাওয়া ট্রেন্ড
এখানে উল্লেখ্য, খ্রিস্টান সমাজেও কিন্তু এই ধরনেরহাসজারুপ্রচেষ্টা বিরল নয়। বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক টিপলার পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ইদানীং যত না বিখ্যাত, তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন খ্রিস্টধর্মকেবিজ্ঞানবানানোর জন্য। ওমেগা পয়েন্ট নামে একটি ধারণা দিয়েছেন টিপলার যা মহাসংকোচন (বিগ ক্রাঞ্চ)-এর সময় সিংগুলারিটির গাণিতিক মডেলকে তুলে ধরে। পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু টিপলার মনে করেন এই ওমেগা পয়েন্টই হচ্ছেগড শুধু তাই নয়, যীশুর অলৌকিক জন্মকে (ভার্জিন বার্থ) তিনি বৈজ্ঞানিক বৈধতা দিতে চান যীশুকে বিরল xx male বানিয়ে, যীশুর পুনরুত্থানকে ব্যারন অ্যানাইহিলেশন প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করেছেন, ইনকারনেশন বা অবতারকে বলেছেন বিপরীতমুখী ডিম্যাটেরিয়ালাইজেশন পদ্ধতি, ইত্যাদি। সমস্ত রঙ-বেরঙের গালগপ্প নিয়েই তার সাম্প্রতিক বই The Physics of Christianity (2007)! বলা বাহুল্য মাইকেল শারমার, ভিক্টর স্টেংগর, লরেন্স ক্রাউসসহ অনেক বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকই টিপলারের যুক্তিকে খণ্ডন করেছেন , কিন্তু তাতে অবশ্য আধুনিকবিজ্ঞানময়খ্রিস্ট-ধর্মোন্মাদনা থেমে যায় নি, যাবেও না। ফ্রাঙ্ক টিপলারের অনেক আগে ১৯৭৫ সালে ফ্রিজোফ কাপরা একই মানসপটে লিখেছিলেন ‘The Tao of Physics’ - প্রাচ্যের তাওইজমের সাথে বিজ্ঞানকে জুড়ে দিয়ে। চীনের প্রাচীন দার্শনিকেরা ইন এবং য়্যান (yin and yang) নামে পরস্পরবিরোধী কিন্তু একীভূত সত্তার কথা বলেছিলেন মানুষের মনে ভালো-মন্দ মিলেমিশে থাকার প্রসঙ্গে। ফ্রিজোফ কাপরা সেই ইন এবং ইয়াংকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিলেন কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার জগতে পদার্থের দ্বৈত সত্তার (dual nature of matter) বর্ণনা হাজির করে, পদার্থ যেখানে কখনও কণা হিসেবে বিরাজ করে, কখনোবা তরঙ্গ হিসেবে। আধুনিক পদার্থবিদ্যার শূন্যতার ধারণাকে মিলিয়ে দিয়েছেন তাওইজমেরচী’ (ch’i or qi)-এর সাথে-
"যখন কেউ জানবে যে, মহাশূন্যচীদিয়ে পরিপূর্ণ, তখনই কেবল সে অনুধাবন করবে, শূন্যতা বলে আসলে কিছু নেই"
মুক্তমনার বিশিষ্ট সদস্যঅপার্থিব জামানধর্মগ্রন্থের মধ্যেবিজ্ঞান খোঁজারএই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে একবার একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন-
"প্রায়শই ধর্মবাদীরা ধর্মগ্রন্থের একটি নির্দিষ্ট আয়াত বা শ্লোকের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান খুঁজে পান। এটি একটি হাস্যকর অপচেষ্টা। ওমনিভাবে খুঁজতে চাইলে যেকোনো কিছুতেই বিজ্ঞানকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব। যেকোনো রাম-শ্যাম-যদু-মধু আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের অনেক আগে কোনো কারণে বলে থাকতে পারে– ‘সবকিছুই আসলে আপেক্ষিক কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের পর সেই সমস্ত রাম-শ্যাম-যদু-মধুরা যদি দাবি করে বসে এই বলে-‘হুঁ! আমি তো আইনস্টাইনের আগেই জানতাম আপেক্ষিক তত্ত্বের কথাতবে তা শুধু হাস্যকরই নয়, যে সমস্ত নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীরা তাদের শ্রমলব্ধ গবেষণার মাধ্যমে নিত্য-নতুন আবিষ্কারে পৃথিবীবাসীকে উপকৃত করে চলেছেন, তাদের প্রতি চরম অবমাননাকরও বটে। সবাই জানে, আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য আইনস্টাইনকে কখনোই কোনো ধর্মগ্রন্থের সাহায্য নিতে হয় নি, বরং আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের পর পরই তা ধর্মবাদীরা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে জুড়ে দেওয়ার জন্য নানা জায়গায় মিল খুঁজে পেতে শুরু করলেন। বলা বাহুল্য, আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দানে এখনও অক্ষম, সেই সমস্ত জায়গায় ধর্মবাদীরাও কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। যেমন, বিজ্ঞান এখনও নিশ্চিতভাবে জানে না যে আমাদের এই মহাবিশ্ব বদ্ধ, খোলা নাকি ফ্ল্যাট। তাই ধর্মবাদীদেরও কেউ তাদের ঐশী কিতাব থেকে আমাদের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে কোনো ধরনের আলোকপাত করতে পারছেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানের কল্যাণে কখনও যদি এর উত্তর বেরিয়ে আসে, তবে সাথে সাথে ধর্মবাদীরা বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের কতকগুলো অস্পষ্ট আয়াত অথবা শ্লোক হাজির করে এর অতিপ্রাকৃততা দাবি করবেন। মূলত প্রতিটি ক্ষেত্রেই (গোঁজা) মিলগুলো পাওয়া যায় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। কি স্রেফ ঘটনার কাকতালীয় সমাপতন?"
আসলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থেআধুনিক বিজ্ঞানেরসন্ধান পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। কারণ বিজ্ঞানের দায় পড়ে নি ধর্মগ্রন্থ থেকে দীক্ষা নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, বরং ধর্মগুলোই জেনে গেছে, বিজ্ঞান ছাড়া তারা টিকে থাকতে পারবে না। কাজেই, নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোকে ধর্মগ্রন্থের সাথে জুড়ে দেওয়ার জন্য ধর্মবাদীরা এখন মুখিয়ে থাকে। একটা সময় বাইবেলবিরোধী সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রকাশের জন্য কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, ব্রুনোর ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিল বাইবেল-ওয়ালারা, সেই তারাই এখন বাইবেলের নানা জায়গায় সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বেরআলামতপেয়ে যান। কোরআনের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার খাটে। কিছুদিন আগেও দেখতাম অনেকেই ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে রীতিমতো জিহাদ শুরু করেছিলেন কোরআনের আয়াতকে উদ্ধৃত করে। আজকে বিবর্তনতত্ত্বের সপক্ষের প্রমাণগুলো এতই জোরালো হয়ে উঠেছে যে, সেগুলোকে আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তাই শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদের সপক্ষে আয়াত খোঁজা। পেয়েও গেছেন কিছু কিছু। পোপ সম্প্রতি বিবর্তনবাদকে ক্যাথলিক ডগমার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে রায় দিয়েছেন। একটা ওয়েবসাইটে দেখলাম, ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে যে, কোরআনের : , : ১১, ১৫ : ২৮-২৯, ৭৬ : - প্রভৃতি আয়াতগুলোও নাকি বিবর্তন তত্ত্বেরসরাসরিপ্রমাণ। সমস্ত আয়াতেসৃষ্টিবোঝাতেখালাকাশব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছেগ্র্যাজুয়াল চেঞ্জঅতএবইহা বিবর্তন অনুমান আর কয়েক বছরের মধ্যে শুধু বিবর্তন নয়, অচিরেই তারা মাল্টিভার্স, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন, স্ট্রিং তত্ত্ব, প্যান্সপারমিয়া, জিনেটিক কোড, মিউটেশন এধরনের অনেক কিছুই ধর্মগ্রন্থে পেয়ে যাবেন (কিছু কিছু হয়ত এর মধ্যেই পেয়েও গেছেন) তবে এধরনের সমন্বয়ের চমৎকার খেলা দেখিয়েছে হিন্দু ধর্মবাদীরাই। যখন বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে ফ্রেডরিক হয়েল, হারমান বন্দি আর জয়ন্ত নারলিকার মিলে স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বের (Steady state theory) অবতারণা করেছিলেন, তখন তা ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কারণ এটি বেদে বর্ণিতচির শাশ্বতমহাবিশ্বের ধারণার সাথে মিলে যায়। কিন্তু মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণের (Cosmic background radiation) খোঁজ যখন বিজ্ঞানীরা পেলেন, তখন তা স্থিতিশীল মহাবিশ্বকে হটিয়ে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বা বিগব্যাংকে বৈজ্ঞানিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে দিল। হিন্দুত্ববাদীরাও সাথে সাথে ভোল পালটেচির শাশ্বতমহাবিশ্ব বাদ দিয়েঅদ্বৈত ব্রহ্ম’-এর খোঁজ পেয়ে গেলেন। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সৃষ্টি থাকুক, না থাকুক, চিরশাশ্বত হোক আর না হোক, স্থিতশীল হোক আর অস্থিতিশীলই হোক সবই কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে
মোদী সাহেবও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের সেইযখন যেমন তখন তেমনমার্কা খেলা খেলছেন তা বোধ হয় না বললেও চলবে। মোদী জানেন, নানাপদের ইন্টারপ্রিটেশনের এই খেলারসাপোর্টারঅনেক। তবে মাঝে মধ্যে কোন কোন ঘাড় ত্যারাসালাফি সেক্যুলারেরাদেখিয়ে দেন, এই খেলার আসল নামগার্বেজ ইন, গার্বেজ আউট’!